ছোট দুই সন্তান ও কোলের দুই মাসের এক বাচ্চাসহ কলাবাগানের একটি বাসায় ৬ মাস আগে ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেছিলেন সেলিম হোসেন। তিনি একটি দোকানে কাজ করতেন। করোনাভাইরাসের কারণে বলা চলে তিনি এখন বেকার। তাই বাসা ভাড়ার টাকা সময় মতো দিতে না পারায় দুই মাসের শিশুসহ গত শনিবার তাদের বাসা থেকে বের করে দেয় ওই বাড়ির মালিক শম্পা বেগম ও তার স্বামী শহীদুল্লাহ খান।
তিন সন্তানসহ কোথায় যাবেন সেলিম ও স্ত্রী কুলসুম, তাই বার বার তারা বাড়িয়ালীকে অনুরোধ করেন। কিন্তু কোনো অনুরোধই কাজ হয়নি। এক পর্যায়ে শিশু সন্তানসহ বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয় তাদের। তবে খবর পেয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কলাবাগান থানা।
এ ঘটনায় সেলিম হোসেন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় বাড়িয়ালী ও তার স্বামীকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন বলে বলেছেন কলাবাগান থানার ওসি (তদন্ত) আ ফ ম আছাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, বর্তমানে এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শম্পা ও তার স্বামী শহিদুল্লাহ খান নিজ ফ্লাটে তালা মেরে বাড়ি ছেড়ে পলাতক রয়েছেন। তাদেরকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। আর স্ত্রী সন্তানসহ সেলিমকে তাদের বাসাতে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদি সেলিম বলেন, বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে অনেকের মতো তিনিও কর্মহীন হয়ে পড়েন। তিন সন্তানের ভরণপোষণ ও পরিবার নিয়ে বিপদে পড়েন। এজন্য গত মাসের বাসা ভাড়ার টাকা দিতে পারেননি বাড়িওয়ালীকে। এ কারণে বাড়িওয়ালী তাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বের করে দেয়।
তবে তিন দিন পরে পুলিশের সহায়তায় পরিবার নিয়ে বাসায় ফিরতে পেরেছেন তিনি।
ভুক্তভোগী ওই পরিবার ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্যের পাশাপাশি আরো জানা গেছে, গত মাসের বাসা ভাড়ার জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই সেলিমকে চাপ দিচ্ছিলেন বাড়ির মালিক। কিন্তু ভাড়া না পেয়ে গত ১৮ এপ্রিল তাদের জোর করে বাসা থেকে বের দেয় বাড়িওয়ালী শম্পা বেগম।
এরপর নিজের দোষ আড়াল করতে বাসা লুটের নাটক সাজিয়ে পুলিশের সহায়তা চেয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন বাড়িওয়ালী। তার ফোন পেয়ে দ্রুত সেই বাসায় যায় কলাবাগান থানা পুলিশ। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে লুটপাটের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। উল্টো বাসা থেকে ভাড়াটিয়াকে বের করে দিয়েছেন বাড়িওয়ালী। পরে ভাড়াটিয়াকে বাসায় ফিরিয়ে আনতে বাড়িওয়ালীকে অনুরোধ করে পুলিশ। কিন্তু এরপরও বাড়িওয়ালী তাদেরকে বাসায় উঠায়নি।
সেলিম বলেন, ভাড়ার টাকার বিবাদে আমার ১০ বছরের সন্তানকে মারধরও করেছে বাড়িওয়ালী। দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের নিউ মার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আবুল হাসান বলেন, দুই মাসের বাচ্চাসহ বের করে দেওয়া সেই ভাড়াটিয়াকে তার বাসায় তুলে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের পরিবারের জন্য খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন তারা। আর সেই বাড়িওয়ালীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আবুল হাসান বলেন, ‘ওই বাড়িওয়ালী ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানায় তার বাসা লুট করা হচ্ছে। তাই দ্রুত সেই বাসায় পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ গিয়ে আসল ঘটনা জানতে পারে।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাড়িওয়ালী শম্পার মোবাইলে ফোন করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।