জুমবাংলা ডেস্ক: ফেনীর সোনাগাজীতে ধর্ষণে অভিযুক্ত এক ব্যক্তির ছেলের বিরুদ্ধে নির্যাতিত গৃহবধূকে অপহরণের পর জোড় করে গর্ভপাত করানোর অভিযোগ উঠেছে। অপহরণের তিনমাস পর শনিবার রাতে ফেনী শহরের পূর্ব দেবীপুর এলাকার একটি বাসা থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করায় গত ৯ ডিসেম্বর ফেনীর আদালতপাড়া থেকে তিনি অপহরণের শিকার হন।
সোনাগাজী মডেল থানার উপ-পরির্দশক (এসআই) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফেনী পৌরসভার পূর্ব দেবীপুর এলাকার একটি বাসা থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারের পর ওই নারী পুলিশকে বলেন, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর কারাগার থেকে আমি বের হলে ধর্ষক জ্যাঠা শ্বশুরের ছেলে রিয়াদ হোসেন ও তার বন্ধু মোরশেদ আলম স্বপন আমাকে গাড়িতে করে একটি বাসায় নিয়ে আটকে রাখেন। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই-তিনদিন পরপর তারা দু’জনসহ আরও একজন মিলে আমাকে জোরপূর্বক ওষুধ খাইয়ে ও ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে আমার সন্তানকে মেরে ফেলেন। পরে আমার মৃত সন্তান প্রসব হয়। তখন আমি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। পরে তাকে ওই বাসায় বেধে রেখে সন্তানের লাশ নিয়ে যান তারা।
ওই গৃহবধূ বলেন, এরপর তারা আমাকে টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করাসহ বিভিন্ন ধরণের প্রলোভন দেখিয়ে টাঙ্গাইলে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় রেখে আসেন। সেখানে রিয়াদের একবন্ধু আমাকে বাজার করে দিতেন। আমি বাসা থেকে বের হতে পারতাম না। প্রায় দুইমাস পর আমি কৌশলে ওই বাসা থেকে বের হয়ে মুঠোফোনে আমার ছোট ভাইকে বিষয়টি বলি। পরে সে টাঙ্গাইলে গিয়ে গোপনে আমাকে ফেনী নিয়ে আসে।
এর আগে গত বছরের ২২ নভেম্বর সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের ছাড়াইতকান্দি গ্রামের বক্স আলী সুফি বাড়ির সফি উল্লাহর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই গৃহবধূ।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, ওই গৃহবধূর স্বামী দুই বছর আগে ওমান চলে যান। গত বছরের ১৮ জুন তার শাশুড়ি লাকি আক্তার নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। ওই দিন রাতে তিনি তার ৮ বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে শয়নকক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। এই সুযোগে রাতে তার শয়নকক্ষে ঢুকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করেন সফি উল্লাহ।
জানা গেছে, মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত শফি উল্লাহ ফেনীর আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। এসময় মামলার বাদিও একই আদালতে হাজির হন। বাদি আদালতে লিখিত আবেদনে এ মামলার আসামিকে জামিনের আপত্তি নেই বলে জানান। পরে মিথ্যা মামলা করার অভিযোগে আদালতের আদেশে বেঞ্চ সহকারী রবিউল ইসলাম বাদি হয়ে ওই নারীর বিরুদ্ধে ফেনীর আদালতে আরেকটি মামলা করেন। পরে মিথ্যা ধর্ষণের মামলা করায় বাদিকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত।
তবে উদ্ধারের গত সোমবার সোনাগাজী মডেল থানায় ধর্ষণ মামলার বাদী গৃহবধু পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, আমি লেখাপড়া জানি না। একজন আইনজীবী, রিয়াদ ও মোরশেদ মিলে আমাকে মামলায় সহযোগিতা করার কথা বলে একটি কাগজে আমার নাম লিখে নেয়। তারা আমাকে অনেক ধরণের ভয়ভীতি দেখিয়ে আদালতে হাজির করেন। আদালত আমাকে কারাগারে পাঠালে তারা আবার আমার জামিনের ব্যবস্থা করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রিয়াদ হোসেনের মুঠোফোনে একাধীকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার ব্যাবহৃত নাম্বারে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও কোন উত্তর দেননি।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, গর্ভের সন্তান নষ্ট ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভপাত করানোর অভিযোগে রিয়াদ এবং তার বন্ধু মোরশেদসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র: দৈনিক সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।