জুমবাংলা ডেস্ক : পুঁজিবাজারে আবারও বড় দরপতন হয়েছে। টানা পতনে থাকা পুঁজিবাজারে সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবসে মূল্য সূচক এক সঙ্গেই কমল ১৩২ পয়েন্ট। এক দিনে সূচকের বড় পতনের ফলে বাজার মূলধন কমেছে আট হাজার কোটি টাকারও বেশি। লাগামহীন দরপতনে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
তাঁদের মধ্যে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। দরপতনের প্রতিবাদে মতিঝিলে বিক্ষোভ করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল বুধবার কেবল ৩৯টি কম্পানির শেয়ারের দর বাড়ার বিপরীতে ৩৪৭টির দরপতন ঘটেছে। তথ্য বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, বর্তমান কমিশনের সময় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৪৫০ পয়েন্ট।
এর মধ্যে গত তিন দিনে সূচক কমেছে ২১৫ পয়েন্ট। সোমবার কমেছে ৩৪ পয়েন্ট, মঙ্গলবার কমেছে ৩৮ পয়েন্ট এবং গতকাল বুধবার কমেছে ১৩২ পয়েন্ট।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাবেক সরকারের আমলে গত দুই বছরে শেয়ারবাজারে অব্যাহত পতন হয়েছে। এর মধ্যে অনেক দিন পতনের সেঞ্চুরিও হয়েছে।
হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট ডিএসইর সূচকের পতন হয়েছিল ১০৪ পয়েন্ট। ওই পতন ছিল গত দুই বছরের মধ্যে অন্যতম বড় দরপতন। তবে গতকালের দরপতনকে বিনিয়োগকারীরা স্মরণকালের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ দরপতন বলে অভিহিত করেছেন।
বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গতকাল বিএসইসি বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় রেকর্ড অর্থ জরিমানা করেছে। এর প্রভাবে বাজারে বড় পতন হয়েছে।
তারা বলছে, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কারসাজি ও অনিয়মের জন্য শাস্তি আরোপ করে চলেছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য, পুঁজিবাজারে কারসাজি ও অনিয়মের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু বাজারে এখনো নতুন বড় বিনিয়োগকারীদের সাপোর্ট তৈরি হয়নি। এখনো সালমান এফ রহমান ও শিবলী রুবাইয়াতের প্রেতাত্মারাই বড় বিনিয়োগকারী হিসেবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। আর বিএসইসি তাদের ওপরই শাস্তি আরোপ করছে।
বাজার পর্যালোচনা
গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ১৩২.২৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪৫৪ পয়েন্টে। এদিন ডিএসইতে ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। গতকাল লেনদেন বেড়েছে ৫১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বা ১৩ শতাংশ।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২৯টির বা ৭.২৯ শতাংশের, কমেছে ৩৪৭টির বা ৮৭.১৯ শতাংশের এবং পরিবর্তন হয়নি ২২টির বা ৫.৫৩ শতাংশের। অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে গতকাল পাঁচ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
কেন এত দরপতন?
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু নীতি করলেই চলবে না, তাদেরও তো একটি আস্থার বার্তা দিতে হবে। এ জন্য নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে একটি আশার বাণী আসা দরকার।’
পুঁজিবাজারে বেক্সিমকো গ্রুপের শেয়ার কেনায় কারসাজিতে জড়িত অভিযোগে ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করার প্রভাবও পুঁজিবাজারে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অন্যদিকে পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের আলোচিত সরকারি কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরু ও তাঁর পরিবারের ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, বিএফআইইউ।
অর্ধশত কোটি টাকার পোর্টফোলিও নিয়ন্ত্রণকারী আবুল খায়ের হিরু একাধিকবার জরিমানার শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে কারসাজির দায়ে ৫০ লাখ টাকা ও হিরুকে ফের ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।
লেনদেন চলাকালে তাঁদের শেয়ার হস্তান্তরের নিষেধাজ্ঞা ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলবের বিষয়টি বাজারে ছড়িয়ে পড়লে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হন বলেও মনে করছেন বিনিয়োগকারী আজমল হোসেন।
তিনি বলেন, বাজারে তো সিন্ডিকেট বেশি। এহন ধরা খাইতাছে এক এক কইরা। তাগোও সাপোর্টার আছে, তারা লেনদেনে নাই এহন। সূচক তো পড়বই। মনে হয় সময় লাগব বাজার ঠিক হইতে।’
বিক্ষোভ, বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
শেয়ারবাজারে অব্যাহত পতনের কারণে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করেন বিনিয়োগকারীরা। তাঁরা ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠনেরও দাবি জানান। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় মতিঝিলে ডিএসই পুরান ভবনের সামনে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এক মানববন্ধনে এ দাবি জানান বিনিয়োগকারীরা।
এ সময় মানববন্ধন কর্মসূচিতে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের একাংশের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরীসহ অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘শেয়ারবাজারে সদস্যভুক্ত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে হবে। আর অবিলম্বে বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করতে হবে। অব্যাহত দর পতনে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।’
শেয়ারবাজার উন্নয়ন ও সংস্কারে প্রত্যেকের অবদান রাখতে হবে
এদিকে, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেছেন, একটি সমৃদ্ধ ও সফল শেয়ারবাজার গড়তে হলে শুধু বিএসইসি নয়, বরং শেয়ারবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব প্রতিষ্ঠানকে নিয়মমাফিক নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারে সবাইকে অবদান রাখতে হবে। মঙ্গলবার বিএসইসি ভবনে সাত স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মতবিনিময়সভায় তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ও অন্য অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা শেয়ারবাজারের রেগুলেটরি কাঠামোর সংস্কার, শেয়ারবাজারের মনিটরিং কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া পরিচালন, বাস্তবায়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রসার ও বিকাশের উদ্যোগ গ্রহণ, শেয়ারবাজার বিষয়ে ভালোমানের গবেষণা পরিচালনা ও আইপিও অনুমোদনের প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিরেক্ট লিস্টিং করার প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করাসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব দেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।