ধীরে, খুব ধীরে, মাসের শেষে হাতে টাকা থাকেনা বললেই চলে। বেতন এলেই যেন দৌড়ে পালায়, বিল, বাজার, জরুরি খরচ – সবাই যেন টানাটানি। এই চেনা ছবিটা কি আপনারও? কিন্তু ভাবুন তো, যদি একটা সহজ উপায় থাকত, প্রতিদিনের ছোট ছোট সঞ্চয় জড়ো করে এক সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার? যেখানে আপনার হাতের স্মার্টফোনটাই হয়ে উঠবে আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত আর্থিক সঙ্গী? হ্যাঁ, বাংলাদেশে দ্রুত বাড়ছে পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে সঞ্চয় করার প্রবণতা। বিকাশ, নগদ, রকেট, ডাচ্-বাংলা রকেটের মতো অ্যাপগুলো শুধু টাকা পাঠানো বা বিল দেওয়ার মাধ্যম নয়; এগুলো এখন শক্তিশালী সঞ্চয়ের হাতিয়ার। কিন্তু শুধু অ্যাপ ডাউনলোড করলেই হবে না, জানতে হবে সঞ্চয় বাড়ানোর সহজ উপায়গুলো। এই লেখায়, আমরা শিখব কিভাবে আপনার দৈনন্দিন অভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন এনে এবং পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপের স্মার্ট ব্যবহার করে আপনি কীভাবে নিজের আর্থিক ভিত মজবুত করতে পারেন, ধাপে ধাপে।
পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে কিভাবে সঞ্চয় বাড়াবেন? ১০টি কার্যকরী কৌশল
পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে সঞ্চয় বাড়ানোর সহজ উপায় খুঁজে বের করার প্রথম ধাপ হলো অ্যাপটির পূর্ণ সক্ষমতাকে কাজে লাগানো। শুধু টাকা রাখা নয়, বরং সেটিকে বাড়ানোর কৌশল জানা জরুরি। বাংলাদেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ২০ কোটিরও বেশি ছাড়িয়েছে (সূত্র: বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন – BTRC)। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীর কতজন সত্যিকার অর্থে অ্যাপটিকে সঞ্চয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন? চলুন জেনে নিই কিছু প্রমাণিত ও বাস্তবসম্মত কৌশল:
“অটো-সেভ” বা স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় ফিচার ব্যবহার করুন: এটি সঞ্চয় বাড়ানোর সহজ উপায় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। বেশিরভাগ পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে (যেমন: বিকাশের ‘অটো সেভ’, নগদের ‘সেভ বক্স’, রকেটের ‘সেভিং পট’) এই সুবিধা আছে।
- কিভাবে কাজ করে: আপনি নির্ধারণ করে দেবেন, যখনই আপনার ওয়ালেটে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আসবে (যেমন: বেতন পাওয়ার পর), অথবা প্রতি সপ্তাহ/মাসে একটি নির্দিষ্ট তারিখে, অ্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি আগে থেকে সেট করা পরিমাণ টাকা আপনার মূল ব্যালেন্স থেকে আলাদা সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা পটে জমা করে দেবে।
- কেন কার্যকর: “চোখের আড়াল, মনোর আড়াল” নীতির মতো। টাকা আলাদা হয়ে যাওয়ায় খরচের প্রলোভন কমে। সঞ্চয়টি নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে।
- পরামর্শ: ছোট করে শুরু করুন। মাসে ৫০০ টাকা দিয়েও শুরু করতে পারেন। ধীরে ধীরে বাড়ান।
“রাউন্ড-আপ” সেভিংসে অভ্যস্ত হোন: এই ইনোভেটিভ পদ্ধতিটি পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে সঞ্চয়কে গেমের মতো মজাদার করে তোলে।
- কিভাবে কাজ করে: ধরুন, আপনি ১৭০ টাকার একটি পণ্য কিনলেন। অ্যাপটি এই লেনদেনটিকে ২০০ টাকায় রাউন্ড আপ করবে (নিকটতম ১০ বা ৫০ বা ১০০ টাকায়, অ্যাপভেদে)। অতিরিক্ত ৩০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার সঞ্চয় পটে চলে যাবে।
- কেন কার্যকর: ছোট ছোট অংক, যা প্রায় অনুভবই হয় না, জড়ো হয়ে বড় অংক তৈরি করে। দৈনন্দিন কেনাকাটার সঙ্গেই সঞ্চয় জড়িয়ে যায়।
- উদাহরণ: দিনে গড়ে ৫টি লেনদেন হলে এবং গড় রাউন্ড-আপ ২০ টাকা হলে, মাসে জমা হতে পারে প্রায় ৩,০০০ টাকা! (৫ লেনদেন/দিন ২০ টাকা ৩০ দিন)।
নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন (গোল-ওরিয়েন্টেড সেভিংস): সঞ্চয় বাড়ানোর সহজ উপায় গুলো তখনই কার্যকর হয় যখন একটি পরিষ্কার উদ্দেশ্য থাকে।
- কিভাবে করবেন: অ্যাপে (যেমন: বিকাশের ‘মাই গোল’, নগদের ‘সেভিংস গোল’) আলাদা আলাদা সেভিংস পট তৈরি করুন ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যের জন্য। যেমন: ‘জরুরি তহবিল’, ‘বাড়ির ডাউন পেমেন্ট’, ‘ছুটির টাকা’, ‘নতুন ফোন’।
- কেন কার্যকর: প্রতিটি পট দেখে আপনি আপনার অগ্রগতি ট্র্যাক করতে পারবেন, যা প্রেরণাদায়ক। টাকা আলাদা থাকায় ভুল করে অন্য খাতে খরচ হওয়ার ভয় কমে।
- বিশেষজ্ঞের মতামত: অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, “লক্ষ্যভিত্তিক সঞ্চয় মানুষের মনস্তাত্ত্বিকভাবে আর্থিক শৃঙ্খলা আনতে সাহায্য করে। একটি নামকরণ করা তহবিলে টাকা জমানো অনামা জমানোর চেয়ে অনেক বেশি টেকসই।”
ডিজিটাল “ক্যাশব্যাক” ও অফারকে কাজে লাগান: পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপ দিয়ে বিল পরিশোধ বা শপিং করলে প্রায়ই ক্যাশব্যাক বা ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।
- কৌশল: এই অতিরিক্ত টাকা বা সঞ্চয়কে সরাসরি খরচ না করে আপনার অ্যাপের সেভিংস পটে ট্রান্সফার করুন। ধরুন, মোবাইল বিল দিয়ে ২০ টাকা ক্যাশব্যাক পেলেন, সেটি সাথে সাথে সেভিংসে ফেরত দিন।
- কেন কার্যকর: এটা একপ্রকার বোনাস সঞ্চয়। আপনি যা খরচ করতেনই, তার উপর অতিরিক্ত কিছু জমা হচ্ছে। মাসের শেষে এই ছোট ছোট ক্যাশব্যাক জড়ো হয়ে উল্লেখযোগ্য হতে পারে।
“নো-স্পেন্ড” চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন: এটি মনস্তাত্ত্বিকভাবে শক্তিশালী একটি অনুশীলন।
- কিভাবে করবেন: সপ্তাহে ১ দিন বা মাসে ২-৩ দিন এমন দিন বেছে নিন যেদিন আপনি শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় খরচ (খাবার, ওষুধ) ছাড়া কোনো অনাবশ্যক খরচ করবেন না (কফি, স্ন্যাকস, ফাস্ট ফুড, অনলাইন শপিং ইত্যাদি)। সেই দিন যেটুকু টাকা বেঁচে যায়, তা সাথে সাথে পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে সেভিংসে জমা দিন।
- কেন কার্যকর: এটি আপনার খরচের অভ্যাস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায় এবং দেখায় যে সামান্য সংযমই উল্লেখযোগ্য সঞ্চয়ের পথ দেখাতে পারে।
ছোট আয়ের উৎসকে ডিজিটালাইজ করুন: ফ্রিল্যান্সিং, পার্টটাইম কাজ, পুরানো জিনিস বিক্রি, উপহার হিসেবে পাওয়া টাকা – এসব ছোট ছোট আয় প্রায়ই দৈনন্দিন খরচে মিলিয়ে যায়।
- কৌশল: এই “অতিরিক্ত” টাকাগুলো সরাসরি আপনার পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপের সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা করুন। আলাদা করে ভাবার আগেই সঞ্চয়ে রূপান্তরিত করুন।
- কেন কার্যকর: এই টাকাগুলো আপনার নিয়মিত বাজেটের অংশ নয় বলে এগুলো জমা করলে আর্থিক চাপ অনুভূত হয় না, কিন্তু সঞ্চয় বাড়ে।
ডিজিটাল বাজেটিং টুলসের সাহায্য নিন (যদি থাকে): কিছু অ্যাপে বাজেট ট্র্যাকিং বা খরচের ক্যাটাগরি ভাগ করার সুবিধা থাকে।
- কিভাবে কাজে লাগাবেন: মাসিক আয় ও খরচের একটি রিয়েলিস্টিক বাজেট সেট করুন অ্যাপে। বিভিন্ন খাত (খাবার, পরিবহন, বিনোদন) এর জন্য লিমিট নির্ধারণ করুন। অ্যাপটি আপনার খরচ ট্র্যাক করবে এবং লিমিট ছাড়িয়ে গেলে নোটিফাই করবে।
- কেন কার্যকর: খরচ নিয়ন্ত্রণই সঞ্চয়ের মূল ভিত্তি। যেখানে খরচ কমবে, সেখান থেকেই সঞ্চয়ের সুযোগ তৈরি হবে। আপনি সহজেই দেখতে পাবেন কোন খাতে সংযম দেখালে মাসের শেষে কত টাকা বাঁচানো সম্ভব, এবং সেই টাকা সরাসরি সেভিংসে পাঠানো সম্ভব।
অ্যাপের মধ্যে উপলব্ধ সঞ্চয়পণ্য বুঝে নিন: শুধু সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখা নয়, কিছু পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপ মাইক্রো-সেভিংস বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগের সুযোগ দেয় যাতে সঞ্চিত টাকার উপর রিটার্ন পাওয়া যায় (যদিও সীমিত এবং ঝুঁকি বিবেচনা করতে হয়)।
- যেমন: বিকাশের ‘বিকাশ সঞ্চয়’ (বিকাশ অ্যাকাউন্টে জমা টাকার উপর ছোট সুদ), নগদ অ্যাপের মাধ্যমে ডিপিএস বা ক্ষুদ্র সঞ্চয় স্কিমে যোগ দেওয়া, রকেটের মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ (উচ্চতর ঝুঁকিসম্পন্ন)।
- কেন দেখবেন: সঞ্চিত টাকা যেন মুদ্রাস্ফীতির কাছে মূল্য না হারায়, সেজন্য কিছু রিটার্ন পাওয়া জরুরি। তবে, সুদের হার, লক-ইন পিরিয়ড, জরিমানা এবং ঝুঁকির মাত্রা ভালো করে জেনে-বুঝে, ছোট অংক দিয়ে শুরু করুন। এটি সরাসরি সঞ্চয় বাড়ানোর গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
- সতর্কতা: বিনিয়োগ সর্বদাই ঝুঁকিসম্পন্ন। শুধুমাত্র সেই টাকাই বিনিয়োগ করুন যা হারানোর সামর্থ্য আপনার আছে। সঞ্চয়ের নিরাপত্তাই প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত।
“১ টাকা সেভিংস” রুল প্রয়োগ করুন: এই সহজ কৌশলটি দৈনন্দিন খরচকে সঞ্চয়ে রূপান্তরিত করে।
- কিভাবে করবেন: প্রতিবার যখনই আপনি পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপ দিয়ে কোনো লেনদেন করবেন (বিল পেমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ, দোকানে পেমেন্ট – এমনকি ছোটখাটো), সেই লেনদেনের পরিমাণের সমান (অথবা অর্ধেক, বা যতটা সহজ মনে হয়) ১ টাকা অতিরিক্ত আপনার সেভিংস পটে জমা করুন।
- উদাহরণ: ৮৫ টাকার মোবাইল রিচার্জ করলেন? সাথে সাথে সেভিংসে জমা করুন ১ টাকা (বা ৮৫ টাকা যদি পারেন!)। ৩০০ টাকার ইউটিলিটি বিল দিলেন? জমা করুন ১ টাকা (বা ৩০০ টাকা!)।
- কেন কার্যকর: প্রতিটি খরচের সাথেই সঞ্চয়ের একটি ছোট্ট অ্যাকশন জড়িয়ে যায়। দিনে কয়েকটি লেনদেন করলেই এই ছোট ছোট ১ টাকাগুলো মাসে কয়েকশত টাকায় পরিণত হতে পারে। এটি সঞ্চয়কে অভ্যাসে পরিণত করে।
- নিয়মিত রিভিউ ও ট্র্যাকিং করুন: সেট-ইট-অ্যান্ড-ফরগেট-ইট নয়। পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে সঞ্চয়ের অগ্রগতি নিয়মিত মনিটরিং জরুরি।
- কিভাবে করবেন: সপ্তাহে বা মাসে একবার সময় নিন। দেখুন কত টাকা জমেছে, কোন পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো কাজ করছে, কোন লক্ষ্যের দিকে আপনি এগোচ্ছেন। প্রয়োজনে অটো-সেভের পরিমাণ বাড়ান, নতুন লক্ষ্য যোগ করুন, বা কৌশলে পরিবর্তন আনুন।
- কেন কার্যকর: এটি আপনাকে দায়বদ্ধ রাখে এবং প্রেরণা দেয়। অগ্রগতি দেখলে সঞ্চয় চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা বাড়ে। এটিই সঞ্চয় বাড়ানোর সহজ উপায় গুলোকে টেকসই করে তোলে।
স্মার্ট সঞ্চয়ের জন্য নিরাপত্তা ও সচেতনতা: আপনার টাকা সুরক্ষিত রাখুন
পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে টাকা জমানো যেমন সহজ, তেমনি নিরাপত্তার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঞ্চয় বৃদ্ধির সাথে সাথে ঝুঁকিও বাড়ে। তাই, সঞ্চয় বাড়ানোর সহজ উপায় অনুসরণের পাশাপাশি এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো মেনে চলা আবশ্যক:
- শক্তিশালী ও ইউনিক পিন/পাসওয়ার্ড: অ্যাপ লক, ট্রানজেকশন পিন – সবই যেন শক্তিশালী (অক্ষর, সংখ্যা, চিহ্নের মিশ্রণে) এবং অন্যান্য অ্যাকাউন্ট থেকে আলাদা হয়। নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
- দুই-ফ্যাক্টর প্রমাণীকরণ (2FA) সক্ষম করুন: যদি অ্যাপটি এই সুবিধা দেয় (যেমন: লগইনের সময় SMS OTP), অবশ্যই এটি চালু রাখুন। এটি অতিরিক্ত একটি নিরাপত্তা স্তর যোগ করে।
- ফিশিং ও স্ক্যাম থেকে সতর্ক থাকুন: কখনোই অজানা লিংকে ক্লিক করবেন না, অজানা নম্বর বা ইমেলের মাধ্যমে পাঠানো OTP, PIN বা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না। পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপ কোম্পানিগুলো কখনোই এভাবে তথ্য চাইবে না। সন্দেহজনক অফার (অতিরিক্ত ক্যাশব্যাক, পুরস্কার) এড়িয়ে চলুন।
- অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করুন: শুধুমাত্র গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন। তৃতীয় পক্ষের সোর্স বা লিংক থেকে ডাউনলোড করা অ্যাপে ম্যালওয়্যার থাকার ঝুঁকি থাকে।
- ডিভাইস সিকিউরিটি: আপনার ফোনে একটি নির্ভরযোগ্য অ্যান্টি-ভাইরাস/অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ইনস্টল রাখুন। অপারেটিং সিস্টেম এবং সমস্ত অ্যাপ আপ টু ডেট রাখুন (সিকিউরিটি প্যাচের জন্য)।
- পাবলিক Wi-Fi এ সতর্কতা: পাবলিক Wi-Fi নেটওয়ার্কে পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপ ব্যবহার করা বা গুরুত্বপূর্ণ লেনদেন করা থেকে বিরত থাকুন। এই নেটওয়ার্কগুলো হ্যাকারদের জন্য সহজ টার্গেট। প্রয়োজনে মোবাইল ডেটা ব্যবহার করুন অথবা একটি নির্ভরযোগ্য VPN ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত স্টেটমেন্ট চেক করুন: আপনার অ্যাপে লগ ইন করে নিয়মিত লেনদেনের হিসাব (স্টেটমেন্ট) চেক করুন। কোনো অস্বাভাবিক বা অনুমোদনহীন লেনদেন দেখলে সাথে সাথে অ্যাপ কাস্টমার কেয়ারে রিপোর্ট করুন এবং প্রয়োজনে অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে ব্লক করুন।
- বায়োমেট্রিক লক ব্যবহার করুন: ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে অ্যাপ আনলক করা PIN এর চেয়ে সাধারণত বেশি নিরাপদ এবং ব্যবহারেও সহজ।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (BCC) এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি (DSA) গুলো নাগরিকদের ডিজিটাল লেনদেনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়মিত গাইডলাইন ও সতর্কতা জারি করে। তাদের ওয়েবসাইটে (https://bcc.gov.bd/, https://dsa.gov.bd/) আপডেটেড তথ্য ও সচেতনতামূলক কন্টেন্ট পাওয়া যায়।
ডিজিটাল সঞ্চয়ের মানসিক সুবিধা: শুধু টাকা নয়, শান্তিও জমান
পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে সঞ্চয় বাড়ানোর সুবিধা শুধু আর্থিক নয়; এর গভীর মানসিক প্রভাবও রয়েছে। যখন আপনি প্রতিদিন ছোট ছোট সাফল্য দেখতে পান – অটো-সেভ কাজ করছে, রাউন্ড-আপ জমা হচ্ছে, আপনার ‘জরুরি তহবিল’ পট ধীরে ধীরে ভরছে – তখন এক ধরনের নিয়ন্ত্রণবোধ ও আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। আর্থিক অনিশ্চয়তার চাপ কমে আসে। একটি গবেষণা (সূত্র: আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন) ইঙ্গিত দেয় যে আর্থিক চাপ হ্রাস সরাসরি সামগ্রিক সুস্থতা এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে। সঞ্চয় বাড়ানোর সহজ উপায় গুলো অনুসরণ করে আপনি শুধু টাকাই জমাচ্ছেন না, ভবিষ্যতের জন্য এক ধরনের মানসিক নিরাপত্তাও গড়ে তুলছেন। জরুরি অবস্থা, স্বপ্নের ভ্রমণ বা ছোটখাটো ইচ্ছাপূরণের সামর্থ্য থাকা জীবনের মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
জেনে রাখুন (FAQs)
প্রশ্ন: পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে সঞ্চয় করা কি সত্যিই নিরাপদ?
উত্তর: বাংলাদেশে রেগুলেটরি সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর তত্ত্বাবধানে এমএফএস প্রোভাইডাররা (বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি) কাজ করে। আপনার জমাকৃত টাকা তাদের ব্যাংক পার্টনারদের সাথে নিরাপদ হিসাবে থাকে। তবে, আপনার ডিভাইস ও অ্যাকাউন্ট নিরাপত্তা (শক্তিশালী পিন, ফিশিং থেকে সতর্কতা) নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। নিরাপত্তা প্রোটোকল মেনে চললে পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে সঞ্চয় করা প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে কম নিরাপদ নয়।প্রশ্ন: সঞ্চয় বাড়ানোর সহজ উপায় গুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে কার্যকর?
উত্তর: “সবচেয়ে কার্যকর” পদ্ধতি ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। তবে, “অটো-সেভ” বা স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় প্রায় সকলের জন্যই অত্যন্ত কার্যকর কারণ এটি নিয়মিততা ও বাধ্যতামূলকতা নিশ্চিত করে। এটি মানবিক ভুল (ভুলে যাওয়া, প্রলোভন) কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। এরপরেই লক্ষ্যভিত্তিক সঞ্চয় (গোল-ওরিয়েন্টেড) এবং “রাউন্ড-আপ” সেভিংস এর স্থান। একাধিক পদ্ধতি একসাথে প্রয়োগ করলে ফলাফল সর্বোত্তম হয়।প্রশ্ন: আমি খুব অল্প আয় করি, মাসে ২০০-৫০০ টাকা সঞ্চয় করলে কি কোনো লাভ হবে?
উত্তর: একেবারেই হবে! পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে সঞ্চয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের শক্তি। মাসে মাত্র ৫০০ টাকা জমালেও বছরে তা ৬,০০০ টাকা হয়। ৫ বছর পর সেটি ৩০,০০০ টাকা (মূলধন)। যদি অ্যাপের সুবিধা অনুযায়ী সামান্য সুদও পেতে থাকেন, তবে তা আরও বাড়বে। গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়মিততা। ছোট সঞ্চয়ও জরুরি তহবিল গঠনে সাহায্য করে এবং সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলে, যা ভবিষ্যতে আয় বাড়ার সাথে সাথে বড় সঞ্চয়ে রূপ নেবে।প্রশ্ন: পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপ দিয়ে সঞ্চয় করলে টাকার উপর কি সুদ পাওয়া যায়?
উত্তর: সাধারণ সেভিংস পট বা ওয়ালেটে জমাকৃত টাকার উপর সুদ প্রযোজ্য নাও হতে পারে, অথবা সুদের হার খুবই নগন্য (বিকাশ সঞ্চয়ে সামান্য সুদ থাকে)। তবে, কিছু অ্যাপ সুবিধা দেয়:- মাইক্রো-সেভিংস স্কিম: ডিপিএস বা নির্দিষ্ট ক্ষুদ্র সঞ্চয় স্কিমের সাথে যুক্ত হতে পারেন, যেগুলোতে সাধারণত ব্যাংকের ডিপিএসের মতোই সুদ দেওয়া হয় (বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত হারে)।
- মাইক্রো-ইনভেস্টমেন্ট: মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটে বিনিয়োগের সুযোগ দেয় (যেমন: রকেটের মাধ্যমে), তবে এখানে সুদ নয়, বাজারের ওপর নির্ভর করে রিটার্ন (বা লোকসান) হতে পারে। ঝুঁকি বিবেচনা সাপেক্ষ।
সঞ্চয়ের প্রাথমিক লক্ষ্য নিরাপত্তা ও টাকা জমানো। রিটার্ন দ্বিতীয় ধাপের বিবেচনা।
প্রশ্ন: জরুরি তহবিল (ইমার্জেন্সি ফান্ড) কত টাকার হওয়া উচিত এবং তা পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে রাখা ভালো?
উত্তর: সাধারণ সুপারিশ হলো ৩ থেকে ৬ মাসের ব্যয়ভার সমপরিমাণ টাকা জরুরি তহবিল হিসেবে রাখা। পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে এই তহবিল রাখার সুবিধা হলো তাৎক্ষণিক প্রাপ্যতা (লিকুইডিটি)। তবে, বড় অংকের জরুরি তহবিলের একটি অংশ সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখাও বিবেচনা করতে পারেন। অ্যাপে রাখলে তা আলাদা সেভিংস পটে রেখে খরচের টাকা থেকে দূরে রাখুন, কিন্তু অ্যাক্সেসে সহজ রাখুন। নিরাপত্তা সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ।- প্রশ্ন: পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপ ব্যবহার করে সঞ্চয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুলটি কী?
উত্তর: সবচেয়ে বড় ভুল হলো নিয়মিততা না থাকা এবং সঞ্চয়কে অগ্রাধিকার না দেওয়া। টাকা বাঁচলেই সেটি সঞ্চয়ে না রেখে খরচ করে ফেলা। দ্বিতীয় বড় ভুল হলো নিরাপত্তা অবহেলা করা (দুর্বল পিন, ফিশিংয়ে পড়া)। তৃতীয়ত, বাস্তবসম্মত লক্ষ্য না থাকা বা অতিরিক্ত উচ্চাশা নিয়ে হতাশ হওয়া। ছোট শুরু করুন, নিয়মিত থাকুন, নিরাপত্তায় সচেতন হোন।
আজই আপনার হাতের স্মার্টফোনে থাকা সেই পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপটিকে খুলুন। অটো-সেভ সেট আপ করুন, একটা ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন, হয়তো শুধু ‘জরুরি তহবিল’ নামে একটা পট খুলুন। মনে রাখবেন, বিশাল সঞ্চয়ের যাত্রা শুরু হয় এক টাকা, পঞ্চাশ টাকা বা একশো টাকা দিয়েই। এই ছোট ছোট ডিজিটাল পদক্ষেপই একদিন আপনার আর্থিক চিন্তাকে হালকা করবে, স্বপ্নগুলোকে স্পর্শ করার পথ দেখাবে। পারসোনাল ফাইন্যান্স অ্যাপে সঞ্চয় বাড়ানোর সহজ উপায় গুলো শুধু কৌশল নয়, এগুলো আপনার আর্থিক ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করার, নিজের জন্য একটা ভালো কিছু গড়ে তোলার সুযোগ। শুরু করুন এখনই – কারণ, সঞ্চয়ের সবচেয়ে ভালো সময় হলো গতকাল, আর তারপরের সবচেয়ে ভালো সময় হলো আজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।