রবার্ট ওপেনহাইমার। পারমাণবিক বোমার জনক। এ জন্য তাঁর অনেক সমালোচনা আছে। তিনি নিজেও নিজের কাজ নিয়ে দোলাচলে ছিলেন বলে জানা যায়। তবে বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে তাঁর ভূমিকা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ১৯৬০-এর দশকে এক সাক্ষাৎকারে ওপেনহাইমার নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, বিস্ফোরণের কয়েক মিনিট পরে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ভগবত গীতার একটি শ্লোক মনে পড়ে তাঁর। শ্লোকটি ছিল, ‘এখন আমিই মৃত্যু, আমিই বিশ্ব ধ্বংসকারী।’
এরপর তাঁর বন্ধুদের থেকে জানা যায়, ওপেনহাইমার ধীরে ধীরে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর মধ্যে ভর করে বিষণ্ণতা। কারণ তিনি জানতেন, এরপর কী ঘটতে চলেছে। জাপানের আসন্ন পরিণতি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতেও শোনা গেছে তাঁকে। কিন্তু কয়েকদিন পরে তাঁর চিন্তা-চেতনা ফের পাল্টে যায়। কীভাবে বোমা ফেলে সর্বোচ্চ ক্ষতি করা যায়, সে চেষ্টা তিনি করেছিলেন।
২০০৫ সালে কা বার্ড ও মার্টিন জে শেরউইনের লেখা আমেরিকান প্রথিমিউস বইয়ে উল্লেখ করা হয়, ওপেনহাইমার সামরিক কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, যাতে বৃষ্টির দিনে বোমা বিস্ফোরণ না করা হয়। আর খুব বেশি ওপর থেকেও বোমা ফেলতে নিষেধ করেছিলেন। কারণ তাতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমে যেত। ট্রিনিটি টেস্টের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে জাপানের হিরোশিমায় সফলভাবে বোমা বিস্ফোরিত হয়।
যুদ্ধের পরে ওপেনহাইমারের চিন্তায় পরিবর্তন আসে। তিনি পারমাণবিক অস্ত্রকে ‘শয়তানের কাজ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ১৯৪৫ সালের অক্টোবরে ওপেনহাইমারকে ডেকেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান। ওপেনহাইমার রাষ্ট্রপতিকে বলেছিলেন, ‘আমি টের পাই, আমার হাতে রক্ত লেগে আছে।’ জবাবে ট্রুম্যান বলেছিলেন, ‘রক্ত লেগেছে আমার হাতে। ও নিয়ে আমাকেই ভাবতে দাও।’
গীতা পড়ে দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন ওপেনহাইমার। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুন হাতে অস্ত্র তুলে নিতে অস্বীকার করেছিলেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন, এতে তাঁর প্রিয়জনেরা মারা পড়বেন। কিন্তু কৃষ্ণ তাঁকে বোঝায়, যারা এ যুদ্ধে মারা যাবেন, তাঁদের মৃত্যু আগেই তিনি লিখে রেখেছেন। অর্জুন হবেন শুধু তাঁদের মৃত্যুর হাতিয়ার।
পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের আগে একই সুরে কথা বলেছিলেন ওপেনহাইমারও। তাঁর সহকর্মীদের বলেছিলেন, ‘বিজ্ঞানী হিসেবে পারমাণবিক বোমা বানানো শুধু আমাদের কাজ। সেটা কীভাবে ব্যবহৃত হবে, তা দেখা আমাদের কাজ নয়।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।