আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের সব বাসিন্দাকে সরকারি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প ‘স্বাস্থ্য সাথী’র আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ কেউ বলছেন বৈপ্লবিক পদক্ষেপ, কেউ বলছেন ভোটের বাধ্যতা৷ খবর ডয়চে ভেলের।
অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সরকারি স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প ‘স্বাস্থ্য সাথী’ চালু করেছিল রাজ্য সরকার৷ প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল অন্তত ৭.৫ কোটি রাজ্যবাসীকে এই বিমার আওতায় আনা, যেখানে বছরে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ‘ক্যাশলেস চিকিৎসা’র সুযোগ পাওয়া যাবে৷
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করলেন, রাজ্যের প্রত্যেকটি পরিবার, জাত, ধর্ম, সামাজিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নির্বিশেষে সবাই এই বিমার আওতায় আসবে৷ ১ ডিসেম্বর থেকেই চালু হয়ে যাবে এই সুবিধা৷ স্মার্টকার্ডের ধাঁচে একটি কার্ড দেওয়া হবে পরিবারের যিনি কর্ত্রী, সেই মহিলার নামে৷
পশ্চিমবঙ্গই প্রথম রাজ্য, যেখানে সব লোককে সরকারি স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা হবে৷ মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক বিরোধীরা বলছেন, ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভার ভোটের দিকে তাকিয়েই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর এই সিদ্ধান্ত৷ বস্তুত কিছু সংবাদমাধ্যমও এইভাবেই খবরটা দিয়েছে, যে ভোটের আগে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যবিমার ঘোষণা৷ কিন্তু ভেতরে ভেতরে সম্ভবত সবাই মেনে নিচ্ছে, যে মমতা ব্যানার্জির এই সিদ্ধান্ত আদতেই বৈপ্লবিক, যেখানে সবার জন্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছে সরকার৷
ব্রিটেনে যেমন জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা বা এনএইচএস প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নাগরিক চিকিৎসার বন্দোবস্ত আছে৷ বা জার্মানির সরকারি-বেসরকারি মিলিত ব্যবস্থা, যাকে বলা হয় ‘বিসমার্ক মডেল’, যা আধুনিক জার্মানি, ফ্রান্সে চালু আছে৷
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই নিখরচায় চিকিৎসার সুযোগ বেসরকারি হাসপাতালের ওপর কতটা চাপ বাড়াবে? বা সরকারি হাসপাতালও কতটা পরিষেবা জোগাতে পারবে?
দুটি ক্ষেত্রেই চাপ বাড়লেও পরিষেবার মান উন্নত হবে এবং সার্বিকভাবে চিকিৎসার খরচ কমবে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং একাধিক বড় হাসপাতালের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ডা. শান্তনু চ্যাটার্জি৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা এমন একটা বৈপ্লবিক পদক্ষেপ, যেটা অন্য কোনও রাজ্য সরকার দিতে পারেনি৷ আর্থ-সামাজিক (অবস্থা) নিরপেক্ষভাবে সমস্ত শ্রেণির মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করাটাই একটা সরকারের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত৷ এতে বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে৷ কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে ওদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে হবে, যাতে সরকারের বেঁধে দেওয়া খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ওরা বিভিন্ন অস্ত্রোপচার, চিকিৎসা করতে পারে৷ তাতে সামগ্রিকভাবে চিকিৎসার খরচ কমবে৷’’
ডা. চ্যাটার্জি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছেন, ‘‘আজকাল বেসরকারি হাসপাতালও ভাল কাজ করছে৷ কিন্তু চিকিৎসার খরচটা সাধারণ মানুষের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ এক্ষেত্রে দুটো ব্যাপার হবে৷ সরকার খরচটা দেওয়ার ফলে সাধারণ মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাবে৷ বেসরকারি হাসপাতালও চেষ্টা করবে, একই মান বজায় রেখে কী করে খরচ কমানো যায়৷ যেটা যে কোনও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত৷’’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।