রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে: ছোট্ট শহর গাইবান্ধা। একপাশে বয়ে গেছে ঘাঘট নদ। অন্য তিনদিকে ব্যস্ত সড়ক। শহরের মাঝখানে ঠিক যেন হৃদপিণ্ড বরাবর স্বচ্ছ টলটল করছে এক সরোবর। শহরবাসীর কাছে এটি পার্কের দিঘি নামে পরিচিত।
গাইবান্ধা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই পুকুরে মুগ্ধ হয়েছিলেন প্রয়াত গীতিকার ও জ্যোতিষ শাস্ত্রবিদ কাওসার আহমেদ চৌধুরীও। ‘ছুটির দিনে’ সাময়িকীতে প্রকাশিত তাঁর রাশিফল কলামে লিখেছিলেন, শহরের বুকে এত সুন্দর সরোবর তিনি আর কোথাও দেখেননি।
শুধু কাওসার আহমেদ নন, পার্কের দিঘির প্রশান্তিতে মুগ্ধ এ শহরের ছোটবড় সবাই। সে কারণে শান্ত সকালে, দারুণ দুপুরে, ব্যস্ত বিকেলে, স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় কিংবা রাতের নির্জনতায় এ পুকুর মুখর থাকে গালগল্প আর আড্ডায়।
শহরের বাসিন্দা শাহাবুল শাহীন বলেন, পুকুরটি এ শহরের হৃদপিণ্ডস্বরূপ। এখানে এসে প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারেন সবাই। তাই কাজের ফাঁকে কিংবা অখণ্ড অবসরে এ সরোবর সবসময় সরগরম থাকে।
জেলা তথ্য বাতায়ন ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, ১৯২৪ সালে গাইবান্ধা পৌরপার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মাঝখানে খনন করা হয়েছে একটি দিঘি। এ কারণে এটি পার্কের দিঘি নামে পরিচিত। এটি শহরের ভেতর একমাত্র বিনোদনকেন্দ্র। এ পুকুরে মাছচাষও করা হয়।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের পাড়ে অনেকে বেড়াতে এসেছেন। দক্ষিণ পাড়ে এক শিশু তার নিজের জন্য কেনা খই ছড়িয়ে দিচ্ছে পুকুরে। সেগুলো খেতে জলের নিচে ভিড় জমিয়েছে মাছের ঝাঁক।
শিশুটি বলল, মাছকে খাওয়াতে তার ভালো লাগে। এ কারণে সে খই ছড়িয়ে দিচ্ছে।
পুকুরটির চারপাশে চারটি শানবাঁধানো ঘাট রয়েছে। মাঝে ফোয়ারা স্থাপন করা হলেও এখন তা বন্ধ। উত্তরপাশের ঘাট থেকে পুকুরে ঘুরে বেড়ানোর জলযান রয়েছে।
শনিবার গিয়ে দেখা যায়, উত্তর ঘাটে দুটি জলযান। একটি রাজহাঁস, আরেকটি মিকি মাউস আকৃতির। এর মধ্যে মিকি মাউসে করে পুকুরে ঘোরানো হচ্ছে। জলযানটিতে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও চড়ে বেড়াচ্ছেন।
জলযানটি পরিচালনা করছিলেন মো. শহিদ। তিনি জানালেন, এসব জলযান পৌরসভার তত্বাবধানে পরিচালিত হয়। পুকুরে এক চক্কর দিতে জনপ্রতি ২০ টাকা নেওয়া হয়। তিনিসহ দুজন পৌরসভার চাকরি করেন।
পুকুরের পূর্বপাশের ঘাটে আড্ডা দিচ্ছিলেন অনেকে। এ পাড়ের ফুটপাতে খুঁটিনাটি অনেক জিনিসের পসরাও বসিয়েছেন হকারেরা। কেউ কেউ বললেন, পাড়টি যেন হকারদের পুরো দখলে না যায়।
পশ্চিমঘাটে জিরাফ, জেব্রাসহ নানা প্রাণীর ভাস্কর্য রয়েছে। এ ঘাটেও অনেকে গালগল্প করছিলেন। ছিল তরুণ-তরুণীদের জুটিও।
এক জুটি জানায়, জায়গাটা নির্ঝঞ্ঝাট হওয়ায় এখানে আসতে ভালো লাগে।
জেলা তথ্য বাতায়ন ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে আরও জানা যায়, গাইবান্ধার সব আন্দোলন ও বিনোদনের মূল কেন্দ্র হলো পৌরপার্ক। আর পার্কের মাঝখানে খনন করা হয়েছে এই পুকুর। সে কারণে এটি শহরবাসীর বিনোদনের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
এই আকর্ষণ যেমন এড়াতে পারেননি গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরী, তেমনি এড়াতে পারেন না এখানে বেড়াতে আসা কোনো দর্শনার্থীই। শহরের ভেতর এমন স্বচ্ছ সরোবর গাইবান্ধা ছাড়া আর কোন শহরেই বা আছে?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।