সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা প্রায় ২৭ হাজার গ্রহাণুর খোঁজ পেয়েছেন। তাও আবার টেলিস্কোপের তোলা পুরানো ছবি থেকে। আর গ্রহাণু খুঁজে পাওয়ার কাজটা করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মূলত গ্রহাণুগুলো অতি ক্ষুদ্র ও অস্পষ্ট হওয়ায় এর আগে এগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে গ্রহাণু খুঁজে পাওয়া তুলনামূলক সহজ। পাশাপাশি সম্ভাব্য বিপজ্জনক গ্রহাণু চিহ্নিত করতেও এই প্রযুক্তি সহায়তা করবে। এমনকি একটা গ্রহাণু কত বছর পরে পৃথিবীকে আঘাত করতে পারে, সম্ভাব্য সেই সময় বলে দিতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
আসলে সৌরজগতে গ্রহ ও উপগ্রহ ছাড়াও কিছু পাথুরে বস্তু সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এসব পাথুরে বস্তুকে বলা হয় গ্রহাণু। বেশিরভাগ নতুন আবিষ্কৃত গ্রহাণু মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মধ্যবর্তী গ্রহাণু বেল্টে অবস্থিত। এই অঞ্চলে বিজ্ঞানীরা গত ২০০ বছরে ১৩ লাখের বেশি গ্রহাণু ও পাথুরে বস্তু তালিকাভুক্ত করেছেন।
গত প্রায় পাঁচ সপ্তাহে জ্যোতির্বিদরা প্রায় ১৫০টির মতো গ্রহাণু আবিষ্কার করেছেন। যাদের কক্ষপথ পৃথিবীর কাছাকাছি। তবে পৃথিবীর কাছাকাছি এই গ্রহাণুগুলোর মধ্যে কোনটিই আমাদের গ্রহের সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকি নেই। অন্যান্য আবিষ্কৃত গ্রহাণুগুলোর মধ্যে রয়েছে ট্রোজান গ্রহাণু। এই গ্রহাণুগুলো বৃহস্পতির সঙ্গে একই কক্ষপথে সূর্যের চারদিকে ঘোরে। তবে নতুন আবিষ্কৃত এ গ্রহাণুগুলো এখনও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন যাচাই করে দেখেনি।
অ্যাস্টেরয়েড ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও বি৬১২ ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এড লু। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে গ্রহাণু আবিষ্কার বিষয়ে তিনি জানান, ‘এটি সত্যিই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি চমৎকার প্রয়োগ। গ্রহাণু অনুসন্ধানের জন্য ডিজাইন করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যালগরিদমগুলো ইতিমধ্যেই মানুষের দক্ষতা অর্জন করার পর্যায়ের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আশা করি, অ্যালগরিদমগুলো ভবিষ্যতে এই ক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যাব’।
গ্রহাণুগুলো আবিষ্কার করতে নতুন যে অ্যালগরিদম তৈরি করা হয়েছে, তার নাম ‘ট্র্যাকলেট-লেস হেলিওসেন্ট্রিক অরবিট রিকভারি’ বা সংক্ষেপে থর (THOR)। এই নতুন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ৪ লাখের বেশি আর্কাইভ করা ছবি বিশ্লেষণ করেছে। আর সেখান থেকেই খুঁজে পেয়েছে ২৭ হাজারের বেশি গ্রহাণু। ছবিগুলো ন্যাশনাল অপটিক্যাল-ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমি রিসার্চ ল্যাবরেটরির (NOIRLab) কাছে সংগৃহীত ছিল।
বি৬১২ ফাউন্ডেশন ‘থর অ্যালগরিদম’ সম্পর্কে জানিয়েছে, আকাশের একই অংশে কমপক্ষে ৩০ দিনের মধ্যে ৫ বার পর্যবেক্ষণ করা গেলে এই অ্যালগরিদম সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে। ২০২২ সালে বিজ্ঞানীরা থর নামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার করে ১০০টি নতুন গ্রহাণু আবিষ্কার করেছিল। এছাড়াও মাত্র দুই সপ্তাহ আগে, এই অ্যালগরিদম হাবল স্পেস টেলিস্কোপের আর্কাইভ করা ছবি থেকে প্রায় আরও ১ হাজারটি নতুন গ্রহাণু শনাক্ত করে।
ভবিষ্যতে ডেটা বিশ্লেষণ করতে আরও উন্নত সফটওয়্যার বানানোর কথা চিন্তা করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের আশা, ভেরা সি রুবিন অবজারভেটরিতে বসানো ৩.২ গিগাপিক্সেল রেজ্যুলেশনে সমৃদ্ধ ডিজিটাল ক্যামেরা কার্যক্রম শুরু করলে, ৬ মাসের মধ্যে আরও নতুন গ্রহাণু আবিষ্কার করা সম্ভব হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।