হুমকিস্বরূপ উল্কাকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো দূরপাল্লার ধূমকেতুসমূহ, যাদের শুরু সুদূর ওর্ট মেঘ থেকে, প্রায় ১০ হাজার জ্যোতির্বিদ্যা একক দূরত্ব থেকে। এসব ধূমকেতুর পৃথিবীকে আঘাত করার সম্ভাবনা কম, উপরন্তু বৃহস্পতি গ্রহও তাদের হাত থেকে আমাদের কিছুটা রক্ষা করে।
এরপর রয়েছে অল্প পর্যাবৃত্ত সময়ের ধূমকেতুরা, যাদের অপসূর বৃহস্পতির কাছাকাছি এবং যারা প্রতি পাঁচ–ছয় বছরে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। মনে করা হয়, এদের মধ্যে কিছু পৃথিবীকে নিয়মিত আঘাত করে। এরপর আসছে গ্রহাণুপুঞ্জ থেকে আসা গ্রহাণুরা। আমরা মনে করছি, পৃথিবীর সঙ্গে বেশির ভাগ সংঘর্ষ এদের সঙ্গেই হয়। কিছু গবেষণা দেখাচ্ছে, বৃহস্পতি দূরের ধূমকেতু থেকে আমাদের রক্ষা করলেও কাছের ধূমকেতু বা গ্রহাণু থেকে হয়তো রক্ষা করতে সক্ষম নয়।
বিজ্ঞানীরা বসে নেই। তাঁরা সমাধানের পর সমাধান দিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে প্রস্তাব ছিল পারমাণবিক বোমা। এই বোমা গ্রহাণুর কিছু ওপরে বিস্ফোরিত করলে হয় তার শক্তিতে গ্রহাণু তার কক্ষপথ থেকে সরে যাবে, অথবা ভেতরে ঘটালে গ্রহাণু থেকে উদ্গিরিত গ্যাস রকেটের মতো কাজ করবে এবং গ্রহাণুকে গ্যাসের উল্টো পথে চালনা করবে। একটি বড় মহাকাশযান দিয়ে সরাসরি আঘাতের ধারণাও আছে।
২০০৫ সালে নাসার Deep Impact মহাকাশযান সফলভাবে Temple 1 নামে একটু ছোট ধূমকেতুকে আঘাত করে। যদিও এতে Temple 1-এর কক্ষপথের খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু এ রকমভাবে কোনো গ্রহাণুকে যে সরাসরি আঘাত করা সম্ভব, সেটা প্রমাণিত হলো। আরও প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে একটি মহাকাশযানকে গ্রহাণুর চারপাশে প্রদক্ষিণ করানো, পারস্পরিক মাধ্যাকর্ষণের ফলে তাতে গ্রহাণুর কক্ষপথ বদলাবে। রয়েছে লেজার রশ্মি দিয়ে কিংবা সূর্যের আলোকে লেন্সের মাধ্যমে ঘন করে গ্রহাণুকে উত্তপ্ত করে তার গতিপথ বদলানো।
নিকটবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ গ্রহাণু আবিষ্কার ও ভবিষ্যতের পৃথিবী অভিমুখী গ্রহাণুদের ধ্বংসের উপায় নির্ধারণ করে জ্যোতির্বিদেরা মানবজাতির এবং সমগ্র পৃথিবীর বেঁচে থাকার উপায় দেখাচ্ছেন। আমাদের মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও গঠন, নক্ষত্রদের শক্তির উৎস, কৃষ্ণগহ্বর—এসব রহস্যের সমাধান যেমন জ্যোতির্বিদ্যার অংশ, পৃথিবীর সুরক্ষাও এই বিজ্ঞানের একটি বিভাগ। আমার আশা এইভাবে জ্যোতির্বিদ্যা পৃথিবীর সব মানুষকে এক করার একটি উপায় বলে একদিন স্বীকৃতি পাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।