জাতীয় ডেস্ক: পুরান ঢাকায় আরমানিটোলায় বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আবারও নতুন করে সামনে এসেছে আবাসিক এলাকায় দাহ্য কেমিকেল মজুদের ভয়াবহতার বিষয়টি। খবর বিবিসি বাংলার।
এর আগে ২০১৯ সালের পুরানো ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭৮ জনের প্রাণহানি হয়। তারও আগে ২০১০ সালে নিমতলী ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারান ১২৫ জন।
এই প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার পেছনে মূল কারণ ছিল মজুদ করা দাহ্য কেমিকেল।
প্রতিটি দুর্ঘটনার পর কেমিকেলের মজুদ সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে নানা আশ্বাস ও একাধিক তদন্ত কমিটি হলেও বাস্তবে তাদের কাজের কোন বাস্তবায়ন নেই।
এতকিছুর পরও পুরান ঢাকা থেকে এই কেমিকেলের মজুদ সরানো হয়নি।
এক্ষেত্রে দায়িত্ব পাওয়ার পরও যারা এ ব্যাপারে কোন তদারকি করেনি, পদক্ষেপ নেয়নি তাদের বিরুদ্ধে এখনই আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব।
তিনি একে নিছক দুর্ঘটনা নয় বরং অবহেলাজনিত হত্যা হিসেবে আখ্যা দেন।
মি. হাবিব জানান, তদন্ত কমিটি হয়েছে, নীতিমালা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল। কিন্তু কোন কাজই হয়নি।
একইসঙ্গে সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিস্ফোরক অধিদফতর, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-কেউ তাদের পালন করেনি।
এই দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি যেসব ভবন মালিক অর্থের লোভে ভবনের বাসিন্দার জীবন ঝুঁকিতে ফেলে কেমিকেল মজুদের জায়গা করে দিচ্ছেন, তাদেরকেও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে মনে করেন তিনি।
মি. হাবিব বলেন, মাঠ পর্যায়ে যারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে এবং যেসব ভবন মালিক বা কেমিকেল গুদামের মালিক অসচেতনতার পরিচয় দিয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা না করলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না।
এসব কেমিকেলের মজুদ অস্থায়ীভাবে সরিয়ে নিতে গাজীপুরের টঙ্গিতে এবং শ্যামপুরে দুটি স্থানে ৬ একর করে জায়গা নির্ধারণ হলেও এখন পর্যন্ত স্থানান্তরের কোন কাজ করা হয়নি।
এছাড়া নিমতলী ট্র্যাজেডির পর শিল্প মন্ত্রণালয় রাসায়নিক শিল্প-নগর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়।
এরপর চুড়িহাট্টায় আগুনের পর দুই মাসের মাথায় পুরান ঢাকার সব কেমিকেলের গুদাম অপসারণে বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স অভিযান চালায়। কিন্তু সব অভিযান ও প্রতিশ্রুতিই কিছুদূর এগিয়ে থেমে গেছে।
তবে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার নিজ মন্ত্রণালয়ের ভুমিকার কথা এড়িয়ে গিয়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সেবা সংস্থার ওপর দায় চাপাতে চাইছেন।
তিনি জানান, দক্ষিণের মেয়র, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী সবার সাথে একাধিকবার মিটিং করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আবাসিক এলাকায় কোন কেমিকেল গোডাউন থাকবে না। এদের লাইসেন্স দেয়া হবে না। এদেরকে উচ্ছেদ করা হবে।
এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশন ও বিস্ফোরক অধিদফতরের। তাদের দায়িত্ব পালনে সজাগ হওয়ার আহ্বান জানান মি. মজুমদার।
এদিকে শুক্রবার ভোররাতে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার ওই ৬ তলা আবাসিক ভবনে যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেখানে উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে ৪ জন দমকলকর্মীও আহত হন।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েই সেখানে ছুটে যান ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান। ভবনটির নিচে ও আশেপাশে ১০/১২টি কেমিকেলের দোকান থাকায় আগুনের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
প্রতিটি রাসায়নিক অত্যন্ত বিপদজনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন তিনি।
কেমিকেল পোড়া ধোঁয়া ও আগুনের বিস্তৃতি এতোটাই ভয়াবহ ছিল যে মাস্কসহ উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে আহত হন ওই ৪ জন কর্মী।
এই কেমিকেলগুলো অবৈধভাবে মজুদ করা হয়েছিল বলে জানান মি. রহমান।
তিনি বলেন, যতো তীব্র আগুনই হোক, আমরা ব্রিদিং মাস্ক ছাড়া ঢুকতে পারি। কিন্তু এই আগুনটা এতোটাই বিষাক্ত ছিল যে আমাদের মাস্ক পরতে হয়েছে। তাও অনেকে অসুস্থ হয়েছেন। এটা কেমিকেলের কারণেই হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তখন নিচতলার কেমিকেল গুদামের জানালা খুলে দিতে এক প্রকার বিস্ফোরণের মতো হয়। ভেতরে যে গ্যাস জমে ছিল সেটা বাইরের বাতাসে সংস্পর্শে আসতেই দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে।
ভবনের নীচে পাউডার ও লিকুইড জাতীয় কেমিক্যাল এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, যেগুলোর কোনও লেবেল নেই। এজন্য দমকলকর্মীরা বলতে পারেননি যে এগুলো কি ধরণের কেমিকেল। তবে এগুলো ভীষণ বিপদজনক সেটা নিশ্চিত করেছেন।
কারণ যারা আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাদের প্রায় সবাই বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সরাসরি আগুনে পোড়ার ক্ষত কারও নেই।
পুরান ঢাকা থেকে এসব কেমিকেল গুদাম সরিয়ে নিতে যদি দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হয় এবং এ বিষয়ে যদি ভবন মালিকরা সচেতন হয়ে ওঠে তাহলে আরেকটি ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হওয়া অসম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।