বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : এখন পর্যন্ত মানুষের জানা মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী প্রান্তটি পৃথিবী থেকে আনুমানিক ১২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। অর্থাৎ আলোর বেগে চললেও পৃথিবী থেকে সেই প্রান্তে যেতে ১২০০ কোটি বছর লাগবে। সেই প্রান্তে একটি ছায়াপথও আছে। মানুষের আবিষ্কৃত সবচেয়ে দূরের ছায়াপথও সেটি। সেই ছায়াপথের একটি এলাকায় এবার জৈব অণুর সন্ধান পেয়েছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।
বিজ্ঞানবিষয়ক সংবাদমাধ্যম সায়েন্স ডেইলির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার যৌথ প্রচেষ্টার ফসল জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্য ও চিত্রের গবেষণা থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের আশা, এই অণুগুলো মহাবিশ্বের সৃষ্টির সময়ে যেসব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটেছে, সে বিষয়ে দারুণ ও গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি সামনে হাজির করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় আরবানা-শ্যাম্পেইনের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক জোয়াকিন ভিয়েইরা ও একই বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী কেদার ফাড়কে যৌথভাবে জেমস ওয়েব থেকে পাওয়া তথ্য ও চিত্রের বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন টেক্সাসের এঅ্যান্ডএম ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকসহ বেশ কয়েকজন গবেষক।
বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, তাঁরা মূলত সদ্য আবিষ্কৃত হাইড্রোকার্বন অণুগুলো থেকে উৎপন্ন ইনফ্রারেড সংকেত এবং মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া বড় আকারের ধুলোর স্তর থেকে উৎপন্ন ইনফ্রারেড সংকেতের মধ্যে পার্থক্য করার কাজটি করেছেন।
এই আবিষ্কার প্রসঙ্গে জোয়াকিন ভিয়েইরা বলেন, ‘এই প্রকল্প শুরু হয় তখন, যখন আমি নিজেই স্নাতক শিক্ষার্থী ছিলাম। তখন মূলত আমরা চেষ্টা করছিলাম ধুলোর স্তরে ঢাকা দূরবর্তী ছায়াপথগুলো আবিষ্কারের।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধূলিকণা মহাবিশ্বে উৎপন্ন প্রায় অর্ধেক নাক্ষত্রিক বিকিরণই শোষণ করে নেয় এবং পুনরায় নির্গত করে, যার ফলে আমাদের পৃথিবীকেন্দ্রিক টেলিস্কোপগুলোর জন্য সেগুলো হয় অস্পষ্ট আর না হয় শনাক্তের অযোগ্য হিসেবে ধরা দেয়।’
কিন্তু জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা সাধারণত এটিকে ‘প্রকৃতির বিবর্ধক কাচ’ বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। সেই জায়গা থেকে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের দূরবর্তী প্রান্তের ছায়াপথ এসপিটি ০৪১৮-৪৭ পর্যবেক্ষণ করেন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে।
নেচারে প্রকাশিত নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এসপিটি ০৪১৮-৪৭ যখন সৃষ্টি হয়, তখন আমাদের এই মহাবিশ্বের বয়স মাত্র ১৫০ কোটি বছর। এটি বর্তমানে পৃথিবী থেকে ১২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্য ও চিত্রের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসপিটি ০৪১৮-৪৭ ছায়াপথটি আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাসের ভারী উপাদানে সমৃদ্ধ।
বিজ্ঞানীরা সেখানে যে নির্দিষ্ট যৌগটি শনাক্ত করেছেন তা হলো—পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন। সাধারণত পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনে কম্বাশন ইঞ্জিন বা দহন ইঞ্জিনে জ্বালানি পোড়ানোর পর এ ধরনের অণু উৎপাদিত হয় অথবা দাবানল থেকেও এ ধরনের জৈব অণু সৃষ্টি হতে পারে।
কার্বন শিকলের সমন্বয়ে গঠিত এই জৈব অণুগুলোকে জীবনের প্রাথমিকতম রূপের জন্য অন্যতম মৌলিক ‘বিল্ডিং ব্লক’ বা গাঠনিক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ বিষয়ে গবেষক কেদার ফাড়কে বলেন, ‘নতুন এই বর্ণালি বিশ্লেষণের তথ্য আমাদের ছায়াপথের পারমাণবিক ও আণবিক গঠন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেবে। গ্যালাক্সির গঠন, তাদের জীবনচক্র এবং তারা কীভাবে বিবর্তিত হয়, সে বিষয়েও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।