পেঁয়াজের দাম নিয়ে দেশের মানুষের অনুভূতি বরাবরই স্পর্শকাতর। রান্নাঘরের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হওয়ায় এর মূল্যবৃদ্ধি বা হ্রাস সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি হঠাৎ বেড়ে যাওয়া এবং পরে আবার কমতে থাকা পেঁয়াজের দামের ওঠানামা নিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর এর প্রভাব অত্যন্ত স্পষ্ট। বাজারে গিয়ে কেউ হয়তো আগের মতো এক কেজি কিনতে পারছেন না, কেউ আবার হতাশ হয়ে আধা কেজিতে ফিরে এসেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে চলুন বিশ্লেষণ করি পেঁয়াজের দামের ওঠানামার পেছনের কারণ এবং আগামীতে এর গতিপথ।
পেঁয়াজের দাম কেন বাড়লো এবং এখন কেন কমছে?
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পায়। বাজারে প্রতি কেজির দাম এক লাফে ৫০–৫৫ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়, যেখানে আগে তা ছিল ৩০–৩৫ টাকার মধ্যে। ক্রেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, কারণ এমন দামে প্রতিদিনের বাজার সামলানো সহজ নয়। কিন্তু দামের এই উত্থান হঠাৎ থেমেও যায় এবং গত কয়েক দিনে অন্তত ৫ টাকা পর্যন্ত কমে আসে প্রতিকেজি দামে।
পেঁয়াজের দামের এমন হঠাৎ ওঠানামার পেছনে সরাসরি প্রভাব রয়েছে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতার। কারওয়ানবাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও কিছু সময় সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষ পর্যায়ে থাকায় মোকামে সরবরাহ কমে যায়। অন্যদিকে, কৃষকরা আগাম দিনের জন্য পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে থাকেন। এতে বাজারে মজুদ কমে গিয়ে দাম বেড়ে যায়।
বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতারা উল্লেখ করেছেন, কিছু অবৈধ মজুদদার বাজারে প্রতিযোগিতামূলকভাবে পেঁয়াজ কিনে মজুদ করতে থাকেন। এতে বাজারে সরবরাহ কমে যায় এবং দাম বাড়তে শুরু করে। এই মনোবৃত্তি মূল্যবৃদ্ধিতে আরও একটি বড় ভূমিকা রাখে।
দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে বাজারে গুঞ্জন ওঠে যে ভারত থেকে আবার পেঁয়াজ আমদানি হতে পারে। এই খবরে অনেকে মজুদ ছাড়তে শুরু করেন, ফলে মোকামে দাম কমে আসে। বর্তমানে মোকামে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম ১৬০০–১৭০০ টাকায় নেমে এসেছে, যেখানে কয়েকদিন আগেও তা ছিল ২০০০–২১০০ টাকা।
দেশের বিভিন্ন বাজারে বর্তমান পরিস্থিতি
পেঁয়াজের দামের বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গেলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো থেকে পাওয়া তথ্য আমাদের একটি স্বচ্ছ চিত্র দিতে পারে।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ানবাজারে বর্তমানে পেঁয়াজের দাম মানভেদে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা প্রতি কেজি। খুচরা বাজারেও দাম একই রকম আছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে এবং চাহিদার তুলনায় পরিমাণ বেশি, ফলে দাম ধীরে ধীরে কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিলিতে তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। কিছু নিম্নমানের পেঁয়াজ ৪২ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরবরাহ বেড়েছে এবং চাহিদার তুলনায় ক্রেতা কম থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে।
হিলিতে পেঁয়াজ কিনতে আসা হায়দার আলীর মতো সাধারণ মানুষ বলছেন, তারা আগে যেভাবে পুরো কেজি কিনতেন এখন আধা কেজিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। আয় না বাড়লেও খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে তাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আগামী কয়েক মাস পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকবে। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, সরবরাহ যদি অব্যাহত থাকে এবং নতুন মৌসুমের ফসল বাজারে আসে, তাহলে অস্থিরতার সম্ভাবনা কম।
তবে কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে। যেমন:
ভারত হঠাৎ রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে
মৌসুম পরিবর্তনে সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হতে পারে
রাজনৈতিক বা পরিবহন-সংক্রান্ত সমস্যায় বাজার প্রভাবিত হতে পারে
সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এখন একটাই— পেঁয়াজের দাম যেন পুনরায় অস্বাভাবিকভাবে না বাড়ে এবং আগের মতন স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসে। এই চাহিদা শুধুই আর্থিক নয়, বরং আবেগেরও। প্রতিদিনের রান্নার খরচ বাঁচাতে, পরিবারের মেন্যু ঠিক রাখতে ‘পেঁয়াজের দাম’ নিয়েই এখন মানুষের সব আশা-আশঙ্কা।
ℹ️ FAQs (সচরাচর জিজ্ঞাসা)
পেঁয়াজের দাম কেন হঠাৎ করে বেড়ে যায়?
চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে গেলে, অবৈধ মজুদদারদের কারণে, অথবা নতুন ফসল বাজারে আসতে দেরি হলে হঠাৎ দাম বেড়ে যায়।
এখন কোথায় সবচেয়ে সস্তা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে?
দিনাজপুরের হিলি বাজারে বর্তমানে সবচেয়ে সস্তা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে কেজি প্রতি ৪২ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম আবার বাড়ার আশঙ্কা আছে কি?
বর্তমানে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাম বাড়ার তাৎক্ষণিক আশঙ্কা নেই। তবে পরিবেশগত বা রাজনৈতিক কারণ ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হলে কী হবে?
আমদানি বন্ধ হলে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাপ সৃষ্টি হতে পারে, তবে যদি স্থানীয় ফসলের সরবরাহ ঠিক থাকে, তা হলে বড় ধরণের মূল্যবৃদ্ধি নাও হতে পারে।
সরকার কি পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে?
বিভিন্ন সময় সরকার পেঁয়াজ আমদানির মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। তবে মজুদদারদের নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে কার্যকর ফল পাওয়া কঠিন।
নিম্নমানের পেঁয়াজ কেন সস্তা হয়?
নিম্নমানের পেঁয়াজ সাধারণত আকারে ছোট বা কিছুটা পচা অংশ থাকে বলে তার দাম কম থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।