আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একটি শিশু কি কখনো রাজ্য ভার নিতে পারে! সম্রাট বা রাজার মতো পদের অধিকারী যিনি হবেন, তিনি হবেন সাধারণত মধ্যবয়সী, তার চেহারার মাঝে বুদ্ধিদীপ্ততা ও পরিপক্বতার ছাপ থাকবে। কিন্তু, ইতিহাস বলে, মানবজাতির ইতিহাসে এমনো অনেকে রাজা কিংবা সম্রাট হয়েছেন, যাদের দাঁত তখনো গজায়নি, এমনকি মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে কেবলমাত্র পৃথিবীর আলো দেখা মানুষের নামও রয়েছে এই তালিকায়। তেমনই পাঁচ বাচ্চা-রাজার সাথে প্রথম পর্বে নিশ্চয়ই পরিচিত হয়েছেন। আজ থাকছে শেষ পর্ব-
শাং অফ হান
চীনের মতো বিশাল বড় একটি দেশের ক্ষমতার সিংহাসনে আরোহণের সময় শাং অফ হানের বয়স ছিল খুব বেশি হলে ১০০ দিন! অর্থাৎ নিজের দাঁত ঠিকমতো গজাবার আগেই লাখ লাখ মানুষের অন্ন সংস্থানের দায়িত্ব এসে পড়েছিল এই বাচ্চা ছেলের কাঁধে! সেই যা-ই হোক, শাং অফ হানের শাসনকাল কিন্তু খুব বেশিদিন স্থায়ী ছিলো না। মাত্র এক বছর রাজত্ব করার পরই তার ১২ বছর বয়সী কাজিন তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসনে বসে।
ষষ্ঠ আইভান
মাত্র ২ মাস বয়সেই রাশিয়ার মতো বিশাল এক দেশের জার তথা সম্রাটে পরিণত হন ষষ্ঠ আইভান। এত অল্প বয়সে ক্ষমতারোহণের বিষয়টি আসলে তার পতনের পথই যেন তৈরি করে দিয়েছিল। মাত্র এক বছরের মাথাতেই আইভান ও তার রাজপ্রতিভূকে ক্ষমতাচ্যুত করে ১৭৪১ সালে ক্ষমতা দখল করেন এলিজাভেতা পেত্রোভনা। ২০ বছর আইভানকে একাকী বন্দী জীবনই কাটাতে হয়েছে। যেতে হয়েছে এক দুর্গ থেকে অন্য দুর্গের কারাগারে। সবশেষে, মাত্র ২৩ বছর বয়সে কারারক্ষীর হাতে খুন হবার মধ্য দিয়েই যেন মুক্তি মেলে তার।
ম্যারি
ম্যারি যখন স্কটল্যান্ডের রানী হন, তখন তার বয়স মাত্র ছয় দিন। এই বয়সের বাচ্চার পক্ষে যেখানে নিজের দেখভাল করাই সম্ভব না, সেখানে একটি রাজ্যের কথাই বা আসে কী করে? তাই ম্যারির পক্ষে রাজ্যের শাসনকার্য চালাতে থাকেন তার মা। ৮ বছর বয়সে যখন তিনি রাজ্যের শাসনভার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন, তখন বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিলো। তিনি যাকে বিয়ে করেছিলেন, ধারণা করা হয় সেই লোকটিই ম্যারির আগের স্বামীকে হত্যা করেছিল। ফলে ম্যারিকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তিনি তখন পালিয়ে ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানে কাজিন রানী প্রথম এলিজাবেথের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন তিনি। কিন্তু এলিজাবেথ পরবর্তী ১৮টি বছর ধরে বন্দী করে রাখেন ম্যারিকে। অবশেষে এলিজাবেথকে হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৫৮৭ সালে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
প্রথম জন
বলা চলে মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে পৃথিবীর আলো দেখামাত্রই জন হয়ে যান ফ্রান্সের রাজা! কীভাবে? কারণ তার জন্মের চার মাস আগেই মারা যান তার বাবা। তবে দুর্ভাগ্যই বলতে হবে বাচ্চাটির। মায়ের পেট থেকে বেরিয়েই এত বড় একটি দায়িত্ব পেলেও সেটা পালন করার সৌভাগ্য তার হয়নি। মাত্র পাঁচ দিন পরই পৃথিবীর বুকে সংক্ষিপ্ত যাত্রা সেরে আবার সৃষ্টিকর্তার কাছে চলে যান রাজা প্রথম জন। এরপর ফ্রান্সের সিংহাসনে আসেন তারই চাচা ফিলিপ, যিনি তখন রাজপ্রতিভূর দায়িত্ব পালন করছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন, নিষ্পাপ শিশুটিকে ফিলিপই বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছিলেন।
ত্রয়োদশ আলফন্সো
১৮৮৬ সালের ১৭ মে জন্মগ্রহণ করেন ত্রয়োদশ আলফন্সো। সেই একই দিনে স্পেনের শাসনভার তার হাতে ন্যস্ত করা হয়। তবে দুর্ভাগ্য আলফন্সোর, কারণ শাসক হিসেবে তিনি ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। আলফন্সোর শাসনামলেই স্পেন তার সর্বশেষ কলোনিগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে। দেশ থেকে অবসান ঘটে রাজতন্ত্রেরও। ১৯৪১ সালে ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কোর হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে বাধ্য হন তিনি।
দ্বিতীয় শাহ শাপুর
দ্বিতীয় শাহ শাপুরের কাহিনী বেশ অদ্ভূত। কিংবদন্তীতে আছে, ৩০৯ সালে পারস্যের অভিজাত ব্যক্তিবর্গ রাজা দ্বিতীয় হরমিজ্দের পেটের উপর সসম্মানে একটি রাজমুকুট রেখেছিলেন। ফলে মাতৃগর্ভে ভ্রূণাবস্থায় থাকা শাহ শাপুর হয়ে যান ইতিহাসের প্রথম ও একমাত্র ভ্রূণ-রাজা! সাসানিদ সাম্রাজ্যের নবম এ শাসক মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে পরবর্তী ৭০ বছর ধরে নিজের ক্ষমতার চর্চা করে গেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।