আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক নতুন চুক্তির খসড়াকে ‘ভারসাম্যহীন’ আখ্যা দিয়ে এতে সম্মতি দেয়নি পাঁচ শীর্ষস্থানীয় বিশ্বশক্তির অন্যতম রাশিয়া। দেশটির এই অবস্থান অন্য দেশগুলোর কাছ থেকে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে।
পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধ বিষয়ের চুক্তি ‘নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি’র (এনপিটি) নতুন খসড়ার ৩৪ নম্বর অনুচ্ছেদ নিয়ে আপত্তি তুলেছে রাশিয়া। এতে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া ইউক্রেনের সর্ববৃহত্ পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র জাপোরিঝিয়া ঘিরে সামরিক তত্পরতা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়েছিল।
করোনা মহামারির কারণে এনপিটি পর্যালোচনার ২০২০ সালের সম্মেলন পিছিয়ে ২০২২ সালে আয়োজিত হলো। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ১ আগস্ট থেকে প্রায় মাসব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
৩৪ নম্বর অনুচ্ছেদকে ‘ভারসাম্যহীন’ আখ্যা দিয়ে রাশিয়ার প্রতিনিধি ইগর বিশনেভেিস্ক বলেন, ‘কিছু অনুচ্ছেদে আমাদের আপত্তি রয়েছে, যেসব অনুচ্ছেদে স্পষ্টতই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। ’ অন্য দেশগুলোও এই অনুচ্ছেদের সঙ্গে একমত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতি পাঁচ বছর পর পর এনপিটি চুক্তি পর্যালোচনা করা হয়। এর লক্ষ্য বর্তমানে থাকা পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাস ও নতুন দেশের কাছে এর প্রযুক্তি যাওয়া রোধ করা। ১৯৭০ সালে বিশ্বের ১৯০টি দেশের সমর্থনে এনপিটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০১৫ সালে শেষ পর্যালোচনায় অংশগ্রহণকারীরাও সর্বসম্মতভাবে চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
এনপিটির চুক্তি চূড়ান্ত হতে সম্মেলনে অংশ নেওয়া সব দেশের অনুমোদন প্রয়োজন। সম্মেলনের সভাপতি গুস্তাভো জ্লাউভিনেন বলেন, ‘রাশিয়া খসড়া নিয়ে আপত্তি তোলায় চুক্তিতে সম্মতি আসার অবস্থা নেই। ’
সম্মেলনে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনিং ওং জানান, চুক্তি না হওয়ায় তিনি হতাশ। তিনি বলেন, ‘অন্য সব রাষ্ট্র দ্বারা গৃহীত প্রস্তাবিত খসড়ার সঙ্গে আপস করতে অস্বীকার করে রাশিয়া চুক্তির অগ্রগতিতে বাধা দিয়েছে। ’
মার্কিন প্রতিনিধি বনি জেনকিন্স বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘যৌথ ঘোষণা না আসায় গভীরভাবে দুঃখিত। ’ রাশিয়ার কারণেই এই চুক্তির জন্য এত আয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডাচ রাষ্ট্রদূত জানান, আলোচনায় তাঁরা সন্তুষ্ট তবে সবার সম্মতি না আসায় হতাশ।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, চুক্তি না হলেও নিরাপত্তা এবং বহুপাক্ষিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন হয়েছে সম্মেলনে।
নিরপেক্ষ এবং অপরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র অস্ট্রিয়া রাশিয়াসহ সব প্রভাবশালী রাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে। আগের চুক্তিতে সম্মতি দেওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন এবং ফ্রান্স সাম্প্রতিক সময়ে তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ বাড়াচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে অস্ট্রিয়া।
জাপোরিঝিয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি
রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেন অভিযান শুরুর পরপরই গত মার্চের শুরুতে ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র জাপোরিঝিয়া নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে বিদ্যুেকন্দ্রটি এখনো ইউক্রেনের কর্মীরাই চালাচ্ছেন। এর আশপাশে যুদ্ধ চলতে থাকায় ইউক্রেন, রাশিয়াসহ অনেকেই সম্ভাব্য পারমাণবিক দুর্ঘটনার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন সেখানকার যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে।
কয়েক দিন আগে জাপোরিঝিয়া কেন্দ্র সাময়িকভাবে বিদ্যুত্ গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে সেখানে বিপর্যয় ঘটে তেজস্ক্রিয়া ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি।
সূত্র : বিবিসি ও এএফপি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।