নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। পর্যায় সারণির ১১১তম মৌলের নাম রন্টজেনিয়াম (Roentgenium)। এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল জার্মানির ডামস্ট্যাট শহরের জিএসআই হেলমঞ্জ সেন্টার ফর হেভি আয়ন রিচার্স গবেষণাগারে। এর নেতৃত্বে ছিলেন জার্মান বিজ্ঞানী সিগার্ড হফম্যান।
লিনিয়ার পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটরে উচ্চ শক্তিতে নিকেল-৬৪ পরমাণুর নিউক্লিয়াস ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল বিসমাস-২০৯ এর দিকে। এভাবে তৈরি হয়েছিল মৌলটি। ১৯৯৪ সালে মৌলটি সংশ্লেষণ করা হলেও আবিষ্কারটি নিশ্চিত করতে লেগে গিয়েছিল আরও প্রায় দশ বছর। তার কারণ, এর অর্ধায়ু মাত্র ৩.৮ মিলিসেকেন্ড।
তাই মৌলটি নিয়ে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পাননি বিজ্ঞানীরা। এর আগে, ১৯৮৪ সালের দিকে রুশ বিজ্ঞানীরা একই ধরনের পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে রন্টজেনিয়ামের মতো কোনো পরমাণু শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাই শেষপর্যন্ত মৌলটি আবিষ্কারের কৃতিত্ব পান জার্মান বিজ্ঞানীরা।
২০০৪ সালে জার্মান বিজ্ঞানীরা এর নাম রাখেন রন্টজেনিয়াম। বুঝতেই পারছেন, জার্মানির নামকরা বিজ্ঞানী উইলহেম কনরাড রন্টজেনের নামে এ নামকরণ। ১৮৯৫ সালে এক্স-রে আবিষ্কার করেছিলেন তিনি।
পর্যায় সারণিতে গোল্ড বা স্বর্ণের ঠিক নিচেই রন্টজেনিয়ামের অবস্থান। আবার মৌলটির রাসায়নিক ধর্ম তামা, রূপা এবং স্বর্ণের মতো। ফলে এটি একধরনের ধাতব মৌল বলে ধারণা করেন বিজ্ঞানীরা। তাই অনামা এবং অনাবিষ্কৃত মৌলগুলোর জন্য পর্যায় সারণির জনক দিমিত্রি মেন্ডেলিভের নামকরণ পদ্ধতি অনুসারে এ মৌলের নাম হওয়া উচিত এক-গোল্ড।
১৯৭৯ সালে আইইউপিএসি-এর সুপারিশ অনুসারে, এই মৌলটির সাময়িক নাম দেওয়া হয়েছিল আনআনুনিয়াম, সংকেত প্রস্তাব করা হয়েছিল Uuu। তবে জার্মানির প্রস্তাবিত নামটি ২০০৪ সালের ১ নভেম্বর স্থায়ী নাম হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়।
এই অতি তেজস্ক্রিয় মৌলের প্রতীক Rg। এখন পর্যন্ত এর ৯টি আইসোটোপ আবিষ্কৃত হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটোপ রন্টজেনিয়াম-২৮২। এর অর্ধায়ু ১২০ সেকেন্ড। রন্টজেনিয়াম-২৮১-এর অর্ধায়ু মাত্র ১১ সেকেন্ড। তবে রন্টজেনিয়াম-২৮৬-এর অর্ধায়ু প্রায় ১০ মিনিট হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রন্টজেনিয়াম এখনও সরাসরি দেখা সম্ভব না হলেও এর রং রূপালী বলেও ধারণা করা হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণার বাইরে রন্টজেনিয়ামের আর কোনো ব্যবহার এখনও জানা যায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।