জুমবাংলা ডেস্ক: চোখের সামনে বিভিন্ন রকমের তাজা সাপ, ইঁদুর, ব্যাঙসহ পোকামাকড় চিবিয়ে খাচ্ছেন-এমন দৃশ্যের কথা ভাবুন তো। এমন ভাবনা অকল্পনীয়। কিন্তু পাবনার একরাম প্রামানিক এভাবেই খেয়ে চলেছেন তাজা সাপ, ব্যাঙ, বিচ্চুসহ নানা রকমের পোকামাকড়। ডিসকভারি চ্যানেল দেখে তিনি এসব খাওয়া শিখেছেন ও রপ্ত করেছেন। এ কারণে সবার কাছে তিনি এখস ‘ডিসকভারি আকরাম’ নামে পরিচিত।
পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের ঘোড়াদহ গ্রামের মৃত জব্বার প্রামানিকের ছেলে একরাম প্রামানিক (৫০)। চার কন্যা সন্তানের জনক পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অন্য দুই মেয়ে লেখাপড়া করছে। নিজ পেশা ছেড়ে বর্তমানে তিনি পোকামাকড় খাওয়ায় মত্ত হয়ে উঠেছেন।
সরেজমিনে একরাম ওরফে আকরামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আকরামের পোকামাকড় খাওয়া দেখতে ভিড় করেছেন উৎসুক মানুষ। কিছুক্ষণ পর তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আগে থেকে ধরে রাখা তাজা সাপ, কেঁচো, ব্যাঙ, তাজা বোয়াল ও টাকি মাছ, কুঁচে মাছ, ইঁদুর, কাঁকড়া খেয়ে দেখান। সব পোকামাকড় থেকে একটু একটু করে খেয়ে দেখান উপস্থিত সবাইকে। এ সময় সবাই হতবাক হয়ে যান।
আলাপকালে ডিসকভারি আকরাম বলেন, ‘জীবনের শুরুটা কাঠমিস্ত্রি হিসেবে হলেও মাঝপথে এসে আমি এন্টেরিয়রের কাজে সম্পৃক্ত হই। বিয়ে করেছি ৩০ বছর আগে।’
তিনি বলেন, ‘২০০২ সালে একটি সাদাকালো টেলিভিশন কিনে দেখা শুরু করি ডিসকাভারী চ্যানেল। সেখানে নিয়মিত দেখতে থাকি বিদেশিদের পোকামাকড় খাওয়ার দৃশ্য। এরপরই ২০০৩ সালে তাজা কাঁকড়া খাওয়া শুরু করি। এরপর পর্যায়ক্রমে কেঁচো, কাঠের পোকা, সাপ, কুচিয়া, তেলাপোকা, ইদুঁর, বিভিন্ন প্রজাতির কাঁচা মাছ, গবরের পোকা, শামুক, ঝিনুকসহ নানা পোকামাকড় খাওয়া আয়ত্ব করি। এখন আমি যেকোনো কিছুই তাজা ও কাঁচা খেতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পোকামাকড় খেয়ে শরীরে কোনো রোগ বালাই বা পাশ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি এসব পোকামাকড় খেতে পারি। কোনো সমস্যা হয় না।’
ডিসকভারি আকরাম বলেন, ‘এলাকায় কাঠ মিস্ত্রির কাজ ছেড়ে এক সময় চলে যাই ঢাকায়। সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশন কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান বিচারপতির ভবন, এনএসআই কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় এন্টিরিয়রের কাজ করেছি। বর্তমানে সব কাজকর্ম ছেড়ে এই পোকামাকড় খাওয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছি। অভাবেব সংসারটি চালাতে স্বজনসহ আশপাশের মানুষ সহায্য করে। পোকামাকড় খাওয়ায় এখন আমি পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।’
ডিসকভারি আকরামের দাবি, তিনি একজন দিন দরিদ্র মানুষ। খুব কষ্টে তার সংসার চলে। দুটো কন্যার বিয়ে দিয়েছেন। আরও দুই কন্যা রয়েছে। তারা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়ালেখা করে। নিজের ক্ষমতা নেই একটি স্মার্ট বা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার। সরকারি বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং সঠিক গাইড লাইন পেলে তিনি দেশ বিদেশে আলোড়ন তুলতে পারবেন। বিদেশিদেরকেও দেখাতে চাই বাঙালিরাও পারে।
ডিসকভারি আকরামের স্ত্রী মুর্শিদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের ৩০ বছরের সংসার জীবন। ২০/২২ বছর আগে তাকে এই নেশায় ধরে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি পোকামাকড় খাওয়া চ্যানেল দেখে এটা অভ্যাস করতে থাকেন। এটা এখন তার ধ্যান জ্ঞানে পরিণত হয়েছে। পোকামকড় খাওয়া নিয়ে আমার স্বামীর বা আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
জয়পুরহাট থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল বারী ও ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, লোকমুখে শুনে দেখতে এসেছি। বিষয়টি অবিশ্বাস্য ভেবেই দেখতে এসে তার সত্যতা পেলাম। মানুষ যে ইচ্ছে করলেই সব পারে, এটাই একটা উদাহরণ।
প্রতিবেশি শহীদ মন্ডল বলেন, ‘একটা আজব মানুষ। গোবরের পালা থেকে পোকা, কাঠের পোকা, কেঁচো থেকে শুরু করে সব ধরনের পোকা খাওয়ায় বেশ পারদর্শীতার পরিচয় দিয়েছে আকরাম।’
স্থানীয় কৃষক মন্ডল বলেন, ‘বললে গল্প বলা হয়। বাস্তবে বিশ্বাস করতে দেখতে হবে। আসলেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে আকরাম।’
ডিসকভারী আকরামের মামাতো ভাই শাহীন মৃধা বলেন, ‘লোক মুখে প্রথম শুনেছি। এখন সরাসরি দেখি। অনেক পোকামাকড় আমি নিজেই ধরে এনে দেই। এর মধ্যে এক ধরণের আনন্দ উপভোগ করি। তেমনি অবাকও হয়ে যাই এই কাজ সাধ্যের মধ্যে আনায়। এটা কিভাবে সম্ভব করলো ভাবতেই পারি না।’
পাবনার বেসরকারি সিমলা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডা. সরোয়ার জাহান ফয়েজ বলেন, ‘আগের যুগে মানুষ বিভিন্ন প্রাণী কাঁচা খেতো। যুগের পরিবর্তন আর স্বাদের জন্য রান্না করে খায়। গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি ছাড়া তেমন ক্ষতি হয় না মানবদেহের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘এগুলো একটু ব্যতিক্রমী। তবে এ কাজ করার আগে নিজের মনের মধ্যে সেই অনুভূতি সংরক্ষণ করতে হয়। যা সে রপ্ত করতে পারে জন্য এটা করাটা তার জন্য আহামরি কিছু নয়। নিজেকে জাহির করার জন্য আজকাল মানুষ অনেক কিছুই করে। যদি তিনি সেই লক্ষ্যে করেন, তাহলে তাকে সেই পরামর্শ দেওয়া দরকার যে কোন প্রাণীর শরীরের কতোটুকু খাওয়া যাবে, কতোটুকু খাওয়া যাবে না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।