জুমবাংলা ডেস্ক : বরাবরের মতো এবারও রোজার মাসে বাড়বে বিএনপির সাংগঠনিক ব্যস্ততা। ইফতারের আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি মাসজুড়েই চলবে বিভিন্ন পর্যায়ের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। বিশেষ করে মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন জেলা এবং অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নানা স্তরে আয়োজন করা হবে ইফতার মাহফিল।
এর মধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলীয়ভাবে পাঁচ শতাধিক ইফতার আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এতে গুরুত্ব পাবেন চলমান আন্দোলনে নির্যাতিত নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। কেন্দ্রীয়ভাবে এতিম, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, পেশাজীবী এবং গুম-খুন নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সম্মানে ইফতার আয়োজন করা হবে। আজ মঙ্গলবার প্রথম রোজায় এতিম ও আলেমদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত, কারাবন্দি এবং অসহায় নেতাকর্মীদের পরিবারের জন্য দলের পক্ষ থেকে পাঠানো হবে ইফতারসামগ্রী। রোজার মাসে রাজপথে তেমন কোনো কর্মসূচি না থাকলেও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারদলীয় লোকদের লুটপাট ও নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষ কষ্টে আছে। এ পরিস্থিতিতে জনগণের দল হিসেবে বিএনপি রমজানেও সাধ্যমতো জনগণের পাশে থাকবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপিতে নানামুখী সংকট দেখা দিয়েছে। ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে সংগঠনের তৃণমূলে। অনেক জায়গায় কমিটি হালনাগাদ ও পুনর্গঠন না হওয়ায় সাংগঠনিক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আর সাংগঠনিক এসব সংকট উত্তরণে রোজার মাসকে কাজে লাগাতে চায় দলটি। পাশাপাশি ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে চান নেতারা।
জানা গেছে, রোজার মাসে বিএনপির সিনিয়র নেতারা তৃণমূলে যাবেন। নিজের এলাকা ছাড়াও অন্যান্য জেলায় যাবেন গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। এ সময় তারা স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হবেন। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি পূর্ণাঙ্গ ও পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে বিএনপি। পাশাপাশি বিভিন্ন মিত্র দল এবং জোটের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বিএনপির সিনিয়র নেতারা অংশগ্রহণ করবেন।
এভাবে পুরো রমজান মাসেই ঘরোয়া রাজনীতি আর ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকবেন দলটির নেতাকর্মীরা। সব মিলিয়ে রোজার মাসকে দল গোছানোর জন্য সাংগঠনিক মাস হিসেবে নিচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। সম্প্রতি এ নিয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি, সাংগঠনিক টিম এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পৃথক ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্যোগে একাধিক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হতো। কিন্তু তিনি মিথ্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি। তবে দলের উদ্যোগে এতিম-আলেম ও কূটনৈতিক এবং রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবীদের নিয়ে ইফতার মাহফিল হবে।’
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে হামলা-মামলা এবং গ্রেপ্তার-হয়রানিতে বিপর্যস্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে তৃণমূলের অসংখ্য নেতাকর্মীর পারিবারিক জীবন ছন্নছাড়া। অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধের উপক্রম। এসবের মধ্যেও সারা দেশে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখে সাংগঠনিক শক্তি মজবুত করতে চায় বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকদের মতে, রমজানকেন্দ্রিক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সরকার নমনীয় থাকবে। তাই রমজানে ইফতার মাহফিলের পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিট কমিটি পুনর্গঠনে কাজ করা হবে। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ রাখাই এর মূল লক্ষ্য। রমজান মাস জুড়ে সাংগঠনিক শক্তির মহড়ার পাশাপাশি কোথাও কোনো কোন্দল বা দুর্বলতা থাকলে তা দূর করা হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এসব কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে চায় দলটি।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তরিকুল আলম তেনজিং জানান, রোজায় সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতার মাহফিলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে রমজানের মাঝামাঝি থেকে পুরোদমে শুরু হবে ইফতার মাহফিল। কোথায় কবে ইফতার হবে—এ বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করা হচ্ছে। তৃণমূল থেকে তথ্য সংগ্রহের পর এ বিষয়ে তালিকা করা হচ্ছে।’
বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক জানিয়েছেন, এবার ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে ইফতার আয়োজন করা হবে। ২০ রোজার পর গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করা হবে। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সব আয়োজনই হবে সাদামাটাভাবে।’
লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, তার জেলায় প্রতিটি থানায় বা আসনভিত্তিক ইফতার মাহফিল নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। রোজার প্রথম সপ্তাহে সবার সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীরা আরও সক্রিয় এবং ঐক্যবদ্ধ হবে বলে জানান এ্যানি।
দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচি বলেন, ‘রোজার মাসে উপজেলা পর্যায়ে অথবা জেলায় দলীয়ভাবে ইফতার মাহফিলের চিন্তা আছে। একই সঙ্গে কারামুক্ত নেতাকর্মীদের সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে। সবকিছুই নির্ভর করবে পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর।’
/কালবেলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।