জুমবাংলা ডেস্ক : একটি সমঝোতা স্মারকের অভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজার হাত ছাড়া হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মৌসুমী শ্রমিক বিনা খরচে দেশটি যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীরা যেতে পারছে না। দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় বোয়েসেলের মাধ্যমে ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে স্বল্প সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী দেশটিতে যাচ্ছে।
বিএমইটি জানায়, ২০২৩ সালের ১ জুন থেকে গত ২৮ জুলাই পর্যন্ত বোয়েসেলের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩ জাচার ৭৫৩ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। দেশটির শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করতে হবে। ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন নেই, নেই কর্মদক্ষতারও দেশটিতে মৌসুমী কর্মী (৮ মাস) প্রেরণের সুযোগ সৃষ্টি হলে রেমিট্যান্সের পাল্লা ভারি হবে। বিনা খরচে নামমাত্র সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে দেশটিতে মৌসুমী কর্মী চাকরি লাভ করলে প্রতি মাসে তারা বেতন পাবেন দেড় লাখ টাকা। একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার দক্ষিণ কোরিয়া থেকে খণ্ডকালীন কর্মীর চাহিদা আসছে নিয়মিত। নিয়োগকর্তার খরচে আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া ও উচ্চ বেতনের সুযোগ আছে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীর। তবে অনুমোদন জটিলতায় দেশটিতে কর্মী পাঠাতে পারছে না বেসরকারি খাতের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। একটি এজেন্সি দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সত্যায়নের পর অনুমোদন পেলেও ভিসা জটিলতায় কোনো কর্মী পাঠাতে পারেনি।
কেএম ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান থাথায়মা কবির জানান, দক্ষিণ কোরিয়ায় কৃষি কাজে মৌসুমী কর্মীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, দেশটিতে মৌসুমী কর্মী নিয়োগের চাহিদা পেয়েছিলাম। কিন্ত উভয় দেশের মাঝে একটি সমঝোতা স্মারক না থাকায় সম্ভাবনাময় দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠাতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি শ্রমবাজার সম্প্রসারণ এবং দেশের স্বার্থে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত কোরিয়ার সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়ার জোর দাবি জানান। অন্যথায় দেশটির শ্রমবাজার হাতছাড়া হবার আশঙ্কা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সরকারিভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নেওয়ার পাশাপাশি দেশটির স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে কৃষি খাতে কর্মী নেয় কোরিয়া। এর জন্য ওই দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মী পাঠানো দেশটির স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি সমঝোতা স্মারক সই করতে হয়। এখন দেশটির স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের আলোচনা চলছে।
শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ, সবজি বাগান ও বাজারজাতকরণের মতো কাজে খণ্ডকালীন কর্মী নেয় দক্ষিণ কোরিয়া। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভিয়েতনাম, চীন, ফিলিপাইন, ভারতসহ কয়েকটি দেশ থেকে এসব খাতে কর্মী যাচ্ছে এখন। গত বছর দুই হাজারের বেশি কর্মী পাঠানোর চাহিদা পেয়েছিল বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি কেএম ইন্টারন্যাশনাল। তারা আগ্রহী কর্মীদের কাছ থেকে ৭০০ কর্মীর পাসপোর্ট জমা নেয়। এরপর দুই দফায় ৮০ জন কর্মীর চাহিদাপত্রের বৈধতা যাচাইয়ের পর তা সত্যায়ন করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় কোরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম শাখা। এর ভিত্তিতে কর্মী পাঠানোর অনুমোদন দেয় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
তবে কোরিয়ার দূতাবাস কোনো কর্মীর ভিসা দেয়নি। কারণ, কর্মীর নিয়োগপত্র ছিল ৯০ দিনের জন্য। এ ক্ষেত্রে তাদের সি-৪-৫ ভিসার প্রয়োজন হয়। এটি মাত্র তিন মাসের জন্য, যা কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কাউকেই দিচ্ছে না কোরিয়া। খণ্ডকালীন কর্মীর জন্য ই-৮ ভিসা অনুমোদন করে কোরিয়া। এতে আট মাস কাজ করার সুযোগ পান একজন কর্মী। কিন্তু এ ভিসার জন্য দেশটির স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে চুক্তি থাকতে হবে।
কর্মীর চাহিদাপত্র সত্যায়ন করার বিষয়ে কোরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মিকন তংচঙ্গ্যা জানান, তারা সরেজমিন নিয়োগকর্তার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। সব কাগজপত্র যাচাই করে চাহিদাপত্রের সত্যায়ন করেছেন। ভিসার বিষয়টি সত্যায়ন করেননি। কর্মী পাঠাতে হলে ই-৮ ভিসা লাগবে। এর জন্য কোরিয়ার স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি সমঝোতা স্মারক সই করতে হবে। এখন মন্ত্রণালয় তা নিয়ে কাজ করছে।
জানা যায়, কেএম ইন্টারন্যাশনাল কোরিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে তারা দফায় দফায় আলোচনা করেও কর্মী পাঠানোর বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি। তাই আগ্রহী কর্মীদের জমা নেওয়া পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়েছে। কোরিয়ার নিয়োগকর্তারা এখনো যোগাযোগ করছেন। ১৫ হাজারের বেশি কর্মী পাঠানোর সুযোগ আছে। এখন চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আছেন তারা।
এ ছাড়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় মৌসুমী শ্রমিক পাঠানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সি আজমীর ওভারসীজ লিঃ, হোপ হিউম্যান রিসোর্সেসসহ কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সি । হোপ হিউম্যান রিসোর্সেস জানান তারা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। তবে কোরিয়ার নিয়মের কারণে কর্মী পাঠাতে পারছে না।
আজমীর ওভারসীজ লিঃ এর সি ই ও এ এম মাসুদ গতকাল রোববার জানান, দক্ষিণ কোরিয়াতে মৎস্য প্রক্রিয়াযাতকরণ ও কৃষি কাজের জন্য প্রায় ১০ হাজার মৌসুমি শ্রমিক পাঠানোর জন্য তারা কাজ করছেন। এ জন্য যত তাড়াতাড়ি সরকারের পক্ষ থেকে সমঝোতা স্মারক সই করতে হবে। এই সমঝোতা স্মারকটি সই হলেই কর্মী যাওয়া শুরু হলে দেশে আসবে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কোটি কোটি টাকার রেমিট্যান্স।
বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কৃষি খামার , মৎস্য প্রক্রিয়াযাতকরণ সেক্টরে প্রচুর কর্মীর চাহিদা আছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এসব কাজ মূলত খণ্ডকালীন। একজন কর্মী একবার গিয়ে আট মাস থাকতে পারবেন। এরপর তিন মাসের ছুটি কাটিয়ে আবার গিয়ে আট মাস কাজ করতে পারবেন। ছুটিতে আসা-যাওয়ার বিমানভাড়া দেবেন নিয়োগকর্তা। মাসে বেতন দেড় লাখ টাকার বেশি। কোরিয়ান ভাষা শেখা ও কারিগরি জ্ঞানের বাধ্যবাধকতা নেই। তাই কর্মীরা বেশি আয়ের আশায় যেতে চান দেশটিতে। তবে এক বছরের নিচে কোনো চাকরির জন্য ভিসা দিচ্ছে না কোরিয়ার দূতাবাস। তাই আটকে আছে খণ্ডকালীন কাজে কর্মী পাঠানো।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কর্মসংস্থান) খায়রুল আলম মিডিয়াকে বলেছিলেন, কোরিয়ায় খণ্ডকালীন কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এ নিয়ে শিগগিরই একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হবে। এ সভায় আলোচনার পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কর্মসংস্থান) নূরুল হক সম্প্রতি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মৌসুমী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে উভয় দেশের মাঝে সমঝোতা স্মারকের প্রয়োজন হলে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে তা’ বাস্তবায়ন করবো। এ ব্যাপারে তিনি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সাথে বসে আলাপ আলোচনার বিষয়টি গুরুত্ব দেন।
২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার বন্যার্তকে চিকিৎসা দিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।