জুমবাংলা ডেস্ক : বগুড়ার ধুনটে আট বছরের শিশু মাহী উম্মে তাবাচ্ছুম হত্যা রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। বাবার সঙ্গে বিরোধের প্রতিশোধ নিতে তাকে গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।
এছাড়া হত্যাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে কাটার দিয়ে তার একটি আঙ্গুল কাটা হয়েছিল। গ্রেফতার কলেজছাত্রসহ চার বন্ধু পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। শনিবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা এ তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃতরা হল- বগুড়ার ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের নশরতপুর গ্রামের তোজাম্মেল হকের ছেলে স্থানীয় জিএমসি ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বাপ্পী আহমেদ (২২), একই গ্রামের দলিল উদ্দিনের ছেলে মুদি দোকানি কামাল পাশা (৩৫), সানোয়ার হোসেনের ছেলে রাজমিস্ত্রি শামীম রেজা (২২) ও মৃত সাহেব আলীর ছেলে রংমিস্ত্রি লাবলু শেখ (২১)।
ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নশরতপুর গ্রামের বেলাল হোসেন খোকন ও তার স্ত্রী মরিয়ম ডেইজি ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন। তাদের মেয়ে মাহী উম্মে তাবাচ্ছুম দাদা আবদুস সবুরের বাড়িতে থেকে স্থানীয় পাঁচথুপি-নশরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ত।
গ্রামের জান্নাতুল ফেরদৌস কবরস্থান চত্বরে দুই দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করা হয়। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই কবরস্থান কমিটি এ মাহফিলের আয়োজন করে। গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে শিশু তাবাচ্ছুম তার দাদা ও ফুফুর সঙ্গে প্রথম দিনের তাফসির শুনতে যায়। রাত ১০টার দিকে সে চিপস কিনতে মঞ্চের পাশের দোকানে গিয়ে নিখোঁজ হয়। রাত ১টার দিকে মঞ্চের কাছে বাঁশঝাঁড়ে তার বিবস্ত্র লাশ পাওয়া যায়।
গ্রেফতার কলেজছাত্র বাপ্পী আহমেদের সঙ্গে তাবাচ্ছুমদের পারিবারিক বিরোধ চলছিল। তাফসিরে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে থাকা বাপ্পী শিশুটিকে দেখতে পেয়ে প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করে। সে বাদাম কিনে দেয়ার প্রলোভনে তাবাচ্ছুমকে স্থানীয় হাজী কাজেম জুবেদা টেকনিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়।
সেখানে বাপ্পী তার তিন বন্ধু কামাল পাশা, শামীম রেজা ও লাবলু শেখ পালাক্রমে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শিশু তাবাচ্ছুম নিস্তেজ হয়ে যায়। এ সময় বাপ্পী তাকে গলাটিপে হত্যা করে। এছাড়া তাকে কোনো প্রাণী কামড়ে হত্যা করেছে এমন প্রমাণ করতে কাটিং প্লাস দিয়ে হাতের একটি আঙুল কেটে দেয়।
এরপর লাশটি কাঁধে তুলে মঞ্চের কাছে বাদশা মিয়ার বাঁশঝাঁড়ে ফেলে দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়। তার গোপনাঙ্গে রক্তক্ষরণ এবং বুকে, গালে কামড়ের দাগ ছিল। এদিকে শিশু মাহী তাবাচ্ছুম ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
খুনি ও ধর্ষকদের গ্রেফতারে গ্রামে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। ঘটনার পরদিন শিশুর বাবা বেলাল হোসেন খোকন ধুনট থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রিপন মিয়া জানান, বাপ্পীর সঙ্গে পারিবারিক বিরোধকে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করা হয়। সন্দেহভাজন বাপ্পী ও তার তিন বন্ধুকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। শুক্রবার রাতে প্রথমে বাড়ি থেকে শামীম রেজাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তিতে নিজ নিজ বাড়ি থেকে বাপ্পী, রেজা ও লাবলুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে চারজনই শিশু তাবাচ্ছুমকে ধর্ষণ এবং হত্যার কথা স্বীকার করে।
এদিকে চাঞ্চল্যকর শিশু মাহী উম্মে তাবাচ্ছুম ধর্ষণ ও হত্যা রহস্য উন্মোচন এবং আসামিরা গ্রেফতার হওয়ায় আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীর মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।