জুমবাংলা ডেস্ক : গোপীবাগের এক মাদরাসার বোর্ডিংয়ের জন্য বাজার করতে যাত্রাবাড়ী আড়তে এসেছিলেন শিক্ষক আব্দুল আলিম। এক সপ্তাহের জন্য তাঁর প্রয়োজন তিন বস্তা আলুসহ আরো তিন-চার রকমের সবজি। কিন্তু সেখানে এসেই ধাক্কা খেলেন তিনি। গত সপ্তাহে যে আলু ১৮ টাকা কেজিতে কিনেছিলেন এখন তা ২৪ টাকা কেজি।
প্রতি কেজি ছয় টাকা করে ২০০ কেজি (প্রতি বস্তায় ৬৫-৬৭ কেজি) আলু কিনতে তাঁর বাড়তি লেগেছে এক হাজার ২০০ টাকা। ভ্যানে সবজির বস্তা তুলতে তুলতে তিনি বলেন, ‘ডাল-তেলের দাম আগেই বেড়েছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে আরেক দফা বেড়েছিল চালের দাম। শিক্ষার্থীদের শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। মাছ-মাংসের দাম বেশি হওয়ায় ভরসা ছিল শীতের সবজি। চলতি সপ্তাহে সেই সবজিরও দাম বেড়ে গেল। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের খাবারের মান ধরে রাখা কষ্ট।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাল, ডাল, তেল, চিনির দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো চলতি সপ্তাহে কিছু সবজিসহ আটা-ময়দা, মুরগি, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম বেড়েছে।
অজুহাত হিসেবে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তিন-চার দিনের বৃষ্টিতে অনেক আলুর ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। চলতি মৌসুমের আলু উঠতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। ফলে ধীরে চলো নীতিতে চলছেন তাঁরা। দাম বাড়িয়ে সরবরাহের গতি কমাতে চাইছেন।
এরই মধ্যে বাজারে নতুন আলু উঠতে শুরু করেছে। দাম কেজিতে ৫০ টাকার বেশি। খুচরা বাজারে পুরনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২৫ টাকা কেজি। আলুর সঙ্গে বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মসলাজাতীয় পণ্যের দামও। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। আর আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। দেশি আদা ৮০ থেকে ১২০ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আমদানি করা আদা আগের সপ্তাহের মতো ৬০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে মালিবাগ বাজারের আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা মোতালেব বলেন, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অনেক অঞ্চলের আলুর ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে পাইকাররা আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
শ্যামবাজারের রাজ ট্রেডিংয়ের ব্যবসায়ী আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘নতুন মৌসুম শুরু হতে এখনো কয়েক দিন বাকি। এ কারণে বাজারে গত মৌসুমের সংরক্ষণ করা আলু, পেঁয়াজ, রসুনের সংকট দেখা দিয়েছে। নতুন মৌসুমের পণ্য বাজারে এলে দাম কমবে।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস ফুলকপি, বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। পাকা টমেটো ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, খিরাই ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি। এ ছাড়া করলা, ঢেঁড়স, কচুরলতি, বেগুনসহ অন্য সবজি বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে।
আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা কমলেও দেশের বাজারে ভোজ্য তেল সয়াবিন, পাম, মসুর ডালসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, পাম ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। ছোট, বড় ও মাঝারি দানার মসুর ডাল ৮৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। কেজিতে দুই টাকা বেড়ে খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি।
কয়েক সপ্তাহ কমে আবার বেড়েছে ফার্মের মুরগির দাম। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। সোনালি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি। ফার্মের এক ডজন মুরগির ডিম কিনতে লাগছে ১০০ টাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।