ইতিমধ্যেই গ্রামে পুরোদমে জেঁকে বসেছে শীত। শহরে শীতের তীব্রতা অবশ্য খানিকটা কম। তবে প্রতিদিনই ধীরে ধীরে বাড়ছে। এর মধ্যে শীতের আগমনে পশমি বা মোটা কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। অনলাইন, অফলাইন—সব জায়গাই বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম। ক্রেতারও অভাব নেই। কনকনে শীতের কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে তো! শরীর উষ্ণ না থাকলে কাজকর্ম করা তো দূরে থাক, ঘরে বসে থাকাও দায়।
পোষাক বাছাইয়ে ভিন্নতা থাকলেও শীতে সবাই মোটা কাপড়ের পোষাক পরেন। এ সময় পশমি কাপড়ের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। কখনো ভেবেছেন, এ কাপড় কীভাবে আমাদের শরীর গরম রাখে? খেয়াল করলে দেখবেন, সারাদিন পশমি কাপড় পরে ঘোরার পাশাপাশি রাতেও আমরা এই কাপড় ব্যবহার করি।
না, রাতে জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে ঘুমানোর কথা বলছি না। বরং ঘুমানোর সময় আমরা যে কম্বল বা লেপ গায়ে দিই, তা সাধারণত পশমিই হয়। এগুলো দেখবেন, চাপ দিলে সংকুচিত হয়ে যায়। কারণ, সুতি কাপড়ে প্রচুর বাতাস থাকে। ভাবতে পারেন, বাতাসের সঙ্গে পশমি কাপড়ের সম্পর্ক কী? সম্পর্ক আছে। তার আগে জানা দরকার, তাপ কীভাবে চলাচল করে।
তাপ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয় তিন পদ্ধতিতে। পরিবহন, পরিচলন ও বিকিরণ। এর মধ্যে প্রথম দুটি পদ্ধতিতে কোনো বস্তুর তাপমাত্রা বাড়াতে চাইলে তা উচ্চ তাপের বস্তুর সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। তৃতীয় ক্ষেত্রে কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন পড়ে না। তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ আকারে এতে তাপ শক্তি সঞ্চারিত হয়। সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসে এই পদ্ধতিতে।
আমরা যে খাবার খাই, সেখান থেকে অণু-পরমাণু নিয়ে আমাদের দেহ নিজস্ব প্রক্রিয়ায় তাপ উৎপাদন করে নিজের জন্য। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিকভাবে কাজ করার জন্য তাই বাইরের তাপের ওপর নির্ভর করতে হয় না। কিন্তু তাপ জিনিসটা একটু উদারমনা। পানি যেমন উঁচু স্থান থেকে নিচু স্থানের দিকে ছোটে, তেমনি তাপমাত্রাও বেশি থেকে কমের দিকে যায়। অর্থাৎ উষ্ণ বস্তু থেকে শীতল বস্তুতে স্থানান্তরিত হয়।
তাই পরিবেশের তাপমাত্রা যখন দেহের চেয়ে কমে যায়, তখন শরীরে উৎপন্ন তাপ বাইরের নিম্ন তাপের পরিবেশে সঞ্চারিত হয়ে একটা ভারসাম্যে আসতে চায়। আর এখানেই জাদু দেখায় পশমি কাপড়। পরিবেশ ও শরীরের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাপ আদান-প্রদানে। আসলে পশমি কাপড় তাপ নিরোধক হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এ কাপড়ে শরীর উষ্ণ হয় না, বরং শরীরের তাপটুকু ধরে রাখে এটি। আর তাতেই আমরা উষ্ণতা অনুভব করি। কিন্তু পশমি কাপড় নিরোধক হিসেবে কাজ করে কীভাবে?
ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখবেন, সাধারণ কাপড়ের সুতার মতো পশমি কাপড় মসৃণ নয়। ছোট ছোট অসংখ্য কোঁকড়ানো তন্তু দিয়ে তৈরি এ কাপড়ের সুতা। ফলে পশমি কাপড়ের বুনন সাধারণ কাপড়ের মতো আঁটোসাঁটো হয় না। কোঁকড়ানো তন্তুর মধ্যে থাকে ফাঁকা স্থান। এই ফাঁকা স্থান ভরা থাকে বাতাস দিয়ে। আর এখানেই ঘটে ম্যাজিকটা।
একদিকে উলের কঠিন তন্তুতে থাকা পরমাণুর ঘন সন্নিবেশ, তারপরে বাতাসের হালকা পরমাণুর আস্তরণ। দুয়ে মিলে একটা অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করে। তখন তাপের পরিবহন বা পরিচলন—কোনো পদ্ধতিই সুবিধা করতে পারে না। ফলে পশমি কাপড় কাজ করে তাপ নিরোধক হিসেবে।
সহজে বোঝানোর জন্য পুরো বিষয়টা এখানে সহজ ভাষায় বলা হয়েছে। বাস্তবে কার্যক্রম আরও জটিল। শরীর ক্রমাগত তাপ উৎপাদন করতে থাকে। তাই পুরো তাপটা যদি আমরা আটকে ফেলি, তাহলে নিজের তাপে নিজেরই গরমে সেদ্ধ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা হয় না। কারণ, সম্পূর্ণ তাপ আটকাতে পারে না পশমি কাপড়। কিছুটা তাপ পরিবেশে চলেই যায়। সেটা অবশ্য আমাদের সৌভাগ্য।
বিকিরণের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। এই বিকিরণ পদ্ধতিতেও কিছুটা তাপ বেরিয়ে যায়। তাপ আটকানো ছাড়াও পশমি কাপড়ের আরও চমৎকার কিছু ব্যাপার আছে। তা নিয়ে অন্য একদিন কথা বলা যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।