জুমবাংলা ডেস্ক : বর্ডার থেকে ভারতে ঢুকতেই পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের মনগড়া কাহিনি বলাতে বাধ্য করছে ভারতীয় প্রচার মাধ্যমের প্রতিবেদকরা, এমন দাবি করছেন ভারতে সাক্ষাৎকার দেওয়া ফরিদপুরের নিলটুলী এলাকার হিন্দু যুবকের পরিবারের সদস্যরা।
ফরিদপুর শহরের নিলটুলী এলাকার গিণি ভবণের বাসিন্দা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুনীল কর্মকারের ছেলে শুভ্র কর্মকার গত রবিবার চিকিৎসার জন্য বেনাপোল পেট্রাপোলে বর্ডার হয়ে ভারতে যায়। সীমান্ত পেরিয়েই ভারতীয় প্রচার মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘দেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চলছে।’
এবিপি লাইভ নামের একটি ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত শুভ্র কর্মকারের সাক্ষাৎকারে শোনা যায়, ‘দেশে হিন্দুরা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দোকানপাট ভাঙচুর, মন্দির-শ্মশান পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা ইতিহাসে হয়নি। মা-মেয়েদের নির্যাতন করা হচ্ছে।’
রাতের বেলা ঘুমাচ্ছি সকাল বেলা দোকানে যেতে পারবে কিনা? কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারবে কিনা এমন আতঙ্ক আছে বলে বক্তব্য বলতে শোনা যায়। তাছাড়াও বর্তমানে চাল, ডালের দামে বৃদ্ধি ও গরিবের পেটে লাথি মারা হয়েছে এমন বক্তব্য সাক্ষাৎকারে শোনা যায়। দুই স্ক্রিনে শুভ্রর বক্তব্য ও বর্ডার দিয়ে বাঙালিরা আসছে এমন ৪৫ সেকেন্ডের একটি সাক্ষাৎকার পোস্ট করে ওই মিডিয়াটি।
এমন ঘটনায় বিস্মিত ফরিদপুরে বসবাসকারী তার বাবা-মা ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। পটপরিবর্তনের পর স্থানীয়রা এমন কোনো ঘটনার সত্যতা না দেখায় ওই যুবকের দেওয়া বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে ভৎর্সনা করে। ফরিদপুরে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে তার শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিজ সম্প্রদায়ের লোকেরা।
ওই যুবকের বাবা সুনীল কর্মকার জানান, গত রোববার ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার সময় বেনাপোল বর্ডার পার হওয়ার পর তার ছেলের পাসপোর্ট দেখার কথা বলে নিয়ে নেয়। তারপর দেশের পরিস্থিতি এমন বলে সাক্ষাৎকার নেয়।
ছেলের এই মিথ্যাচারে হতবাক হয়েছেন তিনি ও তার পরিবার। সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে দাবি করে শুভ্রর বাবা সুনীল কর্মকার বলেন, ‘পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে ছেলেকে এসব বলতে বাধ্য করেছে ওই লোকগুলা।’
নির্যাতন-নিপীড়ন নিয়ে ছেলে যা বলেছে তাদের পরিবারে ও এলাকায় এমন কিছুই ঘটেনি বলে উল্লেখ করেন শুভ্রর বাবা। বরং হিন্দু-মুসলিম সবার মিলেমিশে বসবাস করার কথা বলেন তিনি।
ফরিদপুর জেলা জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ঝিলটুলীস্থ নিবাসী নন্দ কুমার গড়াল বলেন, ‘ফরিদপুরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উৎকৃষ্ট উদাহরণ রয়েছে। ৫ আগস্টের পরে আমাদের সাথে এমন কিছুই ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ব্যবসা করে যাচ্ছি।’
বরং দলমতনির্বিশেষে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা তারা পাচ্ছে বলেও তিনি জানান।
নন্দ কুমার গড়াল আরও বলেন, ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টার কারণে শুভ্রর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা। পাশাপাশি ভারতীয় প্রচার মাধ্যমের প্রতি বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।’
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আসাদ উজ্জামান জানান, ৫ আগস্টের পর ফরিদপুরে হিন্দু কমিউনিটির ধর্মীয় উপসনালয়ের ওপর কোনো হামলা বা সহিংস ঘটনা ঘটেনি। শুভ্র ছেলেটি ভারতে গিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সে তার মনগড়া বক্তব্য দিয়েছে। মিথ্যা প্রপাগাণ্ডার অভিযোগে শুভ্র কর্মকারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
এদিকে, দ্য ওয়াল নামে আরেকটি চ্যানেলে এক তরুণীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে দুই মাস ধরে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অমীয় সরকার। ২০২১ সালের নভেম্বরে গঠিত জেলা ছাত্রলীগের কমিটির ৮নং সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। অমীয় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলা মামলারও আসামি।
স্থানীয় সনাতনীদের শত শত বছরের সম্প্রীতি রক্ষায় মিথ্যাচার না করে ভারতীয় প্রচার মাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান তাদের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।