শাকিল আনোয়ার, বিবিসি নিউজ বাংলা: রুশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০ মাইল দূরে ইউক্রেনে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের চিকিৎসক ড খালেদা নাসরিন যখন ফোন ধরলেন তখন তিনি ট্রেনের ভেতর।
গতকাল গভীর রাতে দুই ছেলেকে নিয়ে কারকিভ থেকে রওয়ানা হয়েছেন এক হাজার মাইল দূরে পশ্চিম ইউক্রেনের শহর লাভবে।
লাভবে তিনি যাচ্ছেন কারণ শহরটি পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে। ফলে, বেশি বিপদ দেখলে পোল্যান্ডে ঢুকে যেতে পারবেন। তার ব্যবসায়ী স্বামী আপাতত খারকিভেই রয়ে গেছেন।
১৯৮৬ সাল থেকে পরিবার নিয়ে খারকিভে বসবাস করছেন খালেদা নাসরিন। ছুটি পাননি বলে চাকরি ছেড়ে যেতে হচ্ছে। দুপুরের দিকে তার সাথে যখন কথা হচ্ছিল তখন তার ট্রেন সবে রাজধানী কিয়েভের ট্রেন স্টেশনের ভেতর ঢুকছে।
বললেন, খুবই মানসিক চাপে রয়েছেন কারণ সকালে টেলিফোনে তার স্বামী জানিয়েছেন খারকিভে একাধিক বিস্ফোরণ হয়েছে এবং শহরে প্রচণ্ড আতংক।
বললেন ঘরবাড়ি ছেড়ে আসার কারণে এবং কবে ফিরতে পারবেন কি পারবেন তা নিয়ে তার দুই ছেলেও মানসিকভাবে মুষড়ে পড়েছে।
“বন্ধু ও স্কুল ছেড়ে যেতে হচ্ছে বলে আমার ১২ বছরের ছোটো ছেলের মন খুবই খারাপ।”
গতরাতে ট্রেনে ওঠার সময় পর্যন্ত জানতেন না যুদ্ধ আদৌ লাগবে কিনা। লেগে যাওয়ার পর এখন স্বামীকে নিয়ে বাড়তি উৎকণ্ঠায় পড়ে গেছেন খালেদা নাসরিন।
বোমার শব্দে ঘুম ভাঙে রুমির
ইউক্রেনের সময় ভোর পাঁচটায় বিকট একটা বোমার শব্দে ঘুম ভাঙে মারিয়োপোল শহরে বাংলাদেশি ছাত্র আহমেদ ফাতেমি রুমির। মাত্র দুমাস আগে বাংলাদেশ থেকে সেখানে মারিয়োপোল স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি পড়তে
সহকর্মী মোয়াজ্জেম হোসেনকে রুমি জানান শহরের বিভিন্ন দিক থেকে আনুমানিক আটটি বা দশটি হামলা হয়েছে বলে তারা শুনছেন। তারপর থেকে ভয়ের মধ্যে পড়ে যান।
“ইউক্রেন সরকার আইন জারি করে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ফলে ইচ্ছা করলেও আমি এখান থেকে মুভ করতে পারছি না,” বলেন আহমেদ ফাতেমি রুমি।
বাজার দোকান, শপিং মল আর ব্যাংকে মানুষের প্রচুর ভিড় এবং আতঙ্কিত মানুষ মজুত করার জন্য শুকনো খাবার কিনতে শুরু করেছে বলে তিনি জানান। “প্রতিটা এটিএম বুথের সামনে কম করে হলেও ৬০ থেকে ১০০ জন মানুষ লাইন দিয়ে আছে এবং টাকা তুলছে।”
তার বিশ্ববিদ্যালয় সকাল ১০টার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
তার বিশ্ববিদ্যালয়ে দশ থেকে বারো জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে বলে তিনি জানান। মারিয়োপোল ছেড়ে নিরাপদ কোন শহরে যাবার জন্য তারা কজন রেল স্টেশন ও বাস স্টপে দৌড়াদৌড়ি করছেন সকাল থেকে। “লাভবে যাওয়ার চেষ্টা করছি কারণ কিয়েভের অবস্থাও ভালো নয়।”
কয়েক ঘণ্টা পর রুমি বিবিসিকে জানান তিনি এবং আরো কজন বাংলাদেশি ছাত্র শেষ পর্যন্ত ট্রেনে করে কিয়েভে রওয়ানা হচ্ছেন।
ইউক্রেনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। পোল্যান্ডের ওয়ারসতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ইউক্রেনে বাংলাদেশিদের সাথে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা বিবিসির কাদির কল্লোলকে বলেন, ইউক্রেনে হাজার দেড়েক বাংলাদেশি রয়েছে যাদের মধ্যে শ পাঁচেকের সাথে তারা যোগাযোগ রাখছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের ট্রানজিট ভিসায় পোল্যান্ডে এনে দেশে পাঠানোর চেষ্টা শুরু করেছেন তারা।
জানা গেছে পোল্যান্ড সরকার ইউক্রেনে বসবাসরত বিদেশী নাগরিকদের ১৫ দিনের জন্য ট্রানজিট ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাতে তারা দেশে চলে যেতে পারেন।
তবে বাংলাদেশিরা যাতে কিয়েভে না গিয়ে সীমান্তে সেই ভিসা পেতে পারে তার জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে পোলিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।