মাহমুদ আহমদ : বিশ্ব আজ আতঙ্কগ্রস্ত, বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোও ভীতসন্ত্রস্ত। ঐশী আজাব এবং শাস্তি বৃষ্টির মতো বর্ষিত হচ্ছে।
বলা যায় সবাই আজ মহাবিপদের সম্মুখীন। একের পর এক বালা-মুসিবত কেন আসছে? এসব নিয়ে কি কখনও ভেবে দেখেছি আমরা? এসবের মূল কারণ হল- পবিত্র কোরআনের অমিয় বাণী বিশ্ব জগতের কাছে ব্যর্থ হয়েছে।
তাই মানবগ্রহের ওপর আল্লাহতায়ালা এসব বালা-মুসিবত চাপিয়ে দিয়েছেন। এখন একমাত্র তিনিই আমাদের রক্ষা করতে পারেন।
আজ বিশ্বমানবতা আল্লাহপাকের স্মরণ থেকে দূরে চলে গেছে এবং আল্লাহতায়ালাকে ভুলতে বসেছে। অনেকে তো আল্লাহপাকের অস্তিত্বই স্বীকার করতে চায় না। আর যারা আল্লাহর ওপর এবং আল্লাহর পাঠানো কিতাব-কোরআনের ওপর বিশ্বাস রাখে, তারাও কোরআনের প্রকৃত শিক্ষা বিকৃত করে এমন সব মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নিয়েছে, যা সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে আলো-বাতাসকে পর্যন্ত বিষাক্ত করে ফেলেছে।
আমাদের অন্যায়ের মাত্রা এতটাই ছাড়িয়েছে, প্রতিটি অণু-পরমাণু যেন পাপে ভরপুর হয়ে গেছে। আমি ব্যবসায়-বাণিজ্য, চাকরি যাই করি না কেন, সব কিছুতেই যেন অসততাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। এমনকি মুখে আমি যা বলছি তা-ও মিথ্যা বলছি, আল্লাহর জন্য টুটাফাটা যে নামাজ আদায় করছি সেখানেও দুনিয়ার চিন্তায় এমনভাবে মগ্ন যে- কখন নামাজ শেষ করে আবার দুনিয়ায় ঝুট-ঝামেলায় ফিরে আসব সর্বক্ষণ এ ধান্ধায় থাকি।
তাই আমরা যে একের পর এক মহামারী ও বালা-মুসিবতের সম্মুখীন হচ্ছি এর মূল কারণ আমাদের কাজকর্ম। আমার আমলই এসব মহামারী ডেকে আনছে। যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- ‘মানুষের নিজের কারণেই স্থলে ও জলে বিশৃঙ্খলা ছেয়ে যায়। এর পরিণামে তিনি তাদের কোন কোন কাজের শাস্তির স্বাদ ভোগ করাবেন যাতে তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে পারে’ (সূরা আর রুম, আয়াত : ৪১)।
যেহেতু আমাদের পাপের আঁধারে পৃথিবী ডুবে গেছে, তাই বিভিন্ন প্রাকৃতিক আজাব তা করোনাভাইরাসের আক্রমণ বলুন বা ঘূর্ণিঝড় সিডর, বুলবুল, ভূমিকম্প- সবই মূলত আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মানবগ্রহের জন্য সতর্ক সংকেত। আল্লাহ আমাদের সতর্ক করছেন যে, হে আমার বান্দারা, তোমরা সতর্ক হও, তোমরা অসৎ পথ ছেড়ে দিয়ে সৎ পথে চল, তোমরা সহজ-সরল পথ অবলম্বন কর।
বিষয়টিকে এভাবেও বলা যায়, সমাজ ও দেশের বেশিরভাগ মানুষ যখন পাপ, ব্যভিচার, অন্যায় এবং নিজ প্রভুকে ভুলতে বসে তখনই আল্লাহতায়ালা তার পক্ষ থেকে সতর্ক হওয়ার জন্য শাস্তি দেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘আর তোমাদের কর্মের কারণেই তোমাদের ওপর বিপদ নেমে আসে। অথচ তিনি অনেক বিপদ এমনিতেই উড়িয়ে দেন’ (সূরা আশ শুরা : ৩০)।
আমাদের অন্যায়ের কারণে আল্লাহর আজাব এসেছে। বালা-মুসিবত যখন ঐশী হয় তখন তা থেকে রক্ষা করার মালিকও তিনিই। যেভাবে কোরআনে উল্লেখ রয়েছে ‘তুমি বল, আল্লাহর হাত থেকে কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে যদি তিনি তোমাদের কোনো শাস্তি দিতে চান? অথবা তিনি যদি তোমাদের প্রতি দয়া করতে চান তবে কে তোমাদের বিরত করতে পারে?’ (সূরা আহজাব, আয়াত ১৭)।
আল্লাহপাক আমাদের বারবার সতর্ক করছেন। এরপরও যদি আমাদের হুশ না হয় তাহলে আমরাও আদ ও সামুদ জাতিসহ অন্যান্য জাতি যেভাবে তাদের অপকর্মের জন্য ধ্বংস হয়ে গেছে, সেদিকেই এগোচ্ছি না তো?
তিনি যেহেতু রহমানুর রাহিম, তিনি চান না তার বান্দারা যেন কোনোভাবে কষ্ট পাক। তাই তিনি বারবার সতর্ক করছেন, তার বান্দারা যেন সঠিক পথে চলে।
সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে রক্ষার এখন একটিই মাত্র রাস্তা খোলা আছে আর তাহল রহমান খোদার প্রকৃত বান্দায় পরিণত হওয়া, আল্লাহর অধিকার এবং বান্দার অধিকার যথাযথ আদায় করা, নিজেকে সংশোধন করা এবং নিজ আত্মাকে ধুয়ে মুছে পবিত্র করা।
দয়াময় প্রভু আমাদের নিরাশ হতে বারণ করেছেন। তিনি আমাদের সুপথে ফিরে আসার জন্য ক্ষমার সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সব গুনাহ মাফ করবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা যুমার, আয়াত : ৫৩)। হে দয়াময় প্রভু!
আমরা যদি আপনার অবাধ্য হই তাহলে হয়তো আপনি নতুন মানবজাতি সৃষ্টি করবেন, যারা আপনার কোরআন মেনে জীবনযাপন করবে। আপনি আমাদের আপনার ক্ষমার মায়াবী চাদরে জড়িয়ে নিন। আমিন।
লেখক : ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।