বেরোবি প্রতিনিধি: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইলেকট্রনিক এন্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও জিয়া সাইবার ফোর্সের রংপুর মহানগর শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছাত্রদল নেতা মোঃ রিফাত হোসেন রাফিকে প্রায় এক বছর পূর্বে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর।সম্প্রতি জুলাই বিপ্লবে আহত শিক্ষার্থী হিসেবে শাস্তির মওকুফের জন্য আবেদন করলে শৃঙ্খলা বোর্ডের সুপারিশ ক্রমে বিশেষ বিবেচনায় শাস্তি মওকুফ প্রসঙ্গে নোটিশ দেয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর।বিষয়টি জানাজানি হলে আন্দোলনকারী অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এর ব্যাপক সমালোচনা করেন। তবে শাস্তি মওকুফের বিষয়টি এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় পাস হয়নি বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২২-২০২৩ সেশনের ২০২৩ সালের ১ম বর্ষ ১ম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা (মানোন্নয়ন) পিএইচওয়াই ১১০১ বিষয়ের পরীক্ষায় মোবাইলের সাহায্যে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে রাফির সংশ্লিষ্ট সেমিস্টারের সব পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে তাকে পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
রাফি জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় শাস্তি মওকুফের জন্য আবেদন করলে শৃঙ্খলা বোর্ড বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করে। জুলাই, আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনে আহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এবং মানবিক দিক থেকে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তার শাস্তি মওকুফ করা হয়। ফলে তাকে পূর্বের সেমিস্টারের পরীক্ষা সম্পন্ন করার সুযোগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশের প্রেক্ষিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর (১৩ জানুয়ারি ২০২৫) রাফির শাস্তি মওকুফের বিষয়ে একটি নোটিশ দেয়।
ছাত্রদল নেতা রিফাত হোসেনের শাস্তি মওকুফের বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেরোবির অন্যতম সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন লিখেন,”নকল ধরা খাইলো ১ বছর আগে, জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ঘটলো ৬ মাস আগে!কিসের সাথে কি মিলাইলেন প্রশাসন??
শেইম! এইসব অপকর্মের জন্য আন্দোলন করি নি।”
এ বিষয়ে আরেক সমন্বয়ক মোঃ নয়ন বলেন, রাফি’র অন্যায়ের সাথে জুলাই বিপ্লবের কোন সম্পর্ক নাই। তাই জুলাই বিপ্লবের বাহানা দিয়ে তার শাস্তি মওকুফ করা এক ধরনের ভন্ডামি। যারা এই কাজের সাথে জড়িত তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ”
এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা রিফাত হোসেন রাফি বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন সময় আমার কাছে মোবাইল পাওয়ায় তৎকালীন সময় আওয়ামী লীগের দোসরা আমাকে বহিষ্কার করেছে। আমি ছাত্রদল করায় আমার উপরে আরো বেশি চওড়া হয়েছে। সেজন্য আমি শৃঙ্খলা বোর্ডে আবেদন করি। আমার সাথে অন্যায় হয়েছে সেটি আমি উল্লেখ করি। তিনি আরও বলেন, আমি আহত শিক্ষার্থী হিসেবে আবেদন করেছি। সে হিসেবে তারা বিবেচনা করেছে।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ড. মো.ফেরদৌস রহমান বলেন, বিষয়টি এখনো ফাইনাল নয়। শৃঙ্খলা বোর্ড শাস্তি মওকুফের সিদ্ধান্ত নিলেও এইটি একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট অনুমোদন পেলে তারপর সে পরীক্ষায় বসতে পারবে। তিনি আরও বলেন, সে জুলাই বিপ্লবের আহত শিক্ষার্থী সে হিসেবে এটি বিবেচনা করা হয়েছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো.তানজিউল ইসলাম বলেন, শৃঙ্খলা বোর্ডের সুপারিশক্রমে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর তার শাস্তি মওকুফ করেছেন। বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। এখনো একাডেমি কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন বাকি আছে। আর চিঠিতে ভাষাগত কিছু ভুল রয়েছে রবিবার সেটি ঠিক করে পুনরায় দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর শওকাত আলী বলেন, বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত হবে তারপর বিষয় টি জানানো হবে। অন্যায় করলে কোন ক্ষমা নাই। “
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।