পর্যাপ্ত পানিতে একটা ডিম সেদ্ধ হতে মোটামুটি ৫-১০ মিনিট সময় লাগে। তবে আপনি চাইলে সময়টা কমিয়ে আনতে পারেন। সে জন্য পানিতে লবণ মেশাতে হবে! কথাটা অবাক শোনালেও সত্যি। চাইলে নিজের বাসায় পরীক্ষাটা করে দেখতে পারেন। হোটেল বা রেস্তোরাঁর শেফরা প্রায়শই এ কাজটি করেন, যাতে দ্রুত খাবার পরিবেশন করা যায়। প্রশ্ন হলো, লবণে কী এমন জাদু আছে, যাতে গরম পানিতে দ্রুত সেদ্ধ হয়? এর পেছনের বিজ্ঞানটা আসলে কী?
অনেকে মনে করতে পারেন, লবণে হয়তো এমন কিছু আছে, যা পানিতে মেশালে পানির স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। ফলে দ্রুত সেদ্ধ হয়। কিন্তু বাস্তবে ঘটনা ভিন্ন। সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাবার লবণ মোটেও পানির স্ফুটনাঙ্ক কমায় না, বরং বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ সাধারণ পানি যেখানে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাষ্প হতে শুরু করে, সেখানে লবণ পানির বাষ্পে পরিণত হতে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি প্রয়োজন। কত বেশি প্রয়োজন তা নির্ভর করে পানি ও লবণের অনুপাতে ওপর।
শুধু তাই না, পানিতে লবণ মেশানোর পর পানির আপেক্ষিক তাপও কমে। একক ভরের কোনো বস্তুর তাপমাত্রা এক কেলভিন বাড়াতে যে তাপ বা শক্তির প্রয়োজন তাকে ওই বস্তুর আপেক্ষিক তাপমাত্রা বলে। সাধারণ পানির ক্ষেত্রে এই শক্তির পরিমাণ ৪.২ জুল পার গ্রাম পার সেলসিয়াস (J/g °C)। অর্থাৎ, এক গ্রাম পানির তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়াতে ৪.২ জুল পরিমাণ তাপশক্তি দরকার। কিন্তু পানিতে যত বেশি লবণ মেশাবেন, তত কমবে এই শক্তির পরিমাণ। মানে লবণ মেশানো পানিতে অল্প শক্তিতে বেশি তাপমাত্রা পাওয়া যায়!
বিষয়টা কি গোলমেলে লাগছে? লবণ আসলে কী করছে? একবার সে পানির স্ফুটনাঙ্ক বাড়িয়ে পানিকে বলছে, তুমি বেশি তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিণত হবে। অন্যদিকে আবার বলছে, অল্প শক্তি নিয়েই তুমি নিজের তাপমাত্রা বাড়িয়ে ফেলবে! বিষয়টা সাংঘর্ষিক বটে। তবে শেষ পর্যন্ত উপকারটা আমাদেরই হচ্ছে। একটু পরে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে।
বিশুদ্ধ পানিতে লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড মেশালে পানির রাসায়নিক ধর্মের কোনো পরিবর্তন হয় না। লবণ দ্রবীভূত হয়ে পানিতে সোডিয়াম (Na+) ও ক্লোরাইড (Cl–) আয়ন হিসেবে মিশে যায়। এগুলো খুব ছোট ছোট কণার মতো পানিতে বিচরণ করে। ফলে সার্বিকভাবে ঘনত্ব বেড়ে যায়। বদলে যায় পানির বস্তুগত বা ভৌত ধর্ম। বিপরীত ধর্মী দুটি আয়নের কারণে পানির তাপ পরিবহন ক্ষমতা একদিকে বাড়ে।
ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণে কমে যায় স্ফুটনাঙ্ক, অর্থাৎ দেরিতে বাষ্পে পরিণত হয়। পুরো দ্রবণের আপেক্ষিক তাপ ধারণ ক্ষমতাও বেড়ে যায় এই বস্তুগত ধর্ম পরিবর্তনের কারণে। ফলে অল্প তাপে পানি দ্রুত বেশি তপ্ত হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে পানিতে থাকা ডিম বা সবজি দ্রুত সেদ্ধ হয়!
তবে সাধারণ পানি ও লবণ পানিতে সেদ্ধ হওয়ার সময়ের পার্থক্য ভালোভাবে বুঝতে হলে পানিতে যথেষ্ট পরিমাণ লবণ মেশানো প্রয়োজন। অল্প লবণ মেশালে সময়ে পার্থক্যটা হয়তো বুঝতে পারবেন না।
পেশাদার রাঁধুনিরা সাধারণত প্রতি লিটার পানিতে ৩ চা চামচ লবণ মেশান। এই পরিমাণ লবণ অবশ্যই সেদ্ধ হওয়ার সময় কমিয়ে আনে। তবে সেটা কয়েক সেকেন্ডের বেশি নয়। দৃশ্যমান পার্থক্য দেখতে চাইলে অন্তত পানির পরিমাণের ২০ শতাংশ লবণ মেশানো উচিত।
ধরা যাক, ‘ক’ পাত্রে আমরা ১০০ গ্রাম পানি নিলাম। ‘খ’ পাত্রে নিলাম ৮০ গ্রাম পানি ও ২০ গ্রাম লবণ। কী ঘটবে? ‘ক’ অর্থাৎ শুধু পানির পাত্রটিতে পানির আপেক্ষিক তাপ বেশি হওয়ায় পানি ফুটতে বেশি তাপশক্তি লাগবে (যদিও পানির স্ফুটনাঙ্ক এক্ষেত্রে কম)। অন্যদিকে আপেক্ষিক তাপ বেশি হওয়া ‘খ’ পাত্রের পানির তাপমাত্রা বাড়বে তুলনামূলক অল্প তাপশক্তিতে। ‘ক’ পাত্রের তুলনায় অন্তত ২৫ ভাগ কম সময়ে ‘খ’ পাত্রের পানি গরম হবে।
এমনটা দাবি করেছে কানাডাভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘থার্মটেস্ট’-এর এক প্রবন্ধে। প্রতিষ্ঠানটি তাপীয় পরিবাহিতা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে প্রায় দুই দশক ধরে। দ্রুত গরম হওয়া এই পানিতে সেদ্ধ করা কোনো খাবার খাওয়ার উপযোগী থাকবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য সন্দেহ আছে। কারণ, ২০ শতাংশ লবণের কারণে তাতে সেদ্ধ করা খাবার হবে অতিরিক্ত লবণাক্ত। চাইলে নিজের বাসায় পরীক্ষাটি করে দেখতে পারেন। তবে খুব সাবধানে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।