বর্তমানে দেশের প্রকৃতি বেশ ঠান্ডা। এই মুহূর্তে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ বছরের অন্য সময়ের তুলনায় সূর্য থেকে বেশ অনেকটা দূরে রয়েছে। পাশাপাশি পৃথিবী নিজের ঘূর্ণন অক্ষ সাপেক্ষে হেলে আছে ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে। হেলানো অবস্থানের কারণে বছরের এই সময়টায় দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্যের আলো কম পড়ে।
অর্থাৎ, দিন ছোট হয়। রাতের দৈর্ঘ্য বাড়ে। ফলে ভূপৃষ্ঠ পর্যাপ্ত তপ্ত হতে পারে না। কিন্তু কিছুদিন পরেই আবার জুন-জুলাই মাসে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ ঘুরতে ঘুরতে সূর্যের সবচেয়ে কাছে চলে যাবে। ফলে বাড়বে দিনের দৈর্ঘ্য ও গরমের তীব্রতা। প্রচণ্ড গরমে মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যাবে।
প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে সূর্য পৃথিবীর ঘাম ঝরিয়ে ছাড়ে। প্রশ্ন হলো, পৃথিবীর এ অবস্থা করলেও সূর্য কেন মহাকাশের ঘাম ঝরাতে পারে না। অর্থাৎ মহাশূন্য কেন উষ্ণ হয় না? সবসময় শীতল থাকে কেন?
আমরা জানি, মহাশূন্য শীতল। ভীষণ ঠান্ডা। গড়ে সেখানকার আবহাওয়া ২ দশমিক ৭ কেলভিন বা মাইনাস ২৭০.৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে সূর্য প্রচণ্ড গরম। তবে বিভিন্ন স্তরে রয়েছে তাপমাত্রার পার্থক্য। যেমন সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর পৃষ্ঠ বা ফটোস্ফিয়ারের তাপমাত্রা মাত্র সাড়ে ৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার ফটোস্ফিয়ারের একটু বাইরে, অর্থাৎ করোনা বা সবচেয়ে বাইরের অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, মহাকাশ কেন উষ্ণ নয়? প্যারাডক্স বা হেঁয়ালির মতো এই প্রশ্নটি আসে সাধারণত সূর্যকে আগুনের গোলা হিসেবে চিন্তার কারণে। আমরা অনেকসময় ধরে নিই, আগুনের তাপ যেমন কোনোকিছু তপ্ত করে, সূর্যও ঠিক একইভাবে পৃথিবী বা অন্যান্য গ্রহকে তপ্ত করে। কিন্তু আসল ঘটনা ঠিক এমন নয়। বিশেষ করে গ্রহ-উপগ্রহ এভাবে উষ্ণ হয় না। তাপের পাশাপাশি নানা ধরনের বিকিরণ এতে বড় ভূমিকা রাখে।
আমরা পৃথিবীতে বসে যে তাপ অনুভব করি, তার সবটা সূর্য থেকে তাপশক্তি আকারে আসে না। যেমনটা বললাম, সূর্য থেকে নির্গত নানা বিকিরণ এই তাপের পেছনে দায়ী। বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গের প্রায় সব বর্ণালীই সূর্য থেকে বিকিরিত হয়। এর মধ্যে দৃশ্যমান আলো অন্যতম। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও ভূত্বকের বিভিন্ন কণা এদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে তৈরি হয় তাপ। এভাবে প্রতিনিয়ত আমরা তাপ উৎপাদন করি। যেমন মাইক্রোওয়েভ ওভেনে। সেখানে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তরঙ্গের সাহায্যে পানির কণাগুলোকে গতিশীল করা হয়। আর কণার গতিশীলতার কারণে তৈরি হয় তাপ। এ কারণে সূর্য অনেক দূরে হলেও পৃথিবী বেশ উত্তপ্ত হয়।
মহাশূন্যে যেহেতু অণু-পরমাণুর সংখ্যা প্রায় শূন্য, তাই সেখানে খুব বেশি মিথস্ক্রিয়া হয় না। বিকিরণ থেকে তাপও তেমন তৈরি হয় না। ফলে সৌরজগতের শূন্যস্থানে তাপমাত্রা থাকে ভীষণ কম। একই কারণে মহাশূন্যে কোটি কোটি নক্ষত্র থাকলেও তাপমাত্রা খুব কম। তবে নভোযানে চড়ে সূর্যের কাছে কাছে গেলেই কিন্তু ঠান্ডা অনুভব করবেন না। কারণ সূর্যের আশপাশে তাপমাত্রা খুব বেশি নয়। তবে সূর্যের বিকিরণের সংস্পর্শে এসে ঠিকই উত্তাপ অনুভব করবেন। অর্থাৎ কোনো পদার্থ বিকিরণের সংস্পর্শে এলে উত্তপ্ত হবে।
এখন পর্যন্ত মানুষের তৈরি পার্কার সোলার প্রোব সূর্যের সবচেয়ে কাছে গিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে নভোযানটি সূর্যের প্রায় ৭২ লাখ কিলোমিটারের মধ্যে চলে যায়। এ সময় প্রায় ১ হাজার ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে নভোযানটি। তবে এটা ছিল পার্কারের বাইরের তাপমাত্রা। ভেতরের যন্ত্রপাতিতে স্বাভাবিক তাপমাত্রাই ছিল। অর্থাৎ ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।