আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে সমুদ্রতলের একটি অঞ্চলের নাম আটলান্টিস ম্যাসিফ। এটি একটি ডুবো পর্বত। মধ্য আটলান্টিক পর্বতচূড়ার সক্রিয় আগ্নেয়গিরি অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থিত। ম্যান্টলের বিভিন্ন অংশ তাপে ক্রমাগত গলে যায়, ভেসে ওঠে এখানে। ফলে এ অঞ্চলে বেশ কিছু আগ্নেয়গিরির জন্ম হয়েছে।
একই সঙ্গে সমুদ্রের পানি ম্যান্টলের আরও গভীরে প্রবেশ করার ফলে এর তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তৈরি হয় মিথেনের মতো গ্যাস; সমুদ্রতলের হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট বা জলতাপীয় ফাটলের মধ্য দিয়ে বুদবুদের মতো বেরিয়ে আসে সমুদ্রে। মাইক্রোবিয়াল লাইফ বা অতিখুদে জীবনের জ্বালানির যোগান হিসেবে কাজ করে এগুলো। বিজ্ঞানী জোহান লিসেনবার্গ একে বলছেন ‘রাসায়নিক রান্নাঘর’। তাঁর ভাষ্যে, ‘আটলান্টিক ম্যাসিফ জায়গাটিতে একধরনের রাসায়নিক রান্নাঘর আছে।’
এ অঞ্চল সম্পর্কে আরও জানতে বিজ্ঞানী জোহান লিসেনবার্গ ও তাঁর দল প্রাথমিকভাবে ম্যান্টল স্তরে ২০০ মিটার গভীর গর্ত খোঁড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ খনন কাজের জন্য তাঁরা ড্রিলিং জাহাজ জয়েডস রেজ্যুলুশন (JOIDES Resolution) ব্যবহার করেন।
এ জাহাজের কাজ হলো, সমুদ্রের তলদেশে ড্রিল করে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ২০২৩ সালে সমুদ্রের তলদেশে ম্যান্টল স্তরে খনন ও নমুনা সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হয় জাহাজটি। এ খননকাজ চলে প্রায় দুই মাস। এটি ইন্টারন্যাশনাল ওশেন ডিসকভারি প্রোগ্রামের অংশ। এ প্রকল্পের অর্থায়ন করে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন। বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তন, ভূতত্ত্ব এবং পৃথিবীর ইতিহাস আরও ভালোভাবে বুঝতে এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করেন।
খনন করা নমুনা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ম্যান্টল থেকে সংগৃহীত নমুনার তুলনায় এ অঞ্চলে পাইরোক্সিন নামে খনিজের মাত্রা অনেক কম। এ থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ম্যান্টলের এই নির্দিষ্ট অংশটি অতীতে প্রচুর গলনের মধ্য দিয়ে গেছে। অর্থাৎ প্রচণ্ড তাপমাত্রায় গলেছে। ফলে পাইরোক্সিনের পরিমাণ কমে গেছে। বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, গলনের এই প্রক্রিয়াটি তাঁরা নিজেরা করে দেখবেন। তাহলে হয়তো ম্যান্টল কীভাবে গলে গিয়ে গলিত পাথর ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে ও সামুদ্রিক আগ্নেয়গিরির জ্বালানির যোগান দেয়, তা বোঝা যেতে পারে।
অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা, পৃথিবীতে প্রাণের সূচনা হয়েছে সমুদ্রের গভীরে, এরকমই কোনো হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট বা জলতাপীয় ফাটলের কাছাকাছি। বিজ্ঞানীরা তাই সমুদ্রতলে গবেষণা করে কোন পরিস্থিতিতে প্রাণের সূচনা হতে পারে এবং এ পরিস্থিতি সমুদ্রের কতটা গভীরে সংঘটিত হতে পারে, তা বোঝার চেষ্টা করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।