জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রতিদিনের বাজারে পেঁয়াজ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রান্নার অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ায় এই পণ্যটির দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী—সকলেই প্রভাবিত হন। সম্প্রতি পেঁয়াজের দামে হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় যেখানে কৃষকের মুখে হাসি, সেখানে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য এটি হয়ে উঠেছে এক দুঃস্বপ্ন।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি: কৃষকের হাসি, ভোক্তার দুশ্চিন্তা
পেঁয়াজের দাম বর্তমানে বাজারে অন্যতম আলোচিত বিষয়। ভারতের আমদানি বন্ধ হওয়ার কারণে হঠাৎ করে দেশের বাজারে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যায়। রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন উৎপাদন কেন্দ্রে কৃষকরা এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি করছেন, যা মাত্র তিন দিন আগেও ছিল ৪০-৪২ টাকা। এতে কৃষকরা যেমন খুশি, তেমনি ক্রেতারা অতিরিক্ত খরচের বোঝা টানছেন। রাজধানীর বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে।
ফরিদপুরের কৃষক আবুল হোসেন ও সিরাজ মোল্লা জানান, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে তাঁরা লাভের মুখ দেখছেন। আগে যেখানে উৎপাদন খরচ উঠানো কঠিন ছিল, এখন তাঁদের বিক্রয়মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি। তবে ভোক্তারা বলছেন, এই হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি তাঁদের দৈনন্দিন খরচে বড় চাপ ফেলছে।
বাজার অবস্থা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পাইকারি পর্যায়ে যৌক্তিক মূল্য ৩৪ থেকে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও, বাস্তবে কোথাও তা দেখা যায় না। এ অবস্থায় সরকারকে বাজারে মনিটরিং বাড়ানো এবং আমদানি নীতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ ও লাভ: কৃষকের দৃষ্টিকোণ
পেঁয়াজ উৎপাদন একটি সময়সাপেক্ষ ও খরচসাপেক্ষ প্রক্রিয়া। পাবনার সুজানগর উপজেলার কৃষি অফিসার জানান, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ৯২,৪০০ টাকা এবং প্রতি বিঘায় গড়ে ৫৫ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এতে করে প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪২ টাকা।
বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য ৫০ টাকার উপরে হওয়ায়, কৃষকরা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন। পাবনার জহির হোসেন জানান, গত বছরের দামে প্রভাবিত হয়ে তিনি এই বছর বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন, যদিও শুরুতে দাম কম থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হন। এখন দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারছেন।
যদিও এই মূল্যবৃদ্ধি কৃষকের জন্য ভালো খবর, ভোক্তার জন্য এটি একধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। শহরের বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি আমদানি ব্যবস্থা দ্রুত চালু না হয় এবং সিন্ডিকেট কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে আগামী দিনে দাম আরও বাড়তে পারে।
পেঁয়াজ বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাব ও আমদানি বন্ধের পরিণতি
সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। এর ফলে দেশের বাজারে সরবরাহ কমে যায় এবং চাহিদা বাড়ায় দাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়। শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়ৎদার সমিতির সহ-সভাপতি জানান, বৃহৎ মোকাম ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
গত বছর সরকার খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল, এরপর মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কিছুটা কমে। তবে বর্তমানে ভারতের আমদানি বন্ধ থাকায় আবার দাম বাড়ছে। শহরের বিভিন্ন বাজার—যেমন মোহাম্মদপুর, নিউ মার্কেট, হাতিরপুল—সবখানেই ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু এলাকায় এখনও ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, বিশেষ করে ভ্যানে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজে।
চাহিদা, উৎপাদন ও আমদানির ভারসাম্য রক্ষা
বাংলাদেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৫-২৬ লাখ টন, যেখানে উৎপাদন হয় ৩৫ লাখ টনের বেশি। তবে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণজনিত কারণে ২৫ শতাংশের মতো ক্ষতি হয়। ফলে দেশে ৯-১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। যা গত মাসে ছিল ৩০-৫০ টাকা এবং গত বছর এই সময়ে ৫৫-৬৫ টাকা। পেঁয়াজ একটি মৌসুমি ফসল এবং বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংস্কৃতির অংশ। বাংলাদেশের আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযুক্ত হলেও সংরক্ষণের অভাব এবং বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, আবেদন করুন দ্রুত
বাজার মনিটরিং ও সরকারের ভূমিকা
নিয়মিত বাজার মনিটরিং না থাকার কারণে পেঁয়াজের বাজারে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগের সদ্ব্যবহার করে দাম বাড়িয়ে দেয়। বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারের উচিত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানির ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি রাখা এবং বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা।
বাজার বিশ্লেষণ ও ভোক্তার অভিজ্ঞতা জানায় যে, পেঁয়াজের বাজারে আরও স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। অন্যথায় মূল্যবৃদ্ধি শুধু পণ্যের নয়, সাধারণ মানুষের জীবনে এক বাড়তি বোঝা হয়ে উঠবে।
❓ প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
পেঁয়াজের দাম কেন হঠাৎ বেড়ে গেল?
ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে, ফলে চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম দ্রুত বেড়েছে।
বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের দাম কত?
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম ৪০ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকরা কি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি থেকে লাভবান হচ্ছেন?
হ্যাঁ, বর্তমান দামে কৃষকরা উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন বলে লাভবান হচ্ছেন।
পেঁয়াজ আমদানি কবে থেকে বন্ধ হয়েছে?
সম্প্রতি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ায় এই প্রভাব দেখা দিয়েছে।
সরকার কীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে?
নিয়মিত বাজার মনিটরিং, দ্রুত আমদানি অনুমোদন এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।