প্রকৃতি যখন বসন্তে নবজীবন পায়, এপ্রিল মাসে আকাশে উদয় হয় একটি বিশেষ পূর্ণিমা — যাকে বলা হয় পিঙ্ক মুন বা গোলাপি চাঁদ। তবে নামের দ্যোতনা সত্ত্বেও, এই চাঁদ গোলাপি রঙ ধারণ করে না। বরং, এই নামকরণ বসন্তের শুরুতে ফোটার এক প্রকার ফুলের প্রতি শ্রদ্ধা, যার সঙ্গে বহু সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাস জড়িয়ে আছে।
পূর্ণিমা পিঙ্ক মুন: নামকরণের ইতিহাস ও গুরুত্ব
পূর্ণিমা পিঙ্ক মুন হলো এপ্রিল মাসের পূর্ণিমা চাঁদ, যা ঐতিহ্যগতভাবে বসন্তের আগমনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই বছরের (২০২৫) পিঙ্ক মুন পূর্ণিমা ঘটবে ১২ এপ্রিল রাত ৮:২২ মিনিটে (ET)। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলে এটি দেখা যাবে ১৩ এপ্রিল ভোরবেলায়।
Table of Contents
চাঁদের রঙ গোলাপি না হলেও এর নাম এসেছে Phlox subulata নামক এক প্রকারের বসন্তকালীন বুনো ফুল থেকে, যাকে মস ফ্লক্স বা ক্রিপিং ফ্লক্স বলা হয়। এই ফুলটি পূর্ব ও মধ্য আমেরিকায় বসন্তে ফোটে এবং এর রঙ উজ্জ্বল গোলাপি।
২০২৫ সালে এই পিঙ্ক মুনের আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে এটি একটি মাইক্রোমুন — অর্থাৎ চাঁদ যখন পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করে, তখন সেটি অপেক্ষাকৃত ছোট দেখায়। NASA-র বিজ্ঞানী Dr. Noah Petro ব্যাখ্যা করেছেন যে চাঁদের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার হওয়ায় এর দূরত্ব বছরে বিভিন্ন সময়ে কম-বেশি হয়।
পিঙ্ক মুন-এর আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য
পূর্ণিমা পিঙ্ক মুন শুধুমাত্র একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা নয়; এটি অনেক ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। খ্রিস্টান ধর্মমতে, এটি পাস্কাল মুন, যা ইস্টার রবিবার নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। বসন্ত বিষুবের পর প্রথম পূর্ণিমা হিসেবে এটি খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডারে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
হিন্দুদের জন্য এটি হনুমান জয়ন্তী — ভগবান হনুমানের জন্মোৎসব। এছাড়াও, বৌদ্ধদের কাছে এটি বাক পোয়া নামে পরিচিত, যা স্মরণ করে বুদ্ধের ঐতিহাসিক শ্রীলঙ্কা সফর ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদাহরণ।
নেটিভ আমেরিকান আদিবাসীদের কাছে এপ্রিলের পূর্ণিমার ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে, যেমন:
- মুন হোয়েন দ্য ডাক্স কাম ব্যাক – লাকোটা জাতি
- মুন হোয়েন দ্য গিস লে এগস – ডাকোটা জাতি
- বাডিং মুন অফ প্ল্যান্টস অ্যান্ড শ্রাবস – ট্লিঙ্গিত জাতি
- স্যাকার মুন – অনিশিনাবি জাতি
২০২৫ সালের এপ্রিল পূর্ণিমা কেন বিশেষ?
এই বছরের পিঙ্ক মুনকে বিশেষ করে তুলেছে এর মাইক্রোমুন রূপ। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৩০,০০০ মাইল বেশি দূরে অবস্থান করবে বছরের সবচেয়ে বড় সুপারমুনের তুলনায়। ফলে এটি ১৪% ছোট এবং ৩০% কম উজ্জ্বল দেখাবে।
অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পার্থক্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে, যদিও খালি চোখে এটি স্পষ্ট নয়।
২০২৫ সালের অন্যান্য পূর্ণিমার তারিখ
পিঙ্ক মুন ছাড়াও আরও অনেক চন্দ্রঘটনা আপনার ক্যালেন্ডারে রাখার মতো। নিচে দেওয়া হলো বাকি পূর্ণিমাগুলোর তারিখ ও নাম:
- মে ১২ – ফ্লাওয়ার মুন
- জুন ১১ – স্ট্রবেরি মুন
- জুলাই ১০ – বাক মুন
- আগস্ট ৯ – স্টারজিয়ন মুন
- সেপ্টেম্বর ৭ – কর্ন মুন
- অক্টোবর ৬ – হারভেস্ট মুন
- নভেম্বর ৫ – বিবার মুন
- ডিসেম্বর ৪ – কোল্ড মুন
দেখার সেরা উপায়
- আলোকদূষণহীন স্থান বেছে নিন
- বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপ ব্যবহার করুন
- আবহাওয়া পূর্বাভাস দেখুন
- চাঁদ ওঠার পরপরই দেখুন
শেষ কথা
আপনি যদি আধ্যাত্মিক অনুরাগী হন বা শুধুই মহাকাশ প্রেমিক — পূর্ণিমা পিঙ্ক মুন প্রকৃতির ছন্দ এবং মানব সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগের এক চমৎকার উপলক্ষ।
FAQs (প্রশ্নোত্তর)
এপ্রিলের পূর্ণিমা চাঁদকে পিঙ্ক মুন বলা হয় কেন?
এই নাম এসেছে একটি গোলাপি রঙের বসন্তকালীন বুনো ফুল (Phlox subulata) থেকে, যা এপ্রিল মাসে ফোটে।
চাঁদ কি সত্যিই গোলাপি দেখায়?
না, চাঁদ সাধারণত সাদা বা সোনালি রঙের দেখায়। “পিঙ্ক” শব্দটি প্রতীকী।
মাইক্রোমুন কী?
মাইক্রোমুন হয় যখন পূর্ণিমা চাঁদ পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করে এবং আকারে ছোট দেখায়।
পিঙ্ক মুন ও ইস্টার-এর মধ্যে কী সম্পর্ক?
খ্রিস্টান ক্যালেন্ডারে, বসন্ত বিষুবের পর প্রথম পূর্ণিমাই হলো পাস্কাল মুন, যা ইস্টারের তারিখ নির্ধারণ করে।
পরবর্তী পূর্ণিমা কবে?
পরবর্তী পূর্ণিমা ফ্লাওয়ার মুন, যা হবে ১২ মে, ২০২৫ তারিখে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।