বিনোদন ডেস্ক: অবশেষে সরকার দেশে বছরে ১০টি উপমহাদেশীয় সিনেমা আমদানির অনুমতি দিয়েছেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় গত ১১ এপ্রিল ৫ শর্তে আমদানির প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত দুই ঈদ ও দুর্গা পূজার সপ্তাহে এসব সিনেমা মুক্তি দিতে পারবে না।
দেশে ভিনদেশি, বিশেষ করে হিন্দি সিনেমা আমদানির ব্যাপারে চলচ্চিত্রের মুভিলর্ডখ্যাত ডিপজল বরাবরই বিপক্ষে। তবে কলকাতার বাংলা ভাষার সিনেমার ব্যাপারে তার আপত্তি নেই।
ডিপজলের আপত্তির মূল কারণ, হিন্দি সিনেমা আমাদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির পরিপন্থী। সিনেমা হলে সরাসরি হিন্দি সিনেমা মুক্তি পেলে আমাদের চিরায়ত ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত আসবে। কারণ, হিন্দি সিনেমায় যেসব গান ও দৃশ্য তুলে ধরা হয়, তা আমাদের সংস্কৃতির সাথে যায় না। এসব সিনেমায় এমন অনেক দৃশ্য ও গান থাকে যেগুলো অশ্লীলতার পর্যায়ে পড়ে।
ডিপজল বলেন, ভারতেও মাঝে মাঝে এসব দৃশ্য ও গান নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। ওদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না, এমন সিনেমা নিয়েও তাদের দর্শক আপত্তি এমনকি সিনেমা নিষিদ্ধ করার দাবিও তুলেছে। এই যে পাঠান সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে, সে সিনেমার গান নিয়েও ভারতে প্রবল আপত্তি উঠেছিল। যেখানে ভারতেই তাদের নিজেদের সিনেমা নিয়ে আপত্তি উঠে, সেখানে আমাদের দেশের শিল্প সংস্কৃতির জন্য তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, একসময় তো আমাদের চলচ্চিত্রের মুরুব্বিরাসহ আমরা হিন্দি সিনেমা আমদানির বিরুদ্ধে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছিলাম। এখন কি এমন হলো যে, তা আমদানি করতে হবে? সিনেমার মন্দাবস্থা কি ভিনদেশের সিনেমা দিয়ে কখনও ফেরানো যাবে? যাবে না। আমাদের দেশে কেন, প্রত্যেক দেশের সিনেমায় একসময় খারাপ যায়, একসময় ভালো যায়। তাই বলে কি বিদেশি সিনেমা দিয়ে ভাল করে? করে না। তারা নিজেরাই নিজেদের সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্রের মন্দাবস্থা ভাল করে।
তিনি যোগ করেন, আমি ডিপজল চরম অশ্লীলতার সময় কোটি টাকার কাবিন, চাচ্চু, মায়ের হাতে বেহেশতের চাবি, পিতার আসন ইত্যাদি সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্রে সুস্থধারা ফিরিয়ে ছিলাম। অশ্লীল সিনেমা দূর করেছিলাম। আমরা যে চেষ্টা করলে পারি, তা তো দেখিয়েছি। এখন চলচ্চিত্রের খারাপ অবস্থা চলছে। এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে আমাদেরকেই উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের সিনেমা দিয়েই চলচ্চিত্রের মন্দাবস্থা কাটাতে হবে। আমি তো এখনও একের পর এক সিনেমা বানিয়ে যাচ্ছি। ছয়টি সিনেমা মুক্তির জন্য তৈরি হয়ে আছে। এবারের ঈদসহ পরের মাসগুলোতে ধারাবাহিকভাবে এগুলো মুক্তি পাবে। আরও অনেকের সিনেমা মুক্তি পাবে। একটা পরিবর্তন হবে। এ অবস্থায় বিদেশি সিনেমা আমদানির অনুমতি দেয়া আমার মতে ঠিক হয়নি। আর আমদানি করা ফিল্ম ও ভাষা এবং সংস্কৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করা যাবে না। পরের ছেলে কখনও নিজের হয় না। তেমনি হিন্দি ভাষা ও সংস্কৃতি আমাদের হবে না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যারা বিদেশি সিনেমা বিশেষ করে হিন্দি সিনেমা আমদানির পক্ষে বা আমদানি করতে চায় ও করবে, তারা কেন দেশে সিনেমা নির্মাণ করেন না? যারা নির্মাণ করছেন, বিদেশি সিনেমা আমদানির মাধ্যমে তাদের সিনেমাগুলো কেন ক্ষতিগ্রস্ত করছে? তারা কি চায় না, আমাদের নিজেদের সিনেমা থাকুক? আমাদের এত বড় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি, ঐতিহ্য, এই ঐতিহ্য না বাঁচিয়ে বিদেশি সিনেমার বাজার তৈরি করার জন্য একটা অপচেষ্টা চলছে বলে আমি মনে করি।
অভিনেতার ভাষ্য, বাংলা ভাষার সিনেমা আসুক। কলকাতার সিনেমা আসুক। তাতে আপত্তি নেই। আমরা কলকাতার সিনেমার সাথে অতীতেও চ্যালেঞ্জ দিয়ে জিতেছিলাম, এখনও জিতব। আমি ডিপজল চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, বাংলা ভাষাভাষি সিনেমা আমাদের সিনেমার সাথে কখনও পারবে না। হিন্দি ভাষা ও সংস্কৃতিকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি দিয়ে চ্যালেঞ্জ জানানো যায় না। এর মূল কারণ ভাষা। বাংলাকে বাংলা, হিন্দিকে হিন্দি, ইংরেজিকে ইংরেজি দিয়েই চ্যালেঞ্জ জানানো যায়। বিপরীত কোনো ভাষা দিয়ে নয়। কাজেই, সরকার বিদেশি সিনেমা আমদানির যে অনুমতি দিয়েছে, তার সাথে আমি একমত নই। কারণ, সরকারই আমাদের ফিল্মের জন্য অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। হল সংস্কারের জন্য এক হাজার কোটি টাকার লোনের ব্যবস্থা করেছে, অনুদানের টাকা বাড়িয়েছে, আরও অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে বেসরকারিভাবে অনেক সিনেপ্লেক্স হচ্ছে। আমি নিজে সিনেপ্লেক্স করছি। আমাদের সিনেমা তো ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এ অবস্থায় বিদেশি সিনেমা আমদানির অনুমতি দেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি বলে আমি মনে করি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।