পৃথিবীর নামটির উদ্ভব কীভাবে হলো?

পৃথিবী

শ্বাস নিতে নিতে যেমন আমরা আলাদা করে শ্বাস নেওয়ার কথা ভুলে যাই, তেমনি গ্রহদের নামকরণের আলাপে পৃথিবীর কথা প্রায়ই ভুলে যাই আমরা। হয়তো জানেন, উইলিয়াম হার্শেল ইউরেনাস গ্রহটি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি এর নাম দিতে চেয়েছিলেন তৎকালীন রাজা তৃতীয় জর্জের নামে। গালভরা সেই নামটি ছিল ‘জর্জিয়াম সাইডাস’। তাঁর এ প্রচেষ্টা সফল হয়নি। গ্রিক আকাশদেবতার নামে গ্রহটির নাম রাখা হয় ইউরেনাস।

পৃথিবী

এ থেকে বুঝতেই পারছেন, আবিষ্কারকের ইচ্ছে, গ্রিক বা রোমান দেবতাদের নামের অনুকরণসহ নানাভাবে রাখা হয়েছে বিভিন্ন গ্রহের নাম। কিন্তু পৃথিবীর নামটি কীভাবে এল? ইংরেজি শব্দ ‘Earth’ এসেছে প্রাচীন এক ইংরেজি শব্দ থেকে। শব্দটি লেখা হয় এভাবে: eorðe। এর উৎপত্তি আবার একটি জার্মান শব্দ থেকে। সেই শব্দটির মূলের খোঁজ করলে পাওয়া যাবে *erþō শব্দটি।

এই শব্দটি ব্যবহার করে নানা ক্ষেত্রেই লাতিন ‘টেরা’ (terra) শব্দের অনুবাদ করা হয়। টেরা কথাটির অর্থ ভূমি, মাটি। গ্রিক শব্দ γῆ gē:-এর অর্থ করতেও এই শব্দটি ব্যবহৃত হতো। গ্রিক এই শব্দের অর্থও মাটি, ভূমি। অবশ্য মানুষের জগৎ, বিশ্বের পৃষ্ঠ বা গ্লোব (ভূগোলক) বোঝাতেও শব্দ দুটি ব্যবহৃত হতো। দেখা গেছে, প্রায় সব সভ্যতার মানুষই পৃথিবীর কথা বলতে গিয়ে ‘মাটি’ বা ‘ভূমি’র কথা ভেবেছে। সেখান থেকেই প্রেরণা নিয়েছে তারা। বাংলা ‘পৃথিবী’ শব্দটিও এসেছে এভাবেই।

‘পৃথিবী’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘পৃথ্বী’ থেকে। সংস্কৃত শব্দটি হলো पृथिवी। পৃথ্বী বলতে বোঝানো হতো পৌরাণিক ‘পৃথুর’ রাজত্ব। একই সঙ্গে শব্দটি ধরিত্রী বা ভূমি এবং সংশ্লিষ্ট দেবীকে বোঝাতেও ব্যবহৃত হতো। ‘পৃথ্বী’ শব্দের মূল অর্থ ‘বিস্তৃত’ বা ‘বড়’। প্রাচীন ভারতের মানুষ বিশ্বাস করত, পৃথিবী এক বিশাল বিস্তৃত ভূমি, যা স্রষ্টা জীবন ধারণের জন্য দান করেছেন। সেই থেকে এসেছে আজকের ‘পৃথিবী’ শব্দটি।

আসলে পৃথিবীর নাম কোনো একক মানুষ দেননি। স্বাভাবিক, এর তো আর কোনো আবিষ্কারক নেই! মাটির মানুষ, মাটিনির্ভর জীবনযাত্রায় ভূমিকে আপন করে নিয়েছে মা হিসেবে। তাদের সামষ্টিক অনুপ্রেরণা ও ভাবনায় মাটি বা ভূমি বোঝায়, এমন শব্দই হয়ে উঠেছে মানুষের এই নীল-সবুজ বিশ্বের নাম-পরিচয়।