জুমবাংলা ডেস্ক : পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। সাত দিনের ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবারও বড় পতন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৮৪ পয়েন্টের বেশি। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৩৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে গেছে।
আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে না পারলে লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পুঁজিবাজারের শীর্ষ ব্রোকারদের নিয়ে গতকাল জরুরি বৈঠক করেছে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।
ডিএসইর মতো অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে সব কটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে।
এর মাধ্যমে টানা আট কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আর শেষ ২৪ কার্যদিবসের মধ্যে ২১ কার্যদিবসেই দরপতন দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এতে এক সপ্তাহেই ডিএসইর বাজার মূলধন ৪৯ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে যায়।
আর টানা চার সপ্তাহের পতনে বাজার মূলধন কমে ৭০ হাজার কোটি টাকার ওপরে এবং ডিএসইর প্রধান সূচক কমে ৫০০ পয়েন্টের ওপরে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৪১টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১৯টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স ৮৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮১৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের ২৩ মের পর সূচকটি সর্বনিম্ন অবস্থানে অবস্থান করছে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়া সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সব কটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৬৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৮৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২১ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স ১৬০.৩৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১০ হাজার ৫ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৭৫.১৫ পয়েন্ট কমে ১৬ হাজার ৬৫৩ পয়েন্টে, শরিয়া সূচক ১৬.৩৯ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৩ পয়েন্টে এবং সিএসই৩০ সূচক ৬৪.৬৪ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৬৫১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন সিএসইতে ২১৮টি কম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৩৭টি কম্পানির, কমেছে ১৬৬টির এবং অপরিবর্তিত আছে ১৫টির। দিনশেষে সিএসইতে ১৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
সংকট উত্তরণে ডিবিএর ৭ সুপারিশ
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) বলেছে, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো, যার প্রতিফলন শিগগিরই শেয়ারবাজারে পড়বে। এরই ধারাবাহিকতায় শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতায় সাত প্রস্তাব উত্থাপন করেছে সংস্থাটি।
গতকাল শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল সভায় দেশের শীর্ষ ৩০ ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময়কালে এই দাবি উত্থাপন করা হয়।
আলোচনাসভায় শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতায় ডিবিএর সাত প্রস্তাব তুলে ধরে ডিবিএর প্রতিনিধিরা জানান, শেয়ার দামে পুনরায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করার যে গুজবটি বাজারে রয়েছে, তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন।
তাঁরা আরো জানান, ফ্লোর প্রাইসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে ডিবিএ আদৌ মনে করে না। বর্তমান মার্জিন বিধিমালা-১৯৯৯-এর যুগোপযোগী ও সংস্কার প্রয়োজন।
তাঁরা বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকনির্ভরতা কমাতে মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর জোর দিতে হবে। মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাঁদের মতে, কম্পানির ক্যাটাগরি ডিভিডেন্ডের ওপর না করে তার ক্যাপিটাল সাইজের ওপর করাই যৌক্তিক।
লাগাতার আন্দোলনের হুমকি
আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে না পারলে লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরনো ভবনের সামনে সংগঠনটির উদ্যোগে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই হুমকি দেওয়া হয়। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের বিনিয়োগকারীরা এ সময় মানববন্ধনে সমবেত হন।
মানববন্ধনে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতারা কয়েকটি দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে : নতুন কম্পানি বা আইপিও অনুমোদন বন্ধ, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সম্প্রতি যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে শেয়ারবাজারে পতন ঘটাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা। পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতাদের সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী ও সহসভাপতি ডা. মহসিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।