নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: একসময় যেখানে সপ্তাহে একদিন কাঁচাবাজার বসত, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের সেই নয়াবাজার এখন প্রতিদিনই জমে ওঠে পুরাতন কাঠের আসবাবপত্র কেনাবেচার কেন্দ্র হিসেবে। দরজা-জানালা থেকে শুরু করে শোকেস, খাট, এমনকি লোহার তৈরি পণ্য—সবই মিলছে এখানে।
দুই দশক আগে বাজারের এক কোণে কয়েকটি পুরোনো দরজা নিয়ে বসেছিলেন মেজবাহ উদ্দীন। সেখান থেকেই নয়াবাজারের পুরনো কাঠের আসবাবপত্র ব্যবসার যাত্রা শুরু। তখন হয়তো কেউ ভাবেননি, তার ছোট্ট উদ্যোগ একদিন রূপ নেবে একটি বহুল আলোচিত ও বিস্তৃত বাজারে।
আজকের দিনে নয়াবাজার শুধু গাজীপুর নয়, আশপাশের জেলাগুলোতেও পরিচিত নাম। নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, এমনকি রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন শতাধিক ক্রেতা আসেন এখানে, নিজেদের ঘরের সাজসজ্জার সাশ্রয়ী সমাধান খুঁজতে।
এই বাজারের হৃদয়ে রয়েছেন মেজবাহ উদ্দীন। তিনি বলেন, “শুরুর দিকে শুধু দরজা বিক্রি করতাম। কিন্তু মানুষের চাহিদা বুঝে ধীরে ধীরে জানালা, চৌকাঠ, খাট, চেয়ার এমনকি টিনও সংগ্রহ করতে শুরু করি।” বর্তমানে তার দোকানে প্রায় সব ধরনের কাঠের আসবপত্রই পাওয়া যায়, তুলনামূলকভাবে অর্ধেক দামে।
ব্যবসায়ী মাহতাব দেওয়ান জানান, “শুরুতে ভাবতাম পুরোনো জিনিসে কেউ আগ্রহী হবে না। এখন দেখছি, এই ব্যবসাই আমাদের জীবনের প্রধান অবলম্বন হয়ে উঠেছে।”
সাশ্রয়ী দামের জন্যই নয়াবাজারে বারবার আসেন ক্রেতারা। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী হাসমত আলী বললেন, “নতুন দরজার খরচ দিতে পারছিলাম না। এখানে অল্প টাকায় ভালো দরজা পেয়ে গেলাম।”
স্থানীয় শামসুল ইসলাম জানান, “একই জায়গা থেকে দরজার পাশাপাশি ডাইনিং টেবিলও কিনেছি। এত কম দামে ঘর সাজানোর কথা কল্পনাও করিনি।”
পুরাতনের পাশাপাশি আধুনিকতার ছোঁয়াও লাগছে নয়াবাজারে। পুরনো জিনিসের সঙ্গে নতুন ডিজাইনের আসবাবপত্র তৈরির দোকানও গড়ে উঠছে। দক্ষ কারিগরেরা কাঠের কাজ করে দিচ্ছেন পছন্দের ডিজাইনে নতুন ফার্নিচার—তাও সাশ্রয়ী মূল্যে। ফলে এই বাজার শুধু পণ্যের নয়, কর্মসংস্থানেরও একটি বড় উৎসে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে বাজারটিতে ৫০টির বেশি দোকান রয়েছে, প্রতিটিতেই প্রতিদিন চলে জমজমাট বেচাকেনা। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজের ব্যস্ততায় সরব থাকে পুরো বাজার।
নিয়মিত আসা কয়েকজন ক্রেতা বললেন, “নয়াবাজার এখন আর শুধুই একটা বাজার নয়। এটা একটা জীবন্ত গল্প, যেখানে পুরাতন কাঠে লেখা হচ্ছে নতুন জীবনের প্রতিচ্ছবি।”
সবশেষে মেজবাহ উদ্দীনের সেই সূচনা কথাটিই যেন এই বাজারের মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছে—পুরাতন মানেই ফেলনা নয়। বরং তা হতে পারে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত। নয়াবাজার তাই শুধু একটি ভৌগোলিক স্থান নয়, এটি একটি উদ্যম, একটি স্বপ্ন ও এক অর্থনৈতিক আন্দোলনের নাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।