জুমবাংলা ডেস্ক : অর্থ পাচারকারীরা শয়তানের মতো। তারা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেন। আবার সেই টাকা প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স হিসেবে দেশে ঢুকিয়ে সরকারের প্রণোদনা হাতিয়ে নেন। এভাবেই তারা রেমিটেন্স যোদ্ধা বনে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন, দুদক কমিশনার মিঞা আলী আকবার আজিজী। এহেন কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, কাউকেই ছাড়া হবে না।
পাচার করা টাকায় দুবাইয়ে সম্পদ গড়েছেন ৪৫৯ জন বাংলাদেশি। গোল্ডেন ভিসার সুবিধা নিয়ে দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা টাকা সুইস ব্যাংকসহ বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে পাচারের মাধ্যমে ৯৭২টি সম্পদ কেনার তথ্য এসেছে দুদকের হাতে।
দুবাইয়ে যারা টাকা পাচার করে সম্পদ গড়েছেন তাদের আয়কর নথিসহ বিভিন্ন তথ্য চেয়ে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে দুদক। পাচার হওয়া টাকায় দুবাই ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিপুল সম্পদের তথ্য আছে দুদকের কাছে।
এই তালিকায় আছেন পতিত সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও বেশ কয়েক জন আমলা। বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করে এসব দেশে তারা গড়ে তুলেছেন সেকেন্ড হোম।
অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, ২০০৯ থেকে ২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ লাখ কোটি টাকা। প্রতিবছর গড়ে পাচার হয়েছে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।
পাচারের এই অংক বিশাল হলেও, দেশে ফিরিয়ে আনা টাকার অংকটা প্রায় তলানিতে।দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের কমিশনার মিঞা আলী আকবার আজিজী জানান, নতুন কমিশন পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। তবে স্বীকার করেন, পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনাটা সহজ নয়।
দুর্নীতিবাজরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করে সেই টাকা আবার প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে ঢুকিয়ে সরকারের প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই অপরাধীরা উল্টো রেমিটেন্স যোদ্ধা বনে যাচ্ছে। এমন কর্মকাণ্ডে জড়িতদের আর ছাড় দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দুদকের এই কমিশনার।
আলি আকবার আজিজী বলেন, পাচারকারীরা হচ্ছে শয়তানের মতো। শয়তান শিরা-উপশিরায় যায়, তাকে দেখা যায় না। শয়তানের কর্মকাণ্ড, দুর্ভোগ মানুষ ভোগ করে। পাচারকারীদের জন্য আমরা দুর্ভোগ ভোগ করছি। পাচারকারীকে যদি আমার কোনো না কোনোভাবে ধরতে পারি, আমরা ছাড় দেব না।
টিউলিপ সিদ্দিক গণমাধ্যমে যেসব কথা বলেছেন, সেগুলোর জবাব ইতিমধ্যে দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আকবার আজিজী। তিনি বলেন, জবাব হলো এই যে বাংলাদেশের আদালতে এসে তিনি নিজেকে ডিফেন্ড) করবেন। কোনো কারণে তিনি না এলেও আদালতে বিচার চলবে।
দুদকের পক্ষ থেকে টিউলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে দুদকের এই কমিশনার বলেন, না না, কেন যোগাযোগ করা হবে, আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ কীভাবে করব? তার নির্ধারিত ঠিকানাতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তার তো ঠিকানা আছে একটা। ইতিমধ্যে সেখানে নোটিশ গেছে। কেউ রিসিভ (গ্রহণ) করেছে কি না, তা জানি না। দুদক বিচারপ্রক্রিয়া কোর্টে দিয়ে দেবে। কোর্ট বিচার করবে।
অর্থ পাচার রোধে দুদকের টাস্কফোর্স কী করছে জানতে চাইলে মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, ‘নিবিড়ভাবে যোগাযোগ চলছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। দুদকের একার পক্ষে অর্থ ফেরত আনা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা এর সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রসঙ্গে দুদকের এই কমিশনার বলেন, আমাদের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কোনো গন্ধ যদি পাই, তাহলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। আগে আমরা শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থায় যাচ্ছি। নিশ্চিতভাবেই তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।
দুদকের ‘ক্যামেরা’ যত দূর সম্ভব বিস্তার করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের আমরা রদবদল করছি, মফস্বললে যারা চৌকস কর্মকর্তা আছে, তাদের প্রধান কার্যালয় আনছি। যারা ঝিমুচ্ছে, তাদেরকে মফস্বলে পাঠাচ্ছি। যাদের কাজে শিথিলতা দেখছি, তাদেরকে মফস্বলে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে, অর্থপাচার ও শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগে ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিবের তথ্য চেয়ে সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বরে জানিয়েছেন, দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
এদিন, প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।