আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গকে ‘এড়িয়ে’ গঙ্গা-তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে এগোতে চাইছে ভারতের কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। যার ফলে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই এই চুক্তি কার্যকর করতে উদ্যত হয়েছে কেন্দ্র।
রোববার (২৮ জুলাই) ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব এনে তার উপর আলোচনা করতে চায় তৃণমূল পরিষদীয় দল। তবে এই সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের রণনীতি এখনই খোলসা করতে নারাজ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল।
শাসকদলের পরিষদীয় দল সূত্রে জনা যায়, চলতি বিধানসভা অধিবেশনে এই প্রস্তাবটি আনা হবে। আগামী বুধবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে আবারও বসবে বিধানসভার কার্যবিবরণী কমিটির বৈঠক। ২ এবং ৫ অগস্টের সেই বৈঠকে বিধানসভায় কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, তা স্থির হবে।
মনে করা হচ্ছে, ওই দিনই গঙ্গা-তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তিসহ বাংলার নদী সংস্কার, পানি বিভাজন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বঞ্চনার অভিযোগ এনে প্রস্তাব আনা হবে। পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে বরাবর নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সেই মতামতকে উপেক্ষা করে নিজেদের মতো করেই এগোতে চাইছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। তাই বিধানসভায় প্রস্তাব এনে মোদি সরকারকে ‘বার্তা’ পাঠাতে চাইছে মমতার দল। এমনটাই মনে করছেন জাতীয় রাজনীতির কারবারিদের একাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পানিচুক্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশে এখনই আসা সম্ভব হচ্ছে না সেই প্রতিনিধি দলের। ঢাকা থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারতের প্রতিনিধি দল সফরের বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিলেই আলোচনার জন্য তাদের পাঠানো হবে বলেও জানানো হয়।
এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সাথে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও আলোচনা করেনি বলেই নবান্ন সূত্রে খবর। এভাবে রাজ্যের স্বার্থকে ‘উপেক্ষা’ করে কেন্দ্রীয় সরকারের একতরফা নীতি মেনে নিতে নারাজ রাজ্য। তাই বিধানসভায় প্রস্তাব এনে কেন্দ্রকে ‘বার্তা’ দিতে চায় তৃণমূল পরিষদীয় দল। তবে এই বিষয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ তৃণমূল পরিষদীয় দলের কোনও সদস্য।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শাসকদলের কার্যবিবরণী কমিটির এক সদস্যের কথায়, বিধানসভার অধিবেশনে কী বিষয়ে আলোচনা হবে, তা কমিটির বৈঠকের আগে কোনভাবেই বলা সম্ভব নয়। আমরা প্রস্তাব দেব, সেই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন স্পিকার। তিনি যদি মনে করেন বিষয়টি বিধানসভায় আলোচনার জন্য সঠিক, তবেই সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দিনক্ষণ ধার্য হবে। তাই কোন বিষয়ে বিধানসভায় আলোচনা হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
এখন বিধানসভায় ‘ইন্দো-ভুটান জয়েন্ট রিভার কমিশন অফ মনিটরিং অ্যান্ড কন্ট্রোলিং ফ্লাড সিচুয়েশন’ নিয়ে আলোচনা চলছে। এই আলোচনায় গত শুক্রবার অর্থনীতিবিদ তথা বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী নিজের বক্তৃতা বলেন, এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের বিবেচনাধীন বিষয়। যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আলোচনার কোনও এক্তিয়ার নেই রাজ্যের।
বিজেপি পরিষদীয় দল মনে করছে, কেবলমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থেই এমন প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আনতে পারে শাসকদল তৃণমূল। এ ক্ষেত্রেও তাদের যুক্তি, দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এমন একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যথেষ্ট সংবেদনশীল বিষয়। এক্ষেত্রে ভারতবর্ষের একটি অঙ্গরাজ্যের সরকারের এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার অধিকার নেই। তবে এই চুক্তিকে কেন্দ্র করে আবারও কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে বলেই মনে করছে রাজ্যের প্রশাসনিক মহল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।