জুমবাংলা ডেস্ক : শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে নানা বিতর্ক। বিতর্কের সূত্রপাত করেছেন হাসিনা নিজেই। কখনো বলছেন তিনি পদত্যাগ করেছেন। কখনো বা বলছেন করেননি। সর্বশেষ অডিও ক্লিপেও একই সুরে কথা বলেছেন। বলছেন, তিনি পদত্যাগ করেছেন ঠিকই, কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী হয়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ছাত্র- জনতার গণ বিপ্লবের পর সংবিধানের সবকিছু মেনে কি সরকার চলছে? এটা কিন্তু কেউই নিশ্চিত করে বলছেন না। সাংবাদিক আমীর খসরু বলছেন, বিপ্লব সংবিধান মেনে হয় না। বিপ্লবই সংবিধান তৈরি করে। হাসিনা বারবারই বলছেন, তাকে হটাতে আমেরিকার হাত ছিল। কিন্তু আমেরিকা বলছে, তারা এর সঙ্গে যুক্ত নয়। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানেই হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই অবস্থায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে গার্ডিয়ান চাঞ্চল্যকর একটি খবর দিয়েছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে অবশ্য এই খবর নেই। এখানে এ নিয়ে কোনো সময় জল্পনাও ছিল না। যদিও বিএনপিসহ বিরোধী রাজনীতিকরা ২০১০ সন থেকে জোরালো আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু তাদের লক্ষ্য হাসিল হয়নি। সূত্র : মানবজমিন অনলাইন, THE Sunday Guardian
পত্রিকাটি বলছে, পাঁচ বছর আগে থেকেই হাসিনাকে উৎখাতের প্লট তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র। কিছু নথিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে তাদের এই ধারণাই হয়েছে। ২০১৯ সন থেকে যুক্তরাষ্ট্র হাসিনাকে উৎখাতের প্লট নিয়ে কাজ শুরু করে। এ নিয়ে পাঠকদের কৌতূহল থাকবে। আর সেটা বিবেচনায় নিয়েই দ্য সানডে গার্ডিয়ানের রিপোর্টটি এখানে উপস্থান করছি।
Documents show U.S. set in motion plan to oust Hasina শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অপসারণের পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের প্রথম দিকেই। দ্য সানডে গার্ডিয়ানের হাতে আসা নথিগুলো সেদিকেই ইঙ্গিত করে। নথি মোতাবেক, এই কার্য সম্পাদনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থাগুলোর ওপর ৷ মঙ্গোলিয়া (১৯৯৬), হাইতি (২০০১) এবং উগান্ডা (২০২১) এর পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) কাছে সর্বশেষ সাফল্য ‘বাংলাদেশ’ , এটি সফলভাবে ঢাকার শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে । দ্য সানডে গার্ডিয়ান শোতে দেওয়া অভ্যন্তরীণ নথি অনুসারে, ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (এনইডি) এবং ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এর বৃহত্তর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছে আইআরআই।নথিগুলি আরো দেখায় যে, কীভাবে ভারতের “হস্তক্ষেপ” প্রতিহত করার জন্য প্রকল্পটি প্রয়োজনীয় ছিল।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক আইআরআই-এর উদ্দেশ্য হলো- “গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রচার করা এবং গণতান্ত্রিক শাসনকে উন্নত করার লক্ষ্যে ইউএসএআইডি অর্থায়িত প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নে অংশীদার হওয়া। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই), সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ (সিআইপিই) এবং সলিডারিটি সেন্টারের পাশাপাশি এনইডির চারটি মূল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইআরআই একটি। একইভাবে, এনইডি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রক্রিয়াগুলিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য আইআরআই-কে অনুদান প্রদান করে। ১৯৮৩সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি বা এনইডি হল একটি বেসরকারী, অলাভজনক সংস্থা যা প্রাথমিকভাবে মার্কিন কংগ্রেস দ্বারা অর্থায়ন করা হয়। এটি স্বাধীনভাবে কাজ করে, পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে বার্ষিক বরাদ্দ পায়। ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)হল একটি সরকারি সংস্থা যা বিদেশী সহায়তা ও উন্নয়ন পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত ।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে ,ইউএসএআইডি এবং এনইডি থেকে অনুদান পাওয়ার পর আইআরআই, ঢাকায় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে একটি কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করে। উল্লিখিত কর্মসূচির নামকরণ করা হয়েছিল “প্রমোটিং অ্যাকাউন্টেবিলিটি, ইনক্লুসিভিটি, এবং রেজিলিয়েন্সি সাপোর্ট প্রোগ্রাম” (PAIRS) এবং এটি ২২ মাস ধরে ২০২১ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত চলে। আইআরআই জানিয়েছে যে “বাংলাদেশের নাগরিকদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং কর্তৃত্ববাদ বিরোধী কণ্ঠকে প্রসারিত করার জন্য এই কর্মসূচীর প্রয়োজন ছিল। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার জন্য সামাজিক ক্ষমতায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আইআরআই নাগরিক-কেন্দ্রিক, স্থানীয় এবং অ-প্রথাগত ফোরামগুলিকে লালন করেছে । এর জন্য, আইআরআই ” সঙ্গীতশিল্পী, অভিনয় জগতের ব্যক্তিত্ব বা সংস্থাগুলিকে ১১ অ্যাডভোকেসি অনুদান প্রদান করেছে। যারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলিকে তুলে ধরতে ২২৫ টি শিল্পসামগ্রী তৈরি করেছে যা প্রায় ৪ লক্ষ বার দেখানো হয়েছে। এলজিবিটিআই, বিহারি এবং জাতিগত সম্প্রদায়ের তিনটি সুশীল সমাজ আইআরআই-কে ৭৭ জন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিতে এবং ৩২৬ জন নাগরিককে ৪৩টি সুনির্দিষ্ট নীতিগত দাবি তৈরিতে নিযুক্ত করতে সহায়তা করেছিল।এটি ৬৫ জন সরকারি কর্মকর্তার সামনে প্রস্তাব করা হয়েছিল। তিনটি ফোকাস গ্রুপ বাংলাদেশে এলজিবিটিআই জনগণের ওপর বৃহত্তম সমীক্ষা সহ সম্প্রদায়-ভিত্তিক গবেষণা পরিচালনা করেছে।”
প্রসঙ্গত, ১৬ মার্চ ), আরেকটি ওয়াশিংটন-ভিত্তিক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং আইআরআইয়ের টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশন (টিএএম) ২০২৪সালের জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার জয়ী হওয়ার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সংস্থাটি ২২মাস ধরে PAIRS প্রোগ্রাম চালানোর পরে উল্লিখিত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ।প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে ২০২৪ সালের নির্বাচনে অর্থাৎ নির্বাচনী প্রচারের সময়কাল, নির্বাচনের দিন এবং অব্যবহিত পরে পূর্ববর্তী নির্বাচনের তুলনায় কম শারীরিক এবং অনলাইন সহিংসতা দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে দেশব্যাপী পক্ষপাতমূলক প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি এবং নির্বাচনের নিরাপত্তার উপর রাষ্ট্রের বর্ধিত মনোযোগের কারণে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে যে – জানুয়ারির নির্বাচনের মান রাষ্ট্র, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধীদের সহিংসতার ঘটনাগুলির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশে রাজনৈতিক মেরুকরণ, নেতাদের মধ্যে সহিংসতা, নাগরিকস্থান সংকুচিত এবং স্বাধীনতার অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আইআরআই, তার PAIRS প্রোগ্রাম সম্পর্কে কথা বলার সময় বলেছিল যে কোভিড -১৯ মহামারীর সময়ে শেখ হাসিনা সরকারের অস্থিতিশীল হবার সম্ভাবনা ছিল তবে সেটি ঘটেনি কারণ মৃত্যুর হার কম ছিল এবং চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তিনি অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আইআরআই জানিয়েছে – “বিএনপি প্রান্তিক রয়ে গেছে, আর আওয়ামী লীগের শক্তি সীমাহীন। তবে ভবিষ্যতে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে বিএনপি-কে এখনও সবচেয়ে সম্ভাব্য দল হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে ।করোনা মহামারী সময়কালে উদ্ভুত স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করার সম্ভাবনা ছিল। তবে, বাংলাদেশে মৃত্যুর হার কম ছিল এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা গেছে। ‘একইসঙ্গে আইআরআই জানিয়েছে , হাসিনা কর্তৃক পাস করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিপ্রেক্ষিতে PAIRS প্রাসঙ্গিক ছিল।
কারণ এই আইন সোশ্যাল মিডিয়ার স্বাধীনতাকে রুখতে এবং সুশীল সমাজের সংগঠনগুলির কাজে বাধা দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
আইআরআই মোতাবেক -‘ আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালে পাস করা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (DSA)- কে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, অধিকার কর্মী এবং সাধারণ নাগরিকদের কারাগারে পাঠাতে ব্যবহার করেছে যারা সামাজিক মিডিয়াতে কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা বা চ্যালেঞ্জ করেছিল।এই অনলাইন নিষেধাজ্ঞাগুলি শুধুমাত্র কোভিড -১৯ এর সমালোচনা বন্ধ করার জন্য শুরু হয়নি। আইসিটি আইন (২০১৩) – কে প্রতিস্থাপন করে আনা হয় ডিএসএ , যা সরকারকে যে কোনো অনলাইন বক্তব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য একই ধরনের ক্ষমতা প্রদান করে ।কোভিড -১৯ সংকট সরকারকে ডিজিটাল স্পেসে তার কর্তৃত্ব প্রয়োগের একটি নতুন সুযোগ এনে দেয়। আইআরআই-এর প্রোগ্রামটি এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কাজ করার এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে ডিজাইন করা হয়েছিল।বাংলাদেশ, যেখানে নাগরিক অধিকার সংকুচিত সেখানে গণতন্ত্র বিরোধী প্রবণতাগুলিকে ঠেকাতে আইআরআই একটি সৃজনশীল প্রোগ্রাম ডিজাইন করে ।আইআরআই সামাজিকভাবে সচেতন শিল্পীদের সমর্থন করেছিল, যদিও প্রথাগত সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন (সিএসও) ক্রমাগত চাপের সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র শিল্পী এবং কর্মীদের দমন করা কঠিন। কারণ তারা সহজেই গণতান্ত্রিক এবং সংস্কারমূলক বার্তাগুলি নিয়ে দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারে। পাশাপাশি আইআরআই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করেছে-বিশেষ করে বিহারী, সমতল জাতিগোষ্ঠী এবং এলজিবিটিআই জনগণকে -যাদের ওকালতিকে সরকার হুমকি হিসেবে না দেখে সমর্থন করবে। উভয় পন্থা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে এবং আগামীদিনে গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনার পথ দেখিয়েছে।আইআরআই-এর কর্মসূচি বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করেছে এবং শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ক্ষমতার পরিবর্তনের লক্ষ্যে সাফল্য পেয়েছে। ”
দ্য সানডে গার্ডিয়ানের হাতে আসা নথিগুলিতে বিশদ বিবরণ রয়েছে যে কীভাবে ব্যক্তিদের ইভেন্ট, বই প্রকাশ, গল্প বলা, ফটো প্রদর্শনী, শিল্প প্রদর্শনী, থিয়েটার পারফরম্যান্স, নাচের অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র এবং ডকুমেন্টারি স্ক্রীনিং, রাউন্ড টেবিল মিট, অ্যাডভোকেসি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের জন্য সচেতন করা হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু ছিল একচেটিয়া আমন্ত্রণ, যেখানে রাজনৈতিক কর্মকর্তা এবং মার্কিন দূতাবাসের কনস্যুলার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। আইআরআই অনুসন্ধান অনুসারে, এই কর্মসূচি ৪লক্ষ বাংলাদেশী নাগরিককে সরাসরি প্রভাবিত করেছিল। একইভাবে, অন্য একটি প্রকল্পে আইআরআই সংস্থাটি ফেব্রুয়ারি ২০২১ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত কাজ করেছিল, যার জন্য ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (এনইডি) দ্বারা সংস্থাটিকে ৯ লক্ষ ডলার অনুদান দেওয়া হয়েছিল। আইআরআই বলেছে যে – ‘ তাদের লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক বিতর্ক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রান্তিক কণ্ঠস্বর, বিশেষত যুবক এবং নারীদের ক্ষমতাকে প্রসারিত করা । রাজনীতিতে আসতে নারীদের উৎসাহিত করা । পাশাপাশি প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের ছাত্র শাখার প্রতিনিধিদের সাথে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অহিংস উপায় সম্পর্কে তাদের বোঝানো। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্দলীয় ছাত্র নেতাদের নেতৃত্বদানের দক্ষতা বাড়ানো এবং সাংস্কৃতিক জগতের সাথে জড়িত ছাত্রদের সমর্থন ।”
ভারতের জন্য সতর্কবার্তা ?
এই নথি সামনে আসার পর দিল্লি এবং অন্যান্য দেশের কী সতর্ক হওয়া উচিত ? কারণ এতে আওয়ামী লীগের দুর্নীতিমূলক রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাকে সমর্থন করার জন্য ভারতকে দায়ী করা হয়েছে । বলা হয়েছে – “বাংলাদেশে, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় দুটি রাজনৈতিক দলের আধিপত্য রয়েছে: আওয়ামী লীগ (এএল) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।গত দশ বছর ধরে ভারতের সমর্থনে আওয়ামী লীগ ক্রমশ বাংলাদেশের মাটিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাকে কলুষিত করেছে।’ অনুরূপ আরেকটি প্রতিবেদনে ভারত সম্পর্কে মন্তব্য করে বলা হয়েছে, “ আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা ভারতের সমর্থনে যে কোনো উপায়ে পুনঃর্নির্বাচন চাইবেন। কারণ আঞ্চলিক শক্তির হস্তক্ষেপ প্রতিহত করা প্রয়োজন।”
একটি ইভেন্টে ঢাকার টাঙ্গাইল জেলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের ১৫ জন ছাত্র নেতার (১২ জন পুরুষ, তিনজন নারী ) সাথে অহিংসা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের উপর একটি কর্মশালা করেছিল আইআরআই।একইভাবে, আওয়ামী লীগের ছাত্র রাজনীতির অবস্থা নিয়ে আলোচনার জন্য ছাত্রলীগের ১১ জন সদস্য (নয়জন পুরুষ, দুইজন নারী ) এবং একজন সিনিয়র নেতাকে (একজন পুরুষ) নিয়ে টাঙ্গাইল জেলায় আরেকটি গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়। পরে, আইআরআই টাঙ্গাইল এমএম আলী কলেজ থেকে বিএনপির ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে একটি ভার্চুয়াল গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। আলোচনায় ছাত্রদলের সিনিয়র নেতা রানা আহমেদ সহ মোট ১১ জন শিক্ষার্থী (১০ জন পুরুষ, একজন নারী ) উপস্থিত ছিলেন। আইআরআই এর বাংলাদেশ স্ট্র্যাটেজি ২০২১-২২ থেকে আভাস পাওয়া যায় যে , হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেবার পর আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-এর পরিবর্তে একজন অরাজনৈতিক সত্ত্বা (মোহাম্মদ ইউনূস) -কে সরকার চালানোর জন্য বেছে নেওয়া কেন আবশ্যিক ছিল । এমনকি সরকার চালানোর জন্য খালেদা জিয়ার নামও সেখানে আসেনি। বিরোধী দল বিএনপি বাহ্যিক চাপ, অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা এবং জনপ্রিয়তা হ্রাসের সম্মুখীন।আ.লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার হয়রানি, কারাগারে নিক্ষেপ , বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বিএনপি সদস্য ও সমর্থকদের দমন করতে সব ধরনের চাপ প্রয়োগ করেছিল। নির্বাচনে সুযোগ থাকলেও বিএনপির সামনে সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা সীমিত ছিল। অভ্যন্তরীণভাবে, দলটির মধ্যে তার ঢাকা-ভিত্তিক এবং লন্ডন-ভিত্তিক নেতৃত্বের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। যারা অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষপাতী তাদের সমর্থন করেন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, যিনি আবার লন্ডন থেকে দলকে নিয়ন্ত্রণ করেন । বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নেতৃত্বের অভাব। সম্ভবত এ কারণেই বিএনপির জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়ছে। সেপ্টেম্বর ২০১৯-এ আইআরআই-এর সাম্প্রতিকতম জাতীয় সমীক্ষায় ৩৬ শতাংশ ‘বিরোধীদের’ অনুমোদন দিয়েছে , যা জরিপে সর্বনিম্ন রেট বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।এছাড়াও, বিএনপির প্রাক-কোভিড-১৯ জনসভা, যেগুলো বেশিরভাগই কারাগার থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির (২০২০ সালের মার্চে মুক্তির আগে) উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল, সেখানে খুব কমই মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে ।”
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণে আ.লীগ ও বিএনপি প্রধান ভূমিকা রয়েছে । আওয়ামী লীগের কৌশল কর্তৃত্ববাদ এবং বিএনপির বয়কট এবং দলীয় নেতাদের সিদ্ধান্তহীনতা । দলীয় নেতৃত্বের পরিবর্তন এই সমস্যার সমাধান করতে পারে, কিন্তু নতুন রাজনৈতিক নেতাদের সামনে সেই সম্ভাবনা কম। আ.লীগ ও বিএনপি শ্রেণীবদ্ধ ও পরিবারভিত্তিক দল। উপদেষ্টাদের একটি বৃত্ত উভয় দলকে নির্দেশ দেয়। খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা তাদের সন্তানদের উত্তরসূরি হিসাবে ফোকাস করে গেছেন। তরুণ বা সংস্কারপন্থী নতুন নেতারা উভয় দলের ক্ষেত্রে অনেক বাধার সম্মুখীন হন। এখানে পারিবারিক আনুগত্য প্রধান নীতি। একইভাবে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী শ্রেণী এবং সুশীল সমাজও বিএনপি সম্পর্কে খুব কমই মতামত রেখেছে। ব্যবসায়িক খাত এবং সেনাবাহিনী এমন প্রতিষ্ঠান যা অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। যদিও আ.লীগ সরকার ব্যবসায়িক এবং সামরিক অভিজাতদের শান্ত করার জন্য তাদের স্বার্থকে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে। পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় দরপত্র, পারমিট ও লাইসেন্স এবং শিপিং রুটের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য রাজনৈতিক সমর্থনকে অপরিহার্য করে তুলে। বিরোধী দলভুক্ত ব্যবসায়ীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দুর্নীতি মামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। “
তৃণমূলস্তর থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে সুশীল সমাজের । সুশীল সমাজ হল রাষ্ট্র, বেসরকারি খাত এবং পরিবারের মধ্যে সেতুবন্ধন । সুশীল সমাজের সদস্যরা নাগরিক সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা বা সমাধানের জন্য মিলিত হন ।বাংলাদেশে, সুশীল সমাজে ঢাকা-ভিত্তিক এনজিওগুলির আধিপত্য রয়েছে যেগুলিতে প্রায়শই তৃণমূলস্তরের সংযোগের অভাব থাকে এবং যাদের কার্যক্রম নাগরিকদের উদ্বেগগুলিকে সমাধান করার পরিবর্তে দাতাদের চাহিদা পূরণের দিকে পরিচালিত হয়।সুশীল সমাজ একটি অভিজাত সেক্টরে পরিণত হয়।
“কাজের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলি” চিহ্নিত করার সময়, আইআরআই-জানিয়েছে যে তাদের লক্ষ্য রাজনৈতিক দলকে শক্তিশালী করা৷ বাংলাদেশে, ক্রমবর্ধমান মেরুকরণ এবং বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা সত্ত্বেও, আইআরআই দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ (এএল) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর সাথে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলে। বিস্তৃত জনমত গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে নিয়মিত ব্রিফ করার পাশাপাশি, আইআরআই নাগরিক-কেন্দ্রিক ও ডেটা-ভিত্তিক বার্তাপ্রেরণ এবং নীতি বিকাশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলিকে উপযোগী প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে।
নথিতে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের পাঁচজন কর্মকর্তা এবং ঢাকা-ভিত্তিক তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা, ইউএসএআইডির দুইজন এবং মার্কিন দূতাবাসের একজন রাজনৈতিক কর্মকর্তাকে প্রাথমিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও সানডে গার্ডিয়ান তাদের নাম প্রকাশ করতে চায়নি।
“হিল আউটরিচ” শিরোনামের অধীনে এই পুরো প্রোগ্রামটি সম্পাদনের তত্ত্বাবধানে যে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নাম দেওয়া হয়েছিল তারা হলেন: ক্রিস মারফি (ডি-সিটি), এসএফআরসি (দক্ষিণ এশিয়া উপকমিটিতে নিযুক্ত ), সুমনা গুহ, দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক , ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল , ডোনাল্ড লু, এসসিএ, স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইনকামিং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, সারাহ মার্গন, ডিআরএল, স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইনকামিং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এবং ফ্রান্সিসকো বেনকোসমে, ইএপি, স্টেট ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র অ্যাডভাইজার (অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ থাকাকালীন বাংলাদেশকে কভার করেছেন )।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।