সকালবেলা আয়নার সামনে দাঁড়ালেই কি একটা অস্বস্তি কাজ করে? মুখে জমে থাকা তেল, কালো দাগ, শেভিংয়ের পরের জ্বালাপোড়া, অথবা শুষ্ক, রুক্ষ ভাব – এইসব কি আপনার আত্মবিশ্বাসে ছায়া ফেলে? ভাবছেন, “স্কিন কেয়ার আবার কী? এটা তো মেয়েদের জিনিস!” পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস নিয়ে কথা বলার আগেই এই ধারণাটাকে ভেঙে ফেলতে হবে। ভুলে যান সেই পুরনো ধারণা। আপনার ত্বক, আপনার শরীরের বৃহত্তম অঙ্গ, প্রতিদিন ধুলোবালি, রোদ, দূষণ আর স্ট্রেসের মোকাবিলা করে। একে উপেক্ষা করা মানে নিজের সুস্থতা আর আত্মমর্যাদাকে অবহেলা করা। বাংলাদেশের আর্দ্র-উষ্ণ আবহাওয়া, শহুরে দূষণের মাত্রা, আর প্রখর সূর্যের তাপ – এই তিনে মিলে পুরুষদের ত্বকের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। কিন্তু চিন্তার কোনও কারণ নেই! জটিল রুটিন বা দামি প্রোডাক্টের পেছনে ছোটার দরকার নেই। পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস মানেই হলো সহজ, বিজ্ঞানসম্মত, এবং টেকসই কিছু অভ্যাস, যা আপনার ত্বককে রাখবে সুস্থ, প্রাণবন্ত এবং সমস্যামুক্ত। আজকের এই গাইডে শিখে নিন, কীভাবে মাত্র কয়েকটি ধাপে নিজের যত্ন নিতে পারেন, বাড়িয়ে তুলতে পারেন নিজের আত্মবিশ্বাস, প্রতিদিনের জীবনে যোগ করতে পারেন একটু ইতিবাচকতা।
কেন পুরুষদের জন্য আলাদা স্কিন কেয়ার টিপস জরুরি? (পুরুষ ত্বকের বৈশিষ্ট্য বুঝুন)
পুরুষ আর নারীর ত্বক গঠনগতভাবেই আলাদা। শুধু দাড়ি-গোঁফের কারণেই নয়, আরও বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক পার্থক্য পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস কে একটু ভিন্ন রূপ দেয়:
- তৈলগ্রন্থির সক্রিয়তা ও পুরুত্ব: পুরুষদের ত্বক সাধারণত ২০-২৫% বেশি পুরু হয় নারীদের তুলনায়, বিশেষ করে কোলাজেন লেভেল বেশি থাকায়। এটিই ত্বককে শক্তিশালী করে তোলে। কিন্তু এর সাথে যুক্ত হয় অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের প্রভাবে সেবেসিয়াস গ্ল্যান্ডের (তৈলগ্রন্থি) অতিরিক্ত সক্রিয়তা। ফলাফল? বাংলাদেশের গরম-আর্দ্র পরিবেশে খুব সহজেই মুখ তেলতেলে হয়ে ওঠা, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস এবং ব্রণের সমস্যা দেখা দেওয়া। ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো শহরে দূষণের মাত্রাও এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ।
- শেভিংয়ের চাপ: প্রায় প্রতিদিন শেভিং করা পুরুষদের ত্বকের জন্য এক বিরাট চাপ। রেজর বার্ন, রেজর বাম্পস (পসিউডোফলিকুলাইটিস), শুষ্কতা, জ্বালাপোড়া এবং সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়। ভুল পদ্ধতি বা অনুপযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহারে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়। শেভিংয়ের পরের জ্বালা ভোগেননি, এমন পুরুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর!
- বহিরাঙ্গন কর্ম ও সূর্যের সংস্পর্শ: পেশাগত বা ব্যক্তিগত কাজে অনেক পুরুষই নারীদের তুলনায় বেশি সময় বাইরে কাটান। ফলে অতিবেগুনি রশ্মি (UV Rays), বিশেষ করে বাংলাদেশে মার্চ থেকে অক্টোবর মাসের প্রখর সূর্যতাপ, ত্বকের ওপর সরাসরি এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। এর ফলাফল শুধু ত্বক পোড়ানো (সানবার্ন) নয়, দীর্ঘমেয়াদে বলিরেখা, কালো দাগ, ত্বকের রুক্ষতা এমনকি স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, UV রেডিয়েশনের ৮০% এরও বেশি ক্ষতি সাধিত হয় ১৮ বছর বয়সের আগেই। তাই সুরক্ষা শুরু করতে কখনোই দেরি হয় না।
- জীবনযাত্রা ও চাপ: ধূমপান, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব এবং পেশাগত বা ব্যক্তিগত স্ট্রেস – এই সবকিছুই পুরুষদের ত্বকের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্ট্রেস কর্টিসল হরমোন নিঃসরণ বাড়িয়ে ত্বকের প্রদাহ (Inflammation) এবং তৈল নিঃসরণ বাড়াতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডার্মাটোলজিস্ট ডা. শিহান আহমেদ (ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল) বলেন, “অনেক পুরুষ রোগীই ভাবেন, মুখে সাবান দিয়ে ধুলেই স্কিন কেয়ার শেষ। কিন্তু বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এটা যথেষ্ট নয়। মিনিমাম একটি জেন্টল ক্লিনজার, ময়েশ্চারাইজার আর সানস্ক্রিন – এই তিনটি প্রোডাক্ট নিয়মিত ব্যবহার করলেই ত্বকের ৭০% সাধারণ সমস্যা দূর করা সম্ভব। দুঃখের বিষয়, অনেকেই সানস্ক্রিনকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বা ‘মহিলাদের জিনিস’ ভেবে এড়িয়ে যান, যা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।” তার মতে, পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস এর মূল ভিত্তি হওয়া উচিত সহজতা এবং ধারাবাহিকতা।
সহজে শুরু করুন: প্রতিদিনের স্কিন কেয়ার রুটিনের মৌলিক স্তম্ভ (পুরুষদের জন্য বেসিক স্কিন কেয়ার রেগিমেন)
জটিলতার দরকার নেই। একটি কার্যকর পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস রুটিনের মূল ভিত্তি তিনটি সহজ ধাপ:
পরিষ্কার করুন (Cleanse): ময়লা ও অতিরিক্ত তেল দূর করুন।
- কেন? দিনভর জমে থাকা ধুলোবালি, দূষণ, ঘাম, ব্যাকটেরিয়া এবং অতিরিক্ত তেল (সেবাম) ত্বকের ছিদ্র আটকে ফেলে। এতে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস, সাদাটে দাগের (হোয়াইটহেডস) জন্ম হয় এবং ত্বক নিষ্প্রাণ দেখায়।
- কীভাবে?
- প্রোডাক্ট বাছাই: খোলা বাজারের রুক্ষ সাবান নয়। বেছে নিন একটি জেন্টল, ফেস-ওয়াশ বা ক্লিনজার যা বিশেষভাবে তৈলাক্ত বা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য তৈরি। লেবেল দেখুন: ‘Oil-Free’, ‘Non-Comedogenic’ (ছিদ্র বন্ধ না করে এমন), ‘For Men’ বা ‘Gentle Cleansing’ লেখা আছে কিনা। জেল বা ফোম টেক্সচার সাধারণত তেল নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করে।
- পদ্ধতি: দিনে দুইবার – সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমানোর আগে। হাত ভিজিয়ে নিন। অল্প পরিমাণ ক্লিনজার হাতে নিয়ে হালকা হাতে গোলাকার মুভমেন্টে পুরো মুখ ও গলা ম্যাসাজ করুন (বিশেষ করে T-জোন: কপাল, নাক ও থুতনি, যেখানে তেল বেশি জমে)। সবচেয়ে বড় ভুল: জোরে জোরে ঘষা বা গরম পানি ব্যবহার। এতে ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের স্তর (ময়েশ্চারাইজিং ব্যারিয়ার) ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং তেল নিঃসরণ বেড়ে যায়! হালকা গরম বা ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন। ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নরম তোয়ালে দিয়ে আলতো করে চেপে শুকিয়ে নিন (ঘষবেন না)।
- বাংলাদেশে প্রাপ্যতা: সিটাফিল, সিরামাইড, নিভিয়া মেন, গার্নিয়ার মেন, ল’রিয়াল মেন প্যারিস, সিবা (Sebamed) ইত্যাদি ব্র্যান্ডের ভালো ক্লিনজার পাওয়া যায়।
আর্দ্র করুন (Moisturize): ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখুন।
- কেন? অনেক পুরুষই ভাবেন, “আমার তো তেল বেশি, ময়েশ্চারাইজার লাগবে কেন?” এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা! ক্লিনজিং ত্বক থেকে ময়লা এবং কিছু প্রাকৃতিক আর্দ্রতাও সরিয়ে ফেলে। ত্বক তার আর্দ্রতা হারালে, তা ক্ষতিপূরণের জন্য আরও বেশি তেল উৎপাদন করে! ফলে তেলতেলে ভাব বেড়ে যায়। ময়েশ্চারাইজার ত্বকের আর্দ্রতার ভারসাম্য রক্ষা করে, শুষ্কতা, টানটান ভাব, ফ্ল্যাকিনেস (চামড়া ওঠা) এবং অকালে বলিরেখা পড়া রোধ করে। শেভিংয়ের পর ত্বক বিশেষভাবে সংবেদনশীল ও শুষ্ক হয়ে পড়ে, তখন ময়েশ্চারাইজার অত্যন্ত জরুরি।
- কীভাবে?
- প্রোডাক্ট বাছাই: আপনার ত্বকের ধরন বুঝে বেছে নিন:
- তৈলাক্ত ত্বক (Oily Skin): ‘Oil-Free’, ‘Non-Comedogenic’, ‘Gel’ বা ‘Water-Based’ লাইটওয়েট ময়েশ্চারাইজার। জেল টেক্সচার দ্রুত শুষে যায় এবং চটচটে ভাব দেয় না।
- শুষ্ক ত্বক (Dry Skin): ‘হাইড্রেটিং’, ‘নরিশিং’ লেখা ক্রিম বা লোশন। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন, সিরামাইড, শিয়া বাটার বা জোজোবা অয়েল সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট ভালো।
- মিশ্র ত্বক (Combination Skin): T-জোনে লাইটওয়েট, গালে একটু বেশি ময়েশ্চারাইজিং ক্ষমতা আছে এমন প্রোডাক্ট, বা আলাদা আলাদা জায়গায় আলাদা প্রোডাক্ট ব্যবহার।
- সংবেদনশীল ত্বক (Sensitive Skin): ‘ফ্র্যাগ্রেন্স-ফ্রি’, ‘ডাই-ফ্রি’, ‘হাইপোঅ্যালার্জেনিক’ লেখা প্রোডাক্ট। মিনিমাম উপাদান (মিনিম্যালিস্ট ফর্মুলা) আছে এমন প্রোডাক্ট নির্বাচন করুন।
- পদ্ধতি: ক্লিনজিং বা শেভিংয়ের পর, ত্বক সামান্য ভেজা থাকা অবস্থায় (ড্যাম্প স্কিন) ময়েশ্চারাইজার লাগান। এতে আর্দ্রতা লক হয়। পরিমাণে অল্প নিন (এক মুটোই যথেষ্ট)। হাতের তালুতে রেখে পুরো মুখ ও গলায় সমানভাবে ছড়িয়ে দিন। আলতো করে ট্যাপ করে শোষণ করান।
- প্রোডাক্ট বাছাই: আপনার ত্বকের ধরন বুঝে বেছে নিন:
- বাংলাদেশে প্রাপ্যতা: সিরামাইড, নিভিয়া মেন ক্রিম/লোশন, গার্নিয়ার অ্যাকুয়া বোম্ব, ল’রিয়াল হাইড্রা ইনার্জি, ভ্যাসলিন, পন্ড’স, অ্যাভিন (Aveeno) ইত্যাদি।
- সুরক্ষা দিন (Protect with Sunscreen): সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচুন। (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস!)
- কেন? সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UVA & UVB) পুরুষদের ত্বকের ক্ষতির এক নম্বর কারণ। UVA রশ্মি গভীরে প্রবেশ করে, ত্বকের কোলাজেন-ইলাস্টিন ভেঙে দিয়ে অকালে বলিরেখা, ঝুলে পড়া ত্বক (স্যাগিং) এবং স্থায়ী কালো দাগ (হাইপারপিগমেন্টেশন) সৃষ্টি করে। UVB রশ্মি ত্বক পোড়ানোর (সানবার্ন) জন্য দায়ী এবং স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। মেঘলা দিনেও ৮০% UV রশ্মি মেঘ ভেদ করে আসে! গাড়ি চালানো, অফিসের জানালার পাশে বসা, বাইরে হাঁটা – সবখানেই আপনার ত্বক UV রশ্মির সংস্পর্শে আসে। আমেরিকান একাডেমি অফ ডার্মাটোলজি (AAD) জোর দিয়ে বলে, সানস্ক্রিন প্রতিদিনের স্কিন কেয়ার রুটিনের অপরিহার্য অংশ, আবহাওয়া যেমনই হোক না কেন।
- কীভাবে?
- প্রোডাক্ট বাছাই: ‘ব্রড-স্পেকট্রাম’ (UVA & UVB উভয় থেকে সুরক্ষা দেয়) এবং কমপক্ষে SPF 30 আছে এমন সানস্ক্রিন বেছে নিন। SPF 50 হলে আরও ভালো। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ‘Oil-Free’, ‘Non-Comedogenic’, ‘ম্যাট ফিনিশ’ বা ‘জেল’ টেক্সচার ভালো। সংবেদনশীল ত্বকের জন্য মিনারেল (জিংক অক্সাইড, টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড) সানস্ক্রিন প্রায়ই ভালো অপশন, যদিও সাদা দাগ ফেলতে পারে। ‘ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট’ হলে ভালো, বিশেষ করে ঘামে বা সাঁতারে।
- পদ্ধতি: সকালে ময়েশ্চারাইজারের পর, বাইরে বেরোনোর কমপক্ষে ১৫-৩০ মিনিট আগে মুখ, কান, গলা এবং হাতের পেছনের অংশে (যেসব জায়গা কাপড়ে ঢাকা থাকে না) ভালো করে লাগান। পরিমাণে পর্যাপ্ত নিন – পুরো মুখ ও গলার জন্য প্রায় এক চা-চামচ পরিমাণ। হালকা করে ছড়িয়ে দেবেন না, ভালো করে ম্যাসাজ করে শোষণ করাতে হবে। প্রতি ২ ঘন্টা পর পর (বিশেষ করে ঘামলে, সাঁতার কাটলে বা টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছলে) রিঅ্যাপ্লাই করুন। শুধু বাইরে যাওয়ার দিনে নয়, ঘরে থাকলেও জানালার পাশে কাজ করলে বা বাইরের আলো ঘরে ঢুকলে সানস্ক্রিন লাগানো উচিত।
- বাংলাদেশে প্রাপ্যতা: ল’রিয়াল প্যারিস, নিভিয়া, গার্নিয়ার, নিউট্রোজেনা, লাকমে, পন্ড’স, বায়োডার্মা, লা রোচ-পোসে (La Roche-Posay) ইত্যাদি ব্র্যান্ডের সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। SPF 30 বা 50 ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন খুঁজুন।
“এই তিনটি ধাপ – ক্লিনজ, ময়েশ্চারাইজ, সানস্ক্রিন – এটাই হলো পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস এর হৃদয়। এগুলো নিয়মিত করলেই আপনি আশ্চর্যজনক পার্থক্য দেখতে পাবেন কয়েক সপ্তাহের মধ্যে,” বললেন ডার্মাটোলজিস্ট ডা. তাসনিম ফেরদৌস (চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল)। “সানস্ক্রিনকে অভ্যাসে পরিণত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ এটি আপনার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য।
শেভিং: যন্ত্রণা নয়, আরামের অনুভূতি (পুরুষদের শেভিং টিপস ও ত্বক সুরক্ষা)
শেভিং অনেক পুরুষের জন্য দৈনন্দিন যন্ত্রণার কারণ। তবে সঠিক পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস অনুসরণ করে এই প্রক্রিয়াকে আরামদায়ক ও ক্ষতিহীন করা সম্ভব:
প্রস্তুতি: ভেজা ত্বকে শেভ করুন।
- গরম পানির ভাপ বা গরম ভেজা তোয়ালে মুখে ২-৩ মিনিট রাখুন (স্নানের পর শেভ করাই আদর্শ)। এতে দাড়ি নরম হয়, ছিদ্র খুলে যায় এবং রেজর সহজে চলাচল করে।
- ভালো কোয়ালিটির শেভিং জেল বা ক্রিম ব্যবহার করুন। সাবান ব্যবহার করবেন না, এটা ত্বক শুষ্ক করে। জেল বা ক্রিম লুব্রিকেশন তৈরি করে, রেজরকে গ্লাইড করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। শেভিং ফোম তুলনামূলক কম কার্যকর হতে পারে।
- শেভিং প্রোডাক্টে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, অ্যালোভেরা, গ্লিসারিন বা শিয়া বাটার থাকলে ভালো, এগুলো ত্বককে আর্দ্র রাখে।
শেভিং পদ্ধতি: দিক বুঝে শেভ করুন।
- দাড়ি গজানোর দিক (গ্রেইন) বুঝুন: হাত দিয়ে মুখের বিভিন্ন অংশে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেখুন দাড়ি কোন দিকে বেড়েছে। সাধারণত গলার নিচের দিকে দাড়ি নিচ থেকে উপরের দিকে (উপরের দিকে) গজায়।
- সবসময় দাড়ি গজানোর দিক বরাবর (উইথ দ্য গ্রেইন) প্রথম পাসে শেভ করুন: এতে ত্বকের জ্বালা কম হয়। খুব ঘন দাড়ি হলে, প্রথম পাসে গ্রেইনের দিকে, এরপর গ্রেইনের বিপরীত দিকে (এগেইনস্ট দ্য গ্রেইন) দ্বিতীয় পাসে শেভ করতে পারেন, তবে খুব সতর্কতার সাথে এবং হালকা চাপে।
- হালকা চাপ প্রয়োগ করুন: রেজরে জোর করে চাপ দেবেন না। রেজর নিজের ওজনে ত্বকের উপর পড়লে যে চাপ সৃষ্টি হয়, সেটাই যথেষ্ট। বেশি চাপে কাটা পড়া, রেজর বার্ন ও ইনগ্রোন হেয়ার (চামড়ার ভেতরে দাড়ি বেড়ে যাওয়া) বা রেজর বাম্পস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- রেজর বারবার ধুয়ে নিন: প্রতি ২-৩ স্ট্রোক পর পর রেজর ভালো করে পানিতে ধুয়ে নিন যাতে দাড়ি ও ক্রিম জমে ব্লেড আটকে না যায়।
- প্রথমেই ধারালো ব্লেড ব্যবহার করুন: ভোঁতা ব্লেড দাড়ি টেনে তুলতে চেষ্টা করে, ফলে ত্বকে জ্বালা-যন্ত্রণা হয়। নিয়মিত ব্লেড পরিবর্তন করুন (সাধারণত ৫-৭ শেভের পর)।
শেভ পরবর্তী যত্ন: শান্ত ও আর্দ্র করুন।
- ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে শেভিং ক্রিম/জেলের অবশিষ্টাংশ পরিষ্কার করুন। ঠাণ্ডা পানি ছিদ্র বন্ধ করতে এবং জ্বালা কমাতে সাহায্য করে।
- কখনই অ্যালকোহলযুক্ত আফটারশেভ ব্যবহার করবেন না! এটা ত্বককে ভীষণ শুষ্ক ও জ্বালাপোড়া করে। বেছে নিন অ্যালকোহল-ফ্রি আফটারশেভ লোশন, বাম বা জেল। যাতে অ্যালোভেরা, হ্যামামেলিস (Witch Hazel), অ্যালানটয়েন (Allantoin) বা ক্যামোমাইল থাকলে ভালো। এগুলো ত্বককে শান্ত করে, জ্বালা-যন্ত্রণা কমায় এবং সংক্রমণ রোধ করে।
- আফটারশেভ শুকিয়ে গেলে, অবশ্যই একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার লাগান। শেভিং ত্বকের উপরের স্তর সরিয়ে ফেলে, তাই আর্দ্রতা দেওয়া অপরিহার্য।
- ইনগ্রোন হেয়ার (রেজর বাম্পস) সমস্যার সমাধান:
- উপরের পদ্ধতি মেনে শেভ করুন (গ্রেইনের দিকে শেভ, হালকা চাপ, ধারালো ব্লেড)।
- স্যালিসিলিক অ্যাসিড (Salicylic Acid) বা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড (Glycolic Acid) সমৃদ্ধ ক্লিনজার বা টোনার সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো মৃত কোষ সরিয়ে ছিদ্র খুলে দিতে সাহায্য করে।
- শেভিংয়ের আগে স্ক্রাবিং (Exfoliation) করলে ইনগ্রোন হেয়ার কম হয় (পরের সেকশনে বিস্তারিত)।
- জটিল সমস্যায় ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। তারা প্রেসক্রিপশন স্ট্রেংথের লোশন বা মাইক্রোডার্মাব্রেশন ট্রিটমেন্ট দিতে পারেন।
ত্বকের সমস্যা অনুযায়ী অতিরিক্ত যত্ন (ব্রণ, কালো দাগ, রুক্ষতা, বার্ধক্যজনিত লক্ষণ)
বেসিক রুটিনের পাশাপাশি, নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা সমাধানে কিছু অতিরিক্ত পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস প্রয়োজন হতে পারে:
ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস (Acne):
- কারণ: অতিরিক্ত তেল, মৃত কোষ ও ব্যাকটেরিয়ার সংমিশ্রণে ছিদ্র বন্ধ হয়ে যাওয়া। স্ট্রেস, হরমোন, খাদ্যাভ্যাসও ভূমিকা রাখে।
- টিপস:
- এক্সফোলিয়েশন: সপ্তাহে ১-২ বার (বেশি নয়) কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহার করুন। স্যালিসিলিক অ্যাসিড (BHA – 0.5%-2%) ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে তেল ও মৃত কোষ দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকর। জেন্টল স্ক্রাব (ফিজিক্যাল) ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ঘষাঘষি কম করবেন। (এক্সফোলিয়েশন নিচে বিস্তারিত)।
- টার্গেটেড ট্রিটমেন্ট: ব্রণর উপর ও আশেপাশে স্যালিসিলিক অ্যাসিড বা বেনজয়িল পারঅক্সাইড (Benzoyl Peroxide – 2.5%-5%) সমৃদ্ধ স্পট ট্রিটমেন্ট লাগান। বেনজয়িল পারঅক্সাইড ব্যাকটেরিয়া মারে। শুরুতে কম ডোজ দিয়ে দেখুন, শুষ্কতা হতে পারে। রাতে লাগালে ভালো কাজ করে।
- প্রোডাক্ট: ‘নন-কমেডোজেনিক’ ও ‘অয়েল-ফ্রি’ লেখা আছে এমন প্রোডাক্ট বেছে নিন।
- ধৈর্য: ব্রণ সারতে সময় লাগে (৪-৮ সপ্তাহ)। এক সপ্তাহে না সারলেই প্রোডাক্ট বদলাবেন না বা জোরে ঘষবেন না।
- চিকিৎসক: গুরুতর বা সিস্টিক ব্রণ হলে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্ট দেখান। মুখে খাওয়ার ওষুধ (অ্যান্টিবায়োটিক, আইসোট্রেটিনয়িন) প্রয়োজন হতে পারে।
কালো দাগ ও অসম রং (Hyperpigmentation/Dark Spots):
- কারণ: ব্রণ, কাটা-ছেঁড়া, সূর্যের ক্ষতি বা বার্ধক্যজনিত কারণে ত্বকে অতিরিক্ত মেলানিন উৎপাদন।
- টিপস:
- সানস্ক্রিন: এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ! সূর্য কালো দাগ আরও গাঢ় করে। SPF 30+ ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন প্রতিদিন, বাধ্যতামূলকভাবে।
- ভিটামিন সি সিরাম: শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মেলানিন উৎপাদন কমায়, উজ্জ্বলতা বাড়ায়। সকালে ক্লিনজিংয়ের পর, ময়েশ্চারাইজারের আগে ব্যবহার করুন।
- নিয়াসিনামাইড (Niacinamide – Vitamin B3): মেলানিন ট্রান্সফার বাধা দেয়, ত্বকের টোন সমান করে, তেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং শক্তিশালী করে। দিনে বা রাতে যেকোনো সময় ব্যবহার করা যায়।
- রেটিনয়েডস (Retinoids): কোষের রিনিউয়াল বাড়ায়, মৃত কোষ সরায় এবং কালো দাগ মিশিয়ে দিতে সাহায্য করে। (রেটিনয়েডস নিচে বিস্তারিত)। এক্সফোলিয়েশন: নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন মৃত কোষ সরিয়ে নতুন, উজ্জ্বল ত্বক আসতে সাহায্য করে।
- ধৈর্য: কালো দাগ মিশতে কয়েক মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
শুষ্ক, রুক্ষ ও ফ্ল্যাকি ত্বক (Dry, Rough & Flaky Skin):
- কারণ: শীতকাল, শুষ্ক আবহাওয়া, গরম পানি দিয়ে গোসল, কঠোর সাবান, অপুষ্টি, বা কিছু চিকিৎসা অবস্থা।
- টিপস:
- গোসল: গরম পানির বদলে হালকা গরম বা ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন। দীর্ঘ সময় গোসল করবেন না। হাইড্রেটিং বডি ওয়াশ বা সিন্ডেট বার ব্যবহার করুন।
- ময়েশ্চারাইজার: মুখের পাশাপাশি শরীরের শুষ্ক অংশেও (বিশেষ করে হাত-পা) ময়েশ্চারাইজার দিন। গোসলের পর ৩ মিনিটের মধ্যে লাগালে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট (ভ্যাসলিন, শিয়া বাটার) লোশনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
- হিউমেক্ট্যান্টস: হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট ত্বকে পানি আকর্ষণ করে।
- এক্সফোলিয়েশন: সপ্তাহে ১ বার জেন্টল স্ক্রাব বা ল্যাকটিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট ব্যবহার করে মৃত, শুষ্ক চামড়া সরিয়ে ফেলুন।
- পানি পান: শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখুন পর্যাপ্ত পানি পান করে।
- বার্ধক্যজনিত লক্ষণ (Aging Signs: Fine Lines, Wrinkles, Loss of Firmness):
- কারণ: বয়স, সূর্যের ক্ষতি (ফটোএজিং), ধূমপান, মাইমিক এক্সপ্রেশন, জিনেটিক্স।
- টিপস:
- সানস্ক্রিন: সূর্য বার্ধক্যের ৯০% কারণ! প্রতিদিনের সানস্ক্রিনই সবচেয়ে কার্যকর অ্যান্টি-এজিং প্রোডাক্ট।
- রেটিনয়েডস (Retinoids): সোনার মানদণ্ড। কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, বলিরেখা কমায়, ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে। শুরু করুন রেটিনল দিয়ে (0.1% – 0.3%)। (বিস্তারিত নিচে)।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস: ভিটামিন সি সিরাম (সকালে), নিয়াসিনামাইড (রাতে) ত্বককে ফ্রি রেডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং কোলাজেন সাপোর্ট করে।
- পেপটাইডস (Peptides) ও গ্রোথ ফ্যাক্টরস: কিছু ক্রিমে থাকে, ত্বককে ফার্ম রাখতে সাহায্য করে।
- হায়ালুরোনিক অ্যাসিড: ত্বককে প্লাম্প ও হাইড্রেটেড দেখায়, রুক্ষ ভাব কমায়।
এক্সফোলিয়েশন ও রেটিনয়েডস: গভীর যত্নের চাবিকাঠি (পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস এর উন্নত ধাপ)
এক্সফোলিয়েশন (Exfoliation): ত্বকের মৃত কোষ সরানো।
- কেন? ত্বক নিয়মিত মৃত কোষ ত্যাগ করে। এই কোষ জমে গেলে ত্বক নিষ্প্রাণ, রুক্ষ দেখায়, ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায় (ব্রণ সৃষ্টি করে) এবং অন্যান্য স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের কার্যকারিতা কমে।
- প্রকারভেদ:
- ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশন (Scrubs): ছোট ছোট দানাদার কণা দিয়ে (চিনি, লবণ, জোজোবা বিডস, সেলুলোজ) হালকা ঘষে মৃত কোষ সরানো। পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস: খুব জোরে ঘষবেন না! সপ্তাহে ১ বারই যথেষ্ট। সংবেদনশীল ত্বকে এড়িয়ে চলুন বা খুব জেন্টল স্ক্রাব নিন।
- কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন (Chemical Exfoliants): এসিড বা এনজাইম ব্যবহার করে মৃত কোষের মধ্যকার বন্ধন ভেঙে দেয়। এটি আরও সমানভাবে কাজ করে এবং ফিজিক্যাল স্ক্রাবিংয়ের চেয়ে বেশি কার্যকর। প্রধান দুই প্রকার:
- এএইচএ (AHA – Alpha Hydroxy Acids): গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড। পানিতে দ্রবণীয়, ত্বকের উপরিভাগে কাজ করে। উজ্জ্বলতা বাড়ায়, হালকা বলিরেখা কমায়, শুষ্কতা দূর করে। রাতে ব্যবহার ভালো (সূর্যের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে)।
- বিএইচএ (BHA – Beta Hydroxy Acid): স্যালিসিলিক অ্যাসিড। তেল-দ্রবণীয়, ত্বকের গভীরে ছিদ্রে প্রবেশ করে তেল ও মৃত কোষ দূর করে। তৈলাক্ত, ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য আদর্শ। দিনে বা রাতে ব্যবহার করা যায়।
- কীভাবে?
- শুরু করুন সপ্তাহে ১ বার (বিশেষ করে BHA বা শক্তিশালী AHA) দিয়ে।
- ক্লিনজিংয়ের পর, টোনার বা সিরাম হিসেবে লাগান। হাতে নিয়ে সরাসরি ত্বকে বা কটন প্যাডে নিয়ে হালকা হাতে মুছে নিন।
- বেসিক রুটিনের সাথে মেলান: এক্সফোলিয়েট করার দিন রেটিনয়েড ব্যবহার করবেন না। ত্বক জ্বালা করতে পারে।
- পরিমাণ: অল্পই যথেষ্ট। ২-৩ ফোঁটা সিরাম বা কটন প্যাডে সামান্য।
- পরবর্তী ধাপ: এক্সফোলিয়েশনের পর ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না।
- বাংলাদেশে প্রাপ্যতা: দ্য অর্ডিনারি, পন্ড’স, নিভিয়া, গার্নিয়ার, প্যাওন’স বাউটি (Paula’s Choice – অনলাইনে) ইত্যাদি ব্র্যান্ডে ভালো AHA/BHA প্রোডাক্ট পাওয়া যায়।
- রেটিনয়েডস (Retinoids): ত্বক রিনিউয়ের শক্তিশালী উপাদান।
- কেন? ভিটামিন-এ ডেরিভেটিভ। এটি ত্বকের কোষের টার্নওভার বাড়ায়, কোলাজেন উৎপাদন উদ্দীপিত করে, মেলানিন উৎপাদন কমায় এবং ছিদ্র পরিষ্কার রাখে। ফলাফল: বলিরেখা কমে, ত্বক ফার্ম হয়, উজ্জ্বলতা বাড়ে, ব্রণ ও কালো দাগ কমে।
- প্রকারভেদ (শক্তি অনুযায়ী):
- রেটিনল (Retinol): ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) পাওয়া যায়। শক্তি তুলনামূলক কম, শুরু করার জন্য আদর্শ। (0.1% – 1%)।
- রেটিনালডিহাইড (Retinaldehyde): রেটিনলের চেয়ে শক্তিশালী, তবে প্রেসক্রিপশন রেটিনয়েডের চেয়ে কম জ্বালাপোড়া করে।
- ট্রেটিনয়িন (Tretinoin), ট্যাজারোটিন (Tazarotene), অ্যাডাপালিন (Adapalene): প্রেসক্রিপশন শক্তি। সবচেয়ে কার্যকর, তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (লালভাব, শুষ্কতা, পিলিং) বেশি হতে পারে। অ্যাডাপালিন ব্রণের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর।
- পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস: কীভাবে শুরু করবেন?
- ধীরে ধীরে শুরু করুন: শুরুতে সপ্তাহে শুধু ১-২ বার (সোম ও বৃহস্পতি) রাতে ব্যবহার করুন।
- স্যান্ডউইচ মেথড: ক্লিনজিংয়ের পর ত্বক সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে, ময়েশ্চারাইজার লাগান। তারপর ১৫-৩০ মিনিট পর রেটিনল লাগান। এতে জ্বালা কম হয়। ত্বক মানিয়ে গেলে সরাসরি ক্লিনজিংয়ের পর লাগানো যায়, তারপর ময়েশ্চারাইজার।
- পরিমাণ: মটরদানার সমান পরিমাণ পুরো মুখের জন্য যথেষ্ট। বেশি লাগালে জ্বালা বাড়বে, উপকার বাড়বে না।
- সানস্ক্রিন বাধ্যতামূলক: রেটিনয়েডস ত্বককে সূর্যের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে। পরদিন সকালে SPF 30+ সানস্ক্রিন অবশ্যই লাগাতে হবে।
- ধৈর্য ধরুন: ফলাফল দেখতে ৬-১২ সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাসও লাগতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (হালকা শুষ্কতা, পিলিং) প্রথম ২-৪ সপ্তাহে স্বাভাবিক। খুব জ্বালা করলে ব্যবহার কমিয়ে দিন বা ডার্মাটোলজিস্ট দেখান।
- এক্সফোলিয়েশন এড়িয়ে চলুন: রেটিনয়েড ব্যবহারের দিন বা পরের দিন ফিজিক্যাল বা কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন করবেন না।
- বাংলাদেশে প্রাপ্যতা: রেটিনল ক্রিম/সিরাম (দ্য অর্ডিনারি, সেরাভে (CeraVe), রোক (RoC), অলি হেনরিকসন (Ole Henriksen) ইত্যাদি অনলাইনে বা সিলেক্টেড স্টোরে)। প্রেসক্রিপশন রেটিনয়েডের জন্য ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রোডাক্ট বাছাই ও টাকা সাশ্রয়ের উপায় (বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস)
ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া প্রোডাক্টের জগতে সঠিক পছন্দ করা কঠিন। এই পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস গুলো মনে রাখুন:
- ত্বকের ধরন চিনুন: তৈলাক্ত, শুষ্ক, মিশ্র, সংবেদনশীল – আগেই জেনে নিন। প্রোডাক্ট লেবেল পড়ুন।
- সহজ শুরু করুন: প্রথমে বেসিক তিনটি (ক্লিনজার, ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন) দিয়েই শুরু করুন। সফল হলে ধীরে ধীরে (সপ্তাহ/মাস) অন্যান্য প্রোডাক্ট (সিরাম, এক্সফোলিয়েন্ট) যোগ করুন। একসাথে সব কিনে হতাশ হবেন না।
- ইনগ্রিডিয়েন্টস পড়ুন: কিছু মূল্যবান উপাদান চিনে রাখুন:
- হায়ালুরোনিক অ্যাসিড (Hydration)
- গ্লিসারিন (Hydration)
- সিরামাইড (Barrier Repair)
- নিয়াসিনামাইড (Brightening, Oil Control, Barrier)
- স্যালিসিলিক অ্যাসিড (BHA – Acne, Blackheads)
- গ্লাইকোলিক/ল্যাকটিক অ্যাসিড (AHA – Exfoliation, Brightness)
- রেটিনল (Anti-Aging, Acne)
- জিংক অক্সাইড/টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড (Mineral Sunscreen)
- অ্যালোভেরা (Soothing)
- এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত সুগন্ধি (Fragrance), রং (Dyes), কঠোর ডিটারজেন্ট (SLS/SLES – সোডিয়াম লরেথ সালফেট/সোডিয়াম লরিল সালফেট – অনেক ফেসওয়াশে থাকে, শুষ্কতা বাড়ায়), উচ্চ ঘনত্বের অ্যালকোহল (Alcohol Denat.) – বিশেষ করে সংবেদনশীল ত্বকে।
- টাকা সাশ্রয়: সব দামি প্রোডাক্ট ভালো নয়, সব সস্তা প্রোডাক্ট খারাপ নয়। ফার্মাসিউটিক্যাল ব্র্যান্ড (সিটাফিল, সিবা, বায়োডার্মা, লা রোচ-পোসে, অ্যাভিন) প্রায়ই ভালো মানের ও কম ইরিটেন্ট সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট দেয়। মাঝারি দামের ব্র্যান্ডেও (নিভিয়া মেন, গার্নিয়ার, ল’রিয়াল মেন) ভালো প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। স্যাম্পল টেস্ট: সম্ভব হলে ছোট প্যাক বা স্যাম্পল কিনে দেখুন ত্বকে মানিয়ে যায় কিনা।
- সম্পূর্ণতা দেখুন: প্রোডাক্টের মেয়াদ দেখে কিনুন। খোলার পর কতদিন ব্যবহার করা যায় (PAO – Period After Opening সিম্বল, যেমন 6M মানে ৬ মাস) তা দেখুন।
- বাংলাদেশি প্রাকৃতিক উপাদান: অ্যালোভেরা জেল, মধু (হালকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, ময়েশ্চারাইজিং), চন্দনের গুঁড়ো (শীতলীকরণ) – এগুলো কিছু সমস্যায় সহায়ক হতে পারে, তবে এগুলোই একমাত্র সমাধান নয় এবং বৈজ্ঞানিক প্রোডাক্টের বিকল্প নয়।
শুধু মুখ নয়, পুরো শরীরের যত্ন (পুরুষদের হোলিস্টিক স্কিন কেয়ার টিপস)
পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস শুধু মুখেই সীমাবদ্ধ নয়:
শরীর (Body):
- গোসলের সময় হাইড্রেটিং বডি ওয়াশ বা সিন্ডেট বার ব্যবহার করুন। কঠোর সাবান এড়িয়ে চলুন।
- গোসলের পর ভেজা শরীরে ময়েশ্চারাইজার লাগান (বডি লোশন বা ক্রিম)। শুষ্কতা, চুলকানি রোধ করে।
- শরীরের যে অংশগুলো রোদে পড়ে (হাত, পেছনের গলা) সেখানে সানস্ক্রিন লাগান।
- সপ্তাহে ১ বার শরীরের জন্য জেন্টল স্ক্রাব ব্যবহার করুন।
হাত (Hands):
- দিনে বহুবার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার কারণে হাত শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়।
- হাত ধোয়ার পর হ্যান্ড ক্রিম লাগান।
- বাইরে বেরুলে হাতের পেছনের দিকেও সানস্ক্রিন লাগান।
চোখের চারপাশ (Eye Area):
- চোখের চারপাশের ত্বক খুব পাতলা ও সংবেদনশীল।
- জেন্টল ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করুন। জোরে টানবেন না বা ঘষবেন না।
- হালকা টেক্সচারের আই ক্রিম বা জেল ব্যবহার করুন (যদি চোখের নিচে ডার্ক সার্কল বা ফাইন লাইন চিন্তার কারণ হয়)।
- ঠোঁট (Lips):
- ঠোঁট ফাটা রোধে লিপ বাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি (ভ্যাসলিন) ব্যবহার করুন।
- ঠোঁটেও SPF যুক্ত লিপ বাম ব্যবহার করুন, বিশেষ করে দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে।
অভ্যাসে পরিণত করুন: টেকসই স্কিন কেয়ারের জন্য টিপস
পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস জানার পরেও অনেকেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন না। এখানে কিছু কৌশল:
- রুটিনকে সহজ রাখুন: শুরুতে ৩টি ধাপ (ক্লিনজ, ময়েশ্চারাইজ, সানস্ক্রিন) দিয়েই শুরু করুন। ২-৩ মিনিটের বেশি সময় নেবে না। রুটিন সহজ হলে মেনে চলাও সহজ হয়।
- সময় বেঁধে নিন: সকালে নাশতা করার পর বা গোসলের পর, রাতে ঘুমানোর আগে – এমন সময় বেছে নিন যখন আপনি নিয়মিত করতে পারবেন। ফোনে রিমাইন্ডার দিতে পারেন।
- প্রোডাক্ট দৃশ্যমান জায়গায় রাখুন: বাথরুমের সিঙ্কের পাশে বা ড্রেসিং টেবিলে রাখুন, যাতে চোখে পড়ে।
- ধৈর্য ও বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা: ত্বকের উন্নতি দেখতে সময় লাগে। রাতারাতি পরিবর্তন আশা করবেন না। ৪-৬ সপ্তাহ ধরে নিয়মিত করুন, তারপর পার্থক্য খুঁজে দেখুন। ছবি তুলে রাখতে পারেন তুলনা করার জন্য।
- নিজের জন্য সময়: এই কয়েক মিনিট শুধু আপনার নিজের জন্য। এটাকে স্ট্রেস কমানোর মুহূর্ত হিসেবেও ভাবতে পারেন।
- ভুল হলে আবার শুরু করুন: কোনও দিন মিস করে গেলে বা ভুলে গেলে হতাশ হবেন না। পরের দিন আবার শুরু করুন।
পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য নয়; এটা স্বাস্থ্য সচেতনতা, আত্মসম্মানবোধ এবং নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার প্রকাশ। আপনার ত্বকই আপনার প্রথম প্রতিরক্ষা কবচ। যখন আপনি তা সুস্থ রাখেন, তখন আপনি শুধু ভালো দেখাই নন, অনুভবও করেন আত্মবিশ্বাসী, প্রাণবন্ত এবং জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত। বাংলাদেশের প্রখর রোদ, দূষণ আর ব্যস্ত জীবনের মাঝেও নিজের জন্য এই ছোট্ট সময়টুকু বের করুন। নিয়মিত বেসিক কেয়ার, বিশেষ করে SPF 30+ সানস্ক্রিনের ধারাবাহিক ব্যবহার, আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য ও তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে আজীবন। পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস কে জটিল ভাবার দরকার নেই – শুরু করুন আজই, অভ্যস্ত হয়ে উঠুন ধীরে ধীরে, আর উপভোগ করুন প্রতিদিনের আয়নায় আপনার উজ্জ্বল, স্বাস্থ্যকর প্রতিচ্ছবি। আপনার ত্বকই আপনার সবচেয়ে বড় অ্যাসেট; এর যত্ন নিন, আর আত্মবিশ্বাসে উজ্জ্বল হোন প্রতিটি দিন!
জেনে রাখুন (FAQs)
পুরুষদের জন্য স্কিন কেয়ার কি সত্যিই দরকার?
অবশ্যই! পুরুষদের ত্বক মেয়েদের চেয়ে পুরু ও বেশি তেল উৎপন্ন করে। শেভিং, রোদ, দূষণের চাপ ত্বকের ওপর পড়ে। নিয়মিত স্কিন কেয়ার ত্বককে সুস্থ রাখে, ব্রণ-কালো দাগ রোধ করে, অকাল বার্ধক্য ঠেকায় এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এটা স্বাস্থ্য সচেতনতার অংশ।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরুষদের স্কিন কেয়ার টিপস কোনটি?
প্রতিদিন SPF 30 বা তার বেশি ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করা। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি (UVA/UVB) ত্বকের ৯০% বার্ধক্য, কালো দাগ ও ক্যান্সারের জন্য দায়ী। মেঘলা দিন বা ঘরে থাকলেও সানস্ক্রিন লাগানো উচিত।তৈলাক্ত ত্বকের পুরুষরা ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন কেন?
ক্লিনজিং বা শেভিংয়ের পর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। শুষ্ক ত্বক তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে, ফলে তেলতেলে ভাব বেড়ে যায়! ‘অয়েল-ফ্রি’, ‘নন-কমেডোজেনিক’ লাইটওয়েট জেল বা লোশন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে ত্বকের আর্দ্রতার ভারসাম্য রক্ষা হয় এবং তেল নিঃসরণ কমে।শেভিংয়ের পর ত্বকে জ্বালা কমাতে কী করব?
- গরম পানির ভাপ দিয়ে ত্বক নরম করুন।
- জেন্টল শেভিং জেল/ক্রিম ব্যবহার করুন।
- ধারালো ব্লেডে দাড়ি গজানোর দিকে (গ্রেইন) শেভ করুন।
- হালকা চাপ দিন, জোরে চাপ দেবেন না।
- শেভিংয়ের পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে অ্যালকোহল-মুক্ত আফটারশেভ (অ্যালোভেরা জেল ভালো) লাগান।
- তারপর ময়েশ্চারাইজার লাগান।
পুরুষদের জন্য কোন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলো শুরুতে কেনা উচিত?
শুরুতে শুধু তিনটি জিনিস ফোকাস করুন: ১) আপনার ত্বকের ধরনের জন্য উপযুক্ত একটি জেন্টল ক্লিনজার, ২) আপনার ত্বকের ধরনের জন্য উপযুক্ত একটি ময়েশ্চারাইজার (অয়েল-ফ্রি জেল যদি তৈলাক্ত হয়), এবং ৩) SPF 30+ ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন। রুটিন স্থায়ী হলে ধীরে ধীরে অন্যান্য প্রোডাক্ট (এক্সফোলিয়েন্ট, সিরাম) যোগ করুন।- স্কিন কেয়ারে কতদিনে ফলাফল দেখা যায়?
সানস্ক্রিন ও ময়েশ্চারাইজারের প্রভাব (ত্বক কোমল ও হাইড্রেটেড লাগা) কিছু দিনের মধ্যেই টের পাবেন। ব্রণ বা কালো দাগের উন্নতি দেখতে ৪-৮ সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। বলিরেখা বা স্থায়ী কালো দাগের জন্য রেটিনল বা বিশেষ উপাদান (ভিটামিন সি, নিয়াসিনামাইড) ব্যবহার করলে কয়েক মাস ধৈর্য ধরতে হবে। ধারাবাহিকতা সাফল্যের চাবিকাঠি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।