জুমবাংলা ডেস্ক : আজিমপুরে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদের খাদেম হানিফ শেখকে হ*ত্যার পর একটি ভাঙা কব*রে তার লা*শ গুম করতে চেয়েছিল আরেক খাদেম সাইফুল ইসলাম (৩৮)। কিন্তু মসজিদে অন্যান্য কর্মচারী ও খাদেম উপস্থিত থাকায় সে সফল হয়নি। এরপর মসজিদের একটি কক্ষের বারান্দায় হানিফের বস্তাবন্দি লা*শ রেখে পালিয়ে যায় সাইফুল। দাড়ি কামিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে চট্টগ্রামে এক আত্মীযের বাসায় পালিয়ে ছিল সে। খবর : বাংলা ট্রিবিউন
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকালে ধানমন্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদর দফতরে সংস্থাটির প্রধান বনজ কুমার মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
এর আগে সোমবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার একটি বাসা থেকে এ মামলার প্রধান আসামি সাইফুলকে গ্রেফ*তার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর একটি টিম। গ্রে*ফতারের পর তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) আজিমপুর গোরস্তান সংলগ্ন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদের খাদেম মো. হানিফ শেখকে ওই মসজিদের দোতলায় তার নিজের কক্ষে হ*ত্যা করা হয়।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘মো. হানিফ শেখ ও সাইফুল ইসলাম দুজনই ওই মসজিদের খাদেম হিসেবে কর্মরত ছিল। তবে হানিফ শেখ কাজে ভালো হওয়ায় মসজিদ কমিটি তাকে বেশি পছন্দ করতো। সাইফুল ইসলাম কাজে ফাঁকি দেওয়ায় কমিটি তার পদাবনতি করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয় সাইফুল। এ নিয়ে হানিফ শেখের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ছিল। মূলত এজন্যই হানিফকে খুনের পরিকল্পনা করে সাইফুল।’
তিনি বলেন, ‘২ জুলাই (মঙ্গলবার) বেলা ২টার দিকে সাইফুল ও হানিফ শেখের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর সাইফুল বাইরে চলে যায়। বিকাল ৪টার দিকে সাইফুল মসজিদের দোতলায় খাদেমদের কক্ষে যায়। সেখানে গিয়ে হানিফ শেখকে ঘুমাতে দেখে। এ অবস্থায় সাইফুল একটি চাকু দিয়ে হানিফ শেখকে প্রথমে বুকে ও পেটে দুটি আঘাত করে। এরপর হানিফ জেগে যায়। তখন তার মুখ চেপে ধরে একের পর এক আঘাত করতে থাকে সাইফুল। একপর্যায়ে হানিফ শেখ মা*রা যান। এ সময় মসজিদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাহারউদ্দিন ও অন্য খাদেম ফরিদউদ্দিন কেউই কক্ষে ছিলেন না। হ*ত্যার পর আজিমপুর ক*বরস্থানের একটি ভাঙা কব*রে হানিফের লা*শ গুম করার পরিকল্পনা করেছিল সাইফুল।’
পিবিআই কর্মকর্তা জানান, হানিফকে খুন করার পর তার মাথা ও পা একসঙ্গে মুড়িয়ে বেঁধে ফেলে সাইফুল। এরপর একটি পলিথিনে ঢুকিয়ে বস্তায় ঢোকায়। বস্তায় ঢোকানোর পর সেটি কক্ষের বারন্দায় একটি বাঁশের তৈরি ঝুড়িতে রেখে দেয়। এরপর সে তোষকের কাভার ভিজিয়ে মেঝের র*ক্ত পরিষ্কার করে। হাত-মুখ ধুয়ে নিচতলায় আসরের নামাজ শেষ করে আবারও মসজিদের দোতলায় খাদেমদের কক্ষে গিয়ে নিজের জামা-কাপড় ধুয়ে বারান্দায় শুকাতে দেয়। সন্ধ্যা থেকে কক্ষেই অবস্থান করে। এরইমধ্যে রাতে মসজিদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাহারউদ্দিন ও খাদেম ফরিদউদ্দিন আহমেদ কক্ষে চলে আসেন। তারা এসে সাইফুলের কাছে হানিফ কোথায় জানতে চান। তখন সাইফুল বলে সে জানে না। রাত অনেক হলেও সাইফুল ঘুমাচ্ছিল না। এ সময় খাদেম ফরিদউদ্দিনও জেগে ছিলেন। এ কারণে হানিফের লা*শ সরাতে পারছিল না সাইফুল। রাত ১১টার দিকে বাহারউদ্দিন ও ফরিদউদ্দিনকে সে জানায়, তার বাবা মা*রা গেছেন। তাকে নোয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে। এই বলে সে বের হয়ে যায়।
৩ জুলাই কক্ষের ভেতরে গন্ধ পাওয়ার পর খাদেম ফরিদউদ্দিন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাহারউদ্দিন গন্ধ খুঁজতে খুঁজতে বারান্দায় একটি বস্তা পড়ে থাকতে দেখেন। আগে সেখানে কোনও বস্তা ছিল না। এরপর মসজিদ কমিটি বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পুলিশ গিয়ে লা*শ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহত হানিফ শেখের শ্বশুর জাকির শেখ বাদী হয়ে লালবাগ থানায় হ*ত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি গ্রে*ফতার সাইফুলের বাবার নাম শফিকুল। তার বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মশাই গ্রামে। মামলার অন্য আসামিরা হলো—ওই মসজিদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার শালন্দী গ্রামের বাহারউদ্দিন (৫৫), আরেক খাদেম মো. ফরিদউদ্দিন আহমেদ। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুরে এবং নিউমার্কেট জামে মসজিদের খাদেম আবুল কালাম আজাদ (৪৫)। মামলাটি প্রথমে লালবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করে। এরপর পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয় পুলিশ সদর দফতর।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘হানিফ শেখকে হ*ত্যার কথা স্বীকার করেছে সাইফুল। হ*ত্যার পর সে প্রথমে নোয়াখালী তার গ্রামের বাড়িতে যায়। সেখানে তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। এরপর সেখান থেকে চট্টগ্রামে তার শ্বশুরবাড়িতে এবং পরে চাচার বাসায় যায়। তবে কেউ তাকে রাখতে চায়নি। এরপর সে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে তার ফুফুর বাসায় যায়। সেখান থেকেই সোমবার তাকে গ্রে*ফতার করে পিবিআই।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে যাওয়ার পর সাইফুল সেলুনে গিয়ে নিজের চেহারা পরিবর্তনের চেষ্টা করে। সে পাঞ্জাবি ছেড়ে টি-শার্ট পরা শুরু করে। দাড়ি কামাতে সেলুনে যায়। তখন নরসুন্দর তাকে দাড়ি কামানোর কারণ জানতে চাইলে সাইফুল জানায়, তার স্কিনে সমস্যা, তাই শেভ করতে হবে। এই বলে শেভ করে চলে আসে।’
এ ঘটনায় লালবাগ থানা পুলিশ বাহারউদ্দিন, ফরিদউদ্দিন ও আবুল কালাম আজাদকে গ্রে*ফতার করেছিল। তবে পিবিআই তাদের তদন্তে এদের কোনও সংশ্লিষ্টতা পায়নি। হ*ত্যাকা*ণ্ডের সঙ্গে সাইফুল একাই জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে পিবিআই।
বি:দ্র: ফেসবুকে ব্লক থাকায় কিছু শব্দ ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।