জুমবাংলা ডেস্ক: দিনমজুর আলতাফ হোসেন। তিনি যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছেন পুরনো দিনের একটি রেডিও। রেডিওটি তার বাবা দেলোয়ার হোসেনের। তার বাবা ১৯৬৫ সালে ৫ বিঘা জমি বিক্রি করে জাপানি ব্র্যান্ডের একটি রেডিও কিনে সে সময় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তখনকার সময়ে আশপাশের ১০ গ্রামের মধ্যে এটিই ছিল একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম। বাবার ওই রেডিওটি আজও অতিযত্নে আগলে রেখেছেন আলতাফ। সময় নিউজের প্রতিবেদক রিংকু কুণ্ডু-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানার রহিমাবাদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দিনমজুর আলতাফ হোসেন একটি পুরনো দিনের রেডিও বের করে পরিষ্কার করছেন। প্রতিদিন সেই রেডিওটি বের করে পরিষ্কার করে আবার অতিযত্নে কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রেখে দেন বলে জানান আলতাফ হোসেন।
তিনি জানান, তার বাবা দেলোয়ার হোসেন ১৯৬৫ সালে ৫ বিঘা জমি বিক্রি করে এই রেডিওটি কিনেছিলেন। সেই সময় প্রতি বিঘা ৫০ টাকা করে ৫ বিঘা জমি ২৫০ টাকায় বিক্রি করে পাবনা থেকে জাপানি তিন ব্র্যান্ডের একটি রেডিও কিনে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। সেই সময় দেলোয়ার হোসেনের এই রেডিও শুনতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসত তার বাড়িতে।
এরপর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রামের মানুষ যুদ্ধের সব খরব শুনতেন এই রেডিওর মাধ্যমে। আর এই রেডিওর মাধ্যমে যুদ্ধের খবর সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার কারণে পাকবাহিনী তাকে নির্যাতন করে তার বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। তারপরও এই রেডিওর প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা ছিল বাবার (দেলোয়ার হোসেন)। বিশেষ করে সেই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনা ও বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন খোঁজখবর রাখতেন এই রেডিওর মাধ্যমে। খবর শোনার প্রবল আগ্রহ ছিল বাবার। রেডিওটি সচল রাখতে ব্যাটারি কেনার টাকা না থাকায় পরবর্তী সময়ে বেশকিছু জমি বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর ১৯৭৫ সালে অর্থের অভাবে গ্রামের এক ব্যক্তির কাছে শখের রেডিওটি বন্ধক রেখে মারা যান বাবা (দেলোয়ার হোসেন)।
মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে আলতাফ হোসেন ২০২২ সালে বন্ধক রাখা সেই রেডিওটি ফিরিয়ে আনেন। সেই থেকে বাবার শেষ স্মৃতি শখের রেডিওটি আগলে রেখেছেন তিনি। ৪৭ বছর পর বাবার রেডিওটি হাতে পেয়ে খুশি ছেলে আলতাফ। আধুনিক সভ্যতার যুগে রেডিওর তেমন আবেদন না থাকলেও আলতাফ তার বাবার রেডিওটি নিয়ে এখনো ঘুরে বেড়ান। এ জন্য গ্রামে তিনি এখন রেডিও আলতাফ নামে পরিচিত।
জমি বেচে রেডিও কেনার এই ঘটনাটি এখন ওই গ্রামে খুব আলোচিত। দীর্ঘ ৪৭ বছর পর আলতাফ হোসেন তার বাবার শখের রেডিওটি ফিরে পাওয়ায় আনন্দিত গ্রামবাসীও। প্রতিদিন এই রেডিওটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন তার বাড়িতে। ১৯৬৫ সালে ৫ বিঘা জমি বিক্রি করে রেডিও কেনার ঘটনাটি বর্তমান প্রজন্মের এক বিস্ময়ের ব্যাপার। জাপানি তিন ব্র্যান্ডের একটি রেডিওটি চালাতে আটটি বড় ব্যাটারি প্রয়োজন হতো বলে জানান স্থানীয়রা।
আলতাফ হোসেনের প্রতিবেশী আশরাফ আলী জানান, কিছুদিন আগে গ্রামের এক শিক্ষার্থী ওই রেডিওটির ছবি তুলে ঘটনার বিবরণীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। এটির দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই আমাদের গ্রামটি রেডিও গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, ৫ বিঘা জমি বিক্রি করে একটি রেডিও কেনার এমন ঘটনা বিরল। আলতাফ হোসেনের বাবা দেলোয়ার হোসেন একজন বিনোদনপ্রেমী মানুষ ছিলেন। সে গ্রামের সবাইকে বিনোদন দেয়ার জন্যই সে ১৯৬৫ সালে তিনি রেডিওটি কিনেছিলেন। তখন আশপাশের ১০ গ্রামের মধ্যে এ গ্রামটি ছিল বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম।
সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম হিরো জানান, আলতাফ হোসেনের বাবা দেলোয়ার হোসেনের রেডিওটি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আমাদের এখানে আসছেন। এটি দেখে আমাদেরও খুব ভালো লাগে। আর আলতাফ হোসেন তার বাবার শেষ স্মৃতিটুকু পরম যত্নে আগলে রেখেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।