পুলিশে পদোন্নতি ও বদলির তদবির এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এটি আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভাতেও আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। রবিবার (২৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আইজিপি বাহারুল আলমকে নির্দেশ দেন, তদবিরকারী কর্মকর্তাদের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই পুলিশের বিভিন্ন পদে পদোন্নতি ও বদলির জন্য অনেকের তদবির পাওয়ার কথা তুলে ধরেন। এ সময় আইজিপি বাহারুল আলমও স্বীকার করেন, তাঁর কাছে এ ধরনের তদবির আসে।
উপদেষ্টার নির্দেশ অনুযায়ী, যে কর্মকর্তা তদবির করবেন, তাঁকে পদোন্নতি বা বদলি না করে ধরে রাখতে হবে। কারণ এই কর্মকর্তারা রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে গিয়ে ধরনা দেওয়ার প্রবণতা দেখান।
সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশে তদবির নিয়ে আলোচনার বিষয়টি অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, পদোন্নতি বা বদলির বিষয়ে অনেকে অনুরোধ করেন, কিন্তু এগুলো সম্পূর্ণ পুলিশের নিজস্ব বিষয়, এবং যাঁরা তদবিরের অনুরোধ পান, তাঁরা প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২১ অক্টোবর পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদার ৮০ জন কর্মকর্তাকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পদোন্নতি তিনটি পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়েছে।
এই পদোন্নতির মধ্যে ছিলেন পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ৩৩ জন, পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) ১৮ জন এবং পরিদর্শক (সশস্ত্র) ২৯ জন। এ ছাড়া পুলিশের কনস্টেবল থেকে এএসআই পদেও পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। শূন্য পদে এসব নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কনস্টেবল থেকে এএসআই ও পরিদর্শক থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি ও বদলি নিয়ে মূলত এ তদবিরের অভিযোগ।
পদোন্নতি-বদলিতে অনিয়ম থাকলে তা নিয়ে লিখতে সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তাঁর ভাষায়, যদি কেউ টাকা খেয়ে বদলি করান, গণমাধ্যম যেন তা নির্দ্বিধায় লেখে। বদলি-বাণিজ্য বন্ধ করতে পারলে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে আপত্তি আসেনি। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।
চট্টগ্রামের রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই এলাকায় আগে থেকেই সমস্যা ছিল। এখনো কিছু ঘটনা ঘটছে, তবে আগের তুলনায় অনেক কমেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনুমোদন দেওয়া প্রসঙ্গে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি চাইলে আপনাকেও দেওয়া হবে।’
উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিমের ব্যবহার কমিয়ে আনার বিষয়েও আলোচনা হয়। বর্তমানে গ্রাহকপ্রতি সিম নিবন্ধন করা যায় ১০টি। সেটি কমিয়ে ৫টিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আগেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের আগে গ্রাহকপ্রতি সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। কারণ, একজনের সিম কার্ড ব্যবহার করে আরেকজন অপরাধ করেন, তাতে প্রকৃত দোষী ব্যক্তি অনেক সময় ধরা–ছোঁয়ার বাইরে থাকেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



