ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম: পরীক্ষক সংকটে ধুঁকছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগার (ল্যাব)।
রাসায়নিক ল্যাবে প্রায় এক বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ কোনো পরীক্ষক নেই। একজন সহকারী কেমিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট দিয়েই চলছে কাস্টমস হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারটি। ল্যাবের পরীক্ষক সংকটের কারণে দেখা দিয়েছে পণ্যের নমুনা জট। আগের তুলনায় কাস্টমসের ল্যাবে পরীক্ষণ কার্যক্রম চলছে মাত্র ৩০ শতাংশ। আর ৭০ শতাংশ হচ্ছে বহির্ল্যাবে। ফলে ব্যবসায়ীদের সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। একইসাথে অর্থেরও অপচয় হচ্ছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ল্যাবে ১৫টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। দুটি রাসায়নিক পরীক্ষকের, তিনটি উপপ্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের এবং পাঁচটি সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষকের পদ শূন্যই রয়ে গেছে।
এতো লোকবল সংকটের কারণে একদিকে পণ্য খালাস পেতে হয়রানির পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আমদানিকারকরা।
ল্যাবের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষক মো. আবদুল হান্নান অবসরে যান ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বর্তমানে সহকারী কেমিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট মো. হেলাল হাসান ল্যাবের কয়েকজন অফিস সহকারী নিয়ে ল্যাব পরিচালনা করছেন।
প্রতিদিন এই ল্যাবে পরীক্ষার জন্য ১০০ ফলের নমুনাসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ২০০ নমুনা আসে। নমুনা গ্রহণের দিন ফল পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া গেলেও অন্যান্য পণ্যের নমুনার ৬০ ভাগ প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হয়। প্রতিদিন এভাবে বাড়তি নমুনার চাপে পণ্যের প্রতিবেদন দিতে বিলম্ব হয়। যার কারণে দেখা দিয়েছে পণ্যের নমুনাজট।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যের কন্টেইনার ৪ দিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ পান আমদানিকারকরা। এরপর ২০ ফুট লম্বা আকারের একটি কন্টেইনারের জন্য প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ৬ মার্কিন ডলার ভাড়া গুনতে হয়। তার পরবর্তী সপ্তাহে প্রতিদিন একই আকারের কন্টেইনারে ১২ ডলার এবং ২১ দিন থেকে প্রতিদিন ২৪ ডলার ভাড়া দিতে হয় আমদানিকারকদের।
সময়মতো প্রতিবেদন না পাওয়ায় আমদানিকৃত পচনশীল পণ্য বন্দরের ইয়ার্ডে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে আমদানিকারককে একদিকে বন্দরের ভাড়া এবং অন্যদিকে পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘ঠিক সময়ে রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়ায় এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত আমদানিকৃত পণ্য বন্দরে আটকে থাকছে। প্রায় একবছর ধরে কাস্টমসের পরীক্ষক সংকটের কারণে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর কাস্টমসের এই ব্যর্থতার মাসুল গুনতে হচ্ছে আমাদের।’
চট্টগ্রাম নগরীর স্টেশন রোডের ফলমণ্ডির কাঁচা পণ্য আমদানিকারক মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ল্যাবটি স্বয়ংসম্পূর্ণ করার দাবি জানিয়ে আসছে। পর্যাপ্ত রাসায়নিক পরীক্ষকের অভাবে দুইদিনের স্থলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে আমাদের। এতে আমাদের মারাত্মক ব্যবসায়ীক ক্ষতির সম্মুখীন হয় আমাদের। দেশের সবচেয়ে বড় শুল্ক আদায়কারি প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও চট্টগ্রাম কাস্টমসের এই অবহেলা মেনে নেওয়া কষ্টকর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফাইজুর রহমান বলেন, ‘রাসায়নিক পরীক্ষক ও জনবল সংকটের বিষয়টি এনবিআরকে এর আগেও জনানো হয়েছে, আবারো জানানো হবে। এনবিআর নজর না দিলে আমাদের করার কিছু নেই।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।