আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী আফগান প্রশাসন এবং দেশের সেনা। এমনটিই জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। খবর ডয়চে ভেলের।
আফগানিস্তান থেকে সেনা ফিরিয়ে নেয়ায় কোনও ভুল নেই। তালেবান কাবুল দখল করার পর এই প্রথম মুখ খুললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সোমবার টেলিভিশনে বিবৃতি দেন তিনি।
সেখানে তিনি জানান, বছরের পর বছর আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা মোতায়েন রাখা সম্ভব নয়। আফগান প্রশাসন এবং সেনাকে দায়িত্ব নিতে হতো। কিন্তু তারা সে দায়িত্ব নিতে পারেনি।
একই সঙ্গে বাইডেন জানিয়েছেন, এত দ্রুত তালেবান আফগান ক্ষমতা দখল করবে, তা তিনি ভাবতে পারেননি।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং তার জেরে সে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক দেশ আমেরিকার সমালোচনায় মুখর হয়েছে।
শুধু তাই নয়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। তার দাবি, আফগান পরিস্থিতির জন্য বাইডেনের পদত্যাগ করা উচিত। পরিস্থিতি সামলাতে তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই ঘরে-বাইরে চাপের মুখে বাইডেন। চাপের মুখে তিনি চুপ করে আছেন বলেও অনেকে সমালোচনা করছিলেন। অবশেষে সেই নীরবতা ভাঙলেন বাইডেন। কিছুদিনের জন্য ছুটি নিয়েছিলেন বাইডেন। সোমবার ছুটি কমিয়ে কাজে ফেরেন তিনি এবং প্রথমেই আফগানিস্তান নিয়ে টেলিভিশনে নিজের মতামত জানান।
আফগান প্রশাসন ব্যর্থ
বাইডেনের বক্তব্য, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে ছিল। ৯/১১-র বদলা নেওয়ার পাশাপাশি তারা আফগান সেনাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। অস্ত্র, যুদ্ধের পোশাক দিয়ে সাহায্য করেছে। আফগান প্রশাসনের পাশে থেকেছে। তাদের প্রভূত সাহায্য করেছে।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন সেনার আফগানিস্তানে থাকা সম্ভব নয়। ফলে আমেরিকার নিরিখে তার পরিকল্পনায় কোনও ভুল ছিল না। তিনি মনে করেন, সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ঠিক।
বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তিনি বরং আফগান প্রশাসন এবং আফগান সেনাকে দায়ী করেছেন।
বাইডেন বলেছেন, আফগান প্রশাসক এবং রাজনীতিকরা চাপের মুখে পালিয়ে গেছেন। আফগান সেনা তালেবানের সামনে কার্যত অস্ত্র প্রত্যাহার করেছে। লড়াইয়ের সাহসটুকু পর্যন্ত দেখায়নি। এর দায় আমেরিকার হতে পারে না।
ট্রাম্পকে উত্তর
ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও নাম না করে উত্তর দিয়েছেন বাইডেন।
তিনি বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত তিনি প্রথম নেননি। ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বস্তুত, তালেবানের সঙ্গে চুক্তিও করেছিলেন ট্রাম্প। বস্তুত, তালেবানের সঙ্গে ট্রাম্পের চুক্তির কথা উল্লেখ করে রিপাবলিকানদের সমালোচনার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।
একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এখনও আফগানিস্তানে যথেষ্ট মার্কিন সেনা মোতায়েন আছে। তারা মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারের কাজ করছেন এবং কাবুল বিমানবন্দরের দায়িত্বে আছেন। তালেবান সেখানে ঢোকার চেষ্টা করলে আমেরিকা জবাব দেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
রাশিয়া এবং চীন প্রসঙ্গ
এদিনের বক্তৃতায় রাশিয়া এবং চীনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন বাইডেন। তার বক্তব্য, আমেরিকা আফগানিস্তানে আরও সময় থাকলে সবচেয়ে খুশি হতো রাশিয়া এবং চীন। কারণ, আমেরিকার লাখ লাখ ডলার খরচ হতো। আমেরিকা আফগানিস্তান নিয়ে ব্যস্ত থাকতো।
বাইডেনের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা আফগানিস্তানে বিপুল অর্থ খরচ করেছে। এবার আফগানদের নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে।
ন্যাটোর চাপ
ন্যাটোর অন্তর্গত বহু দেশ আমেরিকার সমালোচনায় মুখর হয়েছে।
লিখিত বিবৃতি দিয়ে বাইডেন জানিয়েছেন, আমেরিকার সেনা আফগানিস্তানে আরও এক বছর থাকতে পারতো, পাঁচ বছরও থাকতে পারতো। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হতো না। আফগান সেনা তালেবানের হাত থেকে দেশ রক্ষায় বদ্ধপরিকর ছিল না।
বাইডেনের মতে, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার ছাড়া আমেরিকার সামনে আর কোনও বিকল্প ছিল না।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel