গোপাল হালদার, পটুয়াখালী: যান্ত্রিকতা ও আধুনিকতার ছোয়ায় মানুষ এখন পেশি শক্তিকে কাজে না লাগিয়ে যতটা আরাম আয়েশে কাজ করা যায় মানুষ এখন সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে যানবাহনের ক্ষেত্রেও। রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা এমনভাবে বেড়েছে যে পটুয়াখালী জেলায় পায়ে চালিত রিকশা এখন আর খুঁজে পাওয়াই যায় না।
মহামারীতে কর্মহীন হয়ে পড়া কম শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষত কিংবা দিনমজুরের কাজ করা লোকেরাই এখন বেশিরভাগ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলেও এটাই এখন কর্ম হারানো মানুষের প্রথম পছন্দ। কারো কারো মতে অলস মানুষের পেশা হিসেবে ব্যাটারিচালিত রিকশাই বেশি পছন্দ।
এদিকে, পটুয়াখালী সদরসহ সকল উপজেলায় অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্করা ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। তবে অটো রিকশা চালকদের ভাষ্য, করোনাকালীন সময়ে চাকরি হারালেও ব্যাটারিচালিত রিকশার চালিয়ে কোন রকম খেয়ে পড়ে বেঁচে আছেন তারা।
এখন শোনা যায় না হারিয়ে যাওয়া প্যাডেল রিকশার টুং টাং বেলের শব্দ, যার প্যাডেল ঘুরিয়ে চলতো শতশত শ্রমজীবি মানুষের সংসার। এক সময়ে পটুয়াখালী জেলার সকল উপজেলাতেই একমাত্র যানবাহন ছিল এই প্যাডেল রিকশার।
সূত্রমতে, ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা আসার পর পায়ে চালিত রিক্সার জায়গা পুরোটাই দখল করে নিয়েছেন তারা। বছর তিন চারেক আগেও পটুয়াখালী শহরের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল রিকশা। বর্তমান সময়ে পটুয়াখালী চৌরাস্তা, কলাতলা ও নিউমার্কেট এলাকায় মাঝেমধ্যে হাতেগোনা একটা দু’টা পায়ে চালিত রিকশা দেখা যায়। যে দু’একটি দেখা যায় সেগুলোও হয়ত অল্প দিনের মধ্যেই হারিয়ে যাবে। অথচ এক সময় পটুয়াখালী শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও আনাচে কানাচে দেখা যেত এই রিকশা। কিন্তু বর্তমান সময়ে নগরীসহ গোটা জেলা জুড়েও খুব একটা দেখা মেলেনা প্যাডেল রিকশার।
নগরীর মধ্যে যে সকল প্যাডেল চালিত রিকশা চলাচল করে সেগুলোর চালকরাও বেশ বয়স্ক। তারা তাদের পেশি শক্তি দিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারেন না যাত্রীদের।
হাশেম কাজি (৬৫) বলেন, ‘মুই এই ৩৬ বছর ধরে রিক্সা চালাই। প্রায় বুড়া হইছি, মোগো কি অটোরিকশা কেনার টাকা আছে? তাই বাধ্য হয়ে পায়ে চালিত রিকশা চালাইয়া দৈনিক আয় হয় দু’শত থেকে আড়াইশত টাকা। এ দিয়ে কোনো মতে সংসার চালাই।’
আব্দুল রহিম (৫৭) বলেন, ‘নিত্য নতুন প্রযুক্তির ফলে মোগো এহোন আর যাত্রী হয় না। অটোরিকশা আসার কারণে মানুষ এখন আর আমাদের পায়ে চালিত রিকশায় উঠতে চায় না। মুই এই ৩০ বছর ধইরা পায়ে চালিত রিকশা চালিয়ে আসছি এই পেশা ছাইরা অন্য কোনো পেশায় যামু সেটার ও উপায় নাই।’
পটুয়াখালী জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ত্রিচক্রের এ যান একটি পরিবেশ বান্ধব রিকশা। হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন অর্থের অভাবে অটোরিকশা ক্রয় ক্ষমতা না থাকায় অনেকে প্যাডেল চালিত রিকশা চালাতে দেখা যায়।
‘আমরা যখন সাংবাদিকতা শুরু করি তখন পটুয়াখালী শহরে রিকশাতেই ঘুরে বেড়াতাম। সেই সময় আমাদের মোটরসাইকেল ছিল না। মানুষের মধ্যে বর্তমানে অলসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অটো চালকরা পায়ের উপর পা তুলে অটো চালায়। এতে দুর্ঘটনাও ঘটে। কিন্তু বর্তমানে শহরে যে পরিমান ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা চলাচল করে তাতে এই শহর থেকে রিকশা বিলুপ্তি হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র,’ যোগ করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।