জুমবাংলা ডেস্ক: মানুষের সম্পর্ক টিকে থাকে একে অপরের প্রতি শদ্ধা, ভালোবাসা আর বিশ্বাসের ওপরেই। আবার একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা বা বিশ্বাসের অভাব হলে ঘটে বিচ্ছেদ; অনেকে আবার জড়িয়ে পড়ে পরকীয়ায়। তবে পশু, পাখিদের মধ্যেও যে এমন মান-অভিমান ও ‘পরকীয়া’র পালা চলে, তাদের সম্পর্কেও যে ‘বিচ্ছেদ’ ঘটে, তা সম্প্রতি লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা।
রয়্যাল সোসাইটির জার্নাল ‘দ্য প্রসিডিংস’ দাবি করেছে, মানুষের মতো পাখি-সমাজেও বিচ্ছেদ বাড়ছে। চীন ও জার্মানির বিজ্ঞানীরা পাখিদের সংসারে নাক গলিয়ে দেখেছেন, পাখিদের দাম্পত্যে ঝগড়া বাড়ছে। সংসার নাকি টিকছেই না। এখনও পর্যন্ত ২৩২টি পাখি-দম্পতির বিচ্ছেদ দেখেছেন তারা। ব্যাপারটা আসলে খুবই মর্মান্তিক।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আজকাল পরকীয়ায় জড়াচ্ছে পাখিরাও। সাধারণত, পুরুষ ও স্ত্রী পাখি গাঁটছড়া বাঁধার পরে প্রথম সন্তান আসা পর্যন্ত একসঙ্গেই থাকে। এটাই পাখিদের নিয়ম।
বিজ্ঞানীদের দাবি, ইদানীং দেখা যাচ্ছে প্রথম ব্রিড হওয়ার আগেই পুরুষ পাখি বা স্ত্রী পাখি অন্য সঙ্গী খুঁজে নিচ্ছে। অথবা অন্য সঙ্গীর সঙ্গে গোপনে প্রেম করছে। সঙ্গীর একজন পরকীয়ায় জড়ালে, অন্যজন তা কিছুতেই মানতে পারছে না। ফলে বিচ্ছেদ।
আবার এমনও দেখা যাচ্ছে, পাখি দম্পতির একজন অনেক দূরে উড়ে গিয়ে আর ফিরে আসছে না। সেখানেই অন্য সংসার পাতছে। ফলে বিচ্ছেদ হচ্ছে অচিরেই। অথিথি পাখিদের ক্ষেত্রে ঠিক এ কারণে বিচ্ছেদ বেশি হচ্ছে। ‘লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপ’ আজকাল পাখিরাও পছন্দ করছে না।
পাখিদের মধ্যে অবসাদের প্রবণতাও দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের তৈরি দূষণে পাখিরা অতিষ্ঠ। যে কারণে তাদের সংসার পাতার ইচ্ছাও চলে যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পাখিদের বিচ্ছেদের শুনে ব্যাপারটা হাস্যকৌতুক হিসেবে মনে হলেও মোটেও তা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। ডিজিটাল সভ্যতার বাড়াবাড়ির কারণে পাখিদের পারস্পরিক কথোপকথন ও তাদের বংশবিস্তারের প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
ক্যানবেরার অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষীবিদ ডক্টর রস ক্রেটার বিপন্ন প্রজাতির পাখিদের নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরেই গবেষণা করছেন। তিনি বলেছিলেন, বিশ্বজুড়ে অনেক প্রজাতির পাখিই বিপন্নের তালিকায় চলে গেছে।
এই পাখিদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই বিজ্ঞানী দেখেছেন, নিজের প্রজাতির মধ্যে ভাব বিনিময়ের যে মাধ্যম, তাই ভুলে গেছে পাখিরা। নিজেদের মধ্যে কথা বলতে এখন তারা অন্য প্রজাতির গান নকল করছে। কোকিল যদি এখন হঠাৎ করে অন্যরকম গান ধরে, তাহলে ব্যাপারটা যেমন হবে ঠিক তাই।
ডক্টর রস বলছেন, মনুষ্য সৃষ্ট দূষণ আর পরিবেশ বদলের যে ভয়ংকর প্রভাব আসতে চলেছে বিশ্বজুড়ে তার সূচনা হয়ে গেছে।
মানুষের মতো পাখিদেরও নিজেদের সমাজ, গোষ্ঠী থাকে। কিন্তু এখন পাখিরা নিজেদের বাসস্থান হারাচ্ছে। পাখিদের প্রেম আর জমছেই না। পাখিরা যে গান শুনে বা বুলি শুনে ছুটে এসে সঙ্গী বেছে নিত, সেই প্রক্রিয়াই এখন বাধা পাচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্কের যুগে।
তাই প্রেমিকের বাড়ির ঠিকানা খুঁজেই পাচ্ছে না প্রেমিকারা। পাখিদের মিলনেও বাধা পড়ছে। তাদের সংসার ভাঙছে।
পাখিদের বিচ্ছেদের জন্য মানুষের কাণ্ডকারখানাকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা। বন-জঙ্গলের গাছ কেটে কংক্রিটের বাড়ি উঠছে, এতে করে বাস্তুহারা হচ্ছে পাখিরা। মোবাইলের মাইক্রোওয়েভ রশ্মি, টাওয়ার থেকে ভেসে আসা তরঙ্গ ও গাড়ির আওয়াজে দিশাহারা হচ্ছে পাখিরা। পাখিরা ভাব বিনিময়ের পদ্ধতিই ভুলে যাচ্ছে।
এই গবেষণা আগামী পৃথিবীর কাছে এক অশনি সংকেতই বটে। গবেষকরা বলছেন, একটা সময় আসবে যখন পৃথিবী থেকে মুছে যাবে পাখির গান। হারিয়ে যাবে সমস্ত সুরেলা পাখিরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।