আপনারা কি এমন কোনো বাড়ি দেখেছেন যার সবকয়টি অংশই একজন স্থপতির নকশা অনুযায়ী তৈরি এবং হুবহু এক। আর একটি অংশ শুধু একেবারেই আলাদা যেন অন্য কোনো স্থপতির তৈরি? সম্ভবত দেখেননি। কিন্তু বড় বাড়িটি এমনি উদ্ভট ধরনের। মেন্ডেলিভ নিজেই এর অংশবিশেষ একেবারে স্বকীয় ঢঙে তৈরি করেছিলেন। উল্লেখ্য, অংশটি পর্যায়বৃত্তের অষ্টম দলভুক্ত। ওখানকার মৌলগুলো তিনটি দলবন্দী। তাছাড়া প্রত্যেক তলায়ও তারা নেই, তারা ছড়িয়ে আছে সারণির দীর্ঘতর পর্যায়গুলোতে। লৌহ, কোবাল্ট ও নিকেল রয়েছে এদেরই একটিতে। আর প্ল্যাটিনাম ধাতুগুলো অন্য দুটিতে।
এদের জন্য বেশি উপযোগী জায়গা খুঁজতে মেন্ডেলিভ চেষ্টার কোন কসুর করেননি। সব চেষ্টাই কিন্তু বৃথা। উপায়ান্তর না দেখে শেষে বাধ্য হয়ে অষ্টম দলটি যোগ করেছেন পর্যায়বৃত্ত সারণিতে। অষ্টমটি কেন? কারণ, এর আগের সপ্তম দলটি তো হ্যালোজেনগুলোর। কিন্তু এতে তো দলসংখ্যা নিরর্থক হয়ে দাঁড়াল। অষ্টম দলে ধনাত্মক অষ্টযোজ্যতা নিয়ম নয়, ব্যতিক্রম। কেবল রুথেনিয়াম ও অসমিয়ামই তা মেনে চলার চেষ্টা করতে পারে, যদিও বহুকষ্টে। এদের অক্সাইডদ্বয় RuO4, এবং OsO4 ক্ষণস্থায়ী।
বিজ্ঞানীদের সব সহায়তা সত্ত্বেও আর কোনো ধাতুই এরূপ ‘উচ্চতায়’ আরোহণ করতে পারেনি। হেঁয়ালিটি একই সঙ্গে সমাধান করা যাক।
লক্ষণীয়, প্ল্যাটিনাম ধাতুগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় লিপ্ত হতে তেমন উৎসাহী নয়। আর সেজন্যই রসায়নবিদরা আজকাল প্রায়ই পরীক্ষায় প্ল্যাটিনাম তৈজস ব্যবহার করেন। প্ল্যাটিনাম ও তার সঙ্গীরা যেন ধাতুসমাজের ‘বর-গ্যাস’। তাই যুগ যুগ ধরে বৃথাই তারা ‘অভিজাত’ হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে না। আরও লক্ষণীয় যে, তারা প্রকৃতির মধ্যে সাদাসিধে, আত্মীয়বিহীন অসম্বন্ধ বসবাসেই অভ্যস্ত।
লৌহের কথাই এখন ধরা যাক। সাধারণত, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় লৌহ মধ্যম ধরনের সক্রিয় মৌল। বিশুদ্ধ লৌহ অতি সুস্থির।(প্রসঙ্গত এখানে একটি চিন্তনীয় বিষয় উল্লেখ্য। কেবল ধাতুই নয়, অনেক মৌলই বিশুদ্ধতম অবস্থায় অত্যধিক রাসায়নিক প্রভাবসহিষ্ণু)। পরমাণুর প্রত্যন্ত খোলক নয়, এর আগের খোলকটি প্ল্যাটিনাম ধাতুর ‘আভিজাত্যের’ কারণ।
এর মোট আঠারোটি ইলেকট্রন পুরো হতে আর প্রয়োজন মাত্র কয়েকটি ইলেকট্রনের। আঠারো ইলেকট্রনের খোলকটি সংস্থা হিসেবে যথেষ্ট মজবুত। তাই প্ল্যাটিনাম ধাতু সেই খোলক থেকে ইলেকট্রন খসাতে নারাজ। কিন্তু ইলেকট্রন গ্রহণেও এরা অপারগ। এরা ধাতু যে। এই অস্থিরতার জন্যই প্ল্যাটিনাম ধাতুর আচরণ এত অদ্ভুত।
তবু মেন্ডেলিভ সারণির যুক্তির সঙ্গে অষ্টম দলের অসঙ্গতি আছেই। উক্ত অসঙ্গতি মোচনে রসায়নবিদরা অতঃপর অষ্টম ও শূন্য দল একত্র করার প্রস্তাব করেছেন। ভবিষ্যৎই শুধু প্রস্তাবটির যথার্থ্য প্রমাণ করতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।