জুমবাংলা ডেস্ক: পেয়ারা রাজ্যের সবচেয়ে বড় মোকাম ঝালকাঠিতে। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার সুবাদে সড়ক পথে সকালের পেয়ারা বিকেলের মধ্যেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়। সেখানকার ভীমরুলীতে রাস্তার পাশের খালেই নৌকায় পেয়ারার পসরা নিয়ে বসে আছেন চাষিরা। তাদের কাছ থেকে পেয়ারা কিনে নিচ্ছেন পাইকাররা।
প্রতিমণ পেয়ারার দাম আকার ও রং ভেদে ৩০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন চাষিরা। ভীমরুলীর বড় মোকাম ভাসমান হাটে ডিঙি নৌকায় করে পেয়ারা নিয়ে আসেন তারা।
ঝালকাঠি শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্বের সড়কের পাশে ১০টিরও বেশি মোকামে পেয়ারা ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। পেয়ারার দাম প্রতিবছরের চেয়ে ভালো পেলেও ফলন কম হওয়ায় কৃষকের অনন্দ নিরানন্দই থেকে যাচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় ফুল ঝরে যাওয়ায় ফলন বিপর্যয়ে প্রতিবছরের চেয়ে এ বছর পেয়ারার সমারোহ কম।
পেয়ারা উৎপাদনে বিখ্যাত ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বানারিপাড়ার ৫৫টি গ্রাম। আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় এ অঞ্চলের নদী খালের পাড়ে গাছে ঝুলে সবুজ ফল।
জানা গেছে- ঝালকাঠি, বানারিপাড়া ও স্বরূপকাঠি উপজেলার ৫৫ গ্রামে ফলন হয় পেয়ারার। এই এলাকার হাজার হাজার মানুষের কাছে পেয়ারা অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ ও জীবিকার অবলম্বন। আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় এসব এলাকার নদী-খালজুড়ে পেয়ারার সমারোহ। দেরিতে ফুল আসলেও অনাবৃষ্টিতে সেই ফুল অনেকটাই ঝরে গেছে। আষাঢ়ে পেয়ারা পাকার মৌসুম থাকলেও শ্রাবণের শুরুতে পেয়ারা পরিপক্ক হওয়ায় এখন জমে উঠেছে পেয়ারার হাট।
বরিশাল বিভাগের কম-বেশি সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পেয়ারার চাষ হলেও বরিশাল জেলার বানারিপাড়া, ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি ঘিরেই মূলত পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ। বানারিপাড়ার ১৬ গ্রামে ৯৩৭ হেক্টর, ঝালকাঠি জেলার ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে, স্বরূপকাঠির ২৬ গ্রামের ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়।
এসব এলাকার মধ্যে ঝালকাঠির কীর্ত্তিপাশা, ভিমরুলী, শতদশকাঠী, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুড়াকাঠি, জগদীশপুর, মীরকাঠি, শাখা গাছির, হিমানন্দকাঠি, আদাকাঠি, রামপুর, শিমুলেশ্বর এই গ্রামে বৃহৎ অংশজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে যুগযুগ ধরে পেয়ারার চাষ হচ্ছে।
পেয়ারার চাষ, ব্যবসা ও বাজারজাত করণেও রয়েছে কয়েক হাজার মৌসুমি বেপারি এবং শ্রমিক। এ সময় অন্তত ২০টি স্থানে পেয়ারার মৌসুমি মোকামের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে আবার সড়কপথেও ১০টিরও বেশি মোকামে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। এগুলো হলো- ভিমরুলী, আতাকাঠী, ডুমুরিয়া, গণপতিকাঠী, শতদশকাঠী, রাজাপুর, মাদ্রা, আদমকাঠি, জিন্দাকাঠি, বর্ণপতিকাঠি, আটঘর, কুড়িয়ানা, আন্দাকুল, রায়ের হাট, ব্রাহ্মণকাঠি, ধলহার, বাউকাঠি। এসব মোকামে মৌসুমে প্রতিদিন ৫-৭ হাজার মণ পেয়ারা কেনাবেচা হয়ে থাকে।
স্থানীয় চাষিরা জানান, আনুমানিক ২০০ বছরেরও বেশি সময় আগে বিচ্ছিন্ন আবাদ হলেও ১৯৪০ সাল থেকে শুরু হয়েছে পেয়ারার বাণিজ্যিক আবাদ। এই আবাদ ক্রমশ বাড়ছে। ২০২২ সালে অন্তত ১৯৩২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক পেয়ারার আবাদ হয়েছে। এ সময় ফলন হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন পেয়ারা। কিন্তু এ বছর ফলন কম হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ১০ হাজার মেট্রিক টন পেয়ারা উৎপাদন হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসেই পেয়ারা গাছে ফুল আসতে শুরু করে। তবে বৃষ্টি শুরু না হলে পেয়ারা পরিপক্ক হয় না। জমি ভালো হলে হেক্টর প্রতি ১২-১৪ মেট্রিক টন পেয়ারার উৎপাদন হয়। কিন্তু এ বছর জ্যেষ্ঠ মাসে অনাবৃষ্টির কারণে ফুল ঝড়ে যাওয়ায় পেয়ারার ফলন অনেক কম হয়েছে।
কৃষক পঙ্কজ বড়াল জানান, মাঘ-ফাল্গুন মাসে পেয়ারা গাছের গোড়া পরিষ্কার করে সার প্রয়োগ করতে হয়েছে। এর পরে কাঁদা মাটি দিয়ে গোড়া ঢেকে দিয়েছি। তাতে প্রতিটা গাছের গোড়ায় গড়ে ৩ শতাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। পেয়ারা গাছে যে পরিমাণ ফুল এসেছিল এ বছর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তা অনেকটাই ঝড়ে গেছে।
কৃষক দেবব্রত হালদার বিটু বলেন, পেয়ারা আমাদের মৌসমি আয়ের একমাত্র অবলম্বন। পেয়ারার ফলন ভালো হলে আমাদের স্বচ্ছলতা আসে। পানির ওপরেই ভাসমান হাটে বছরে কোটি টাকার লেনদেন হয়। অস্থায়ী কিছু দোকান পাট বসে পাইকার, পর্যটক/দর্শনার্থীদের আপ্যায়নের বা ক্ষুধা নিবারণের মাধ্যমে ব্যবসার করে আর্থিকভাবে লাভবান হন বিক্রেতারা।
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলায় ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ হয়। পেয়ারা মৌসুমে এলাকার হাজার হাজার মানুষের কাছে পেয়ারা অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ ও জীবিকার অবলম্বন। পদ্মাসেতুর কারণে সড়ক পথে দিনের মধ্যেই পেয়ারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে। ফলন কম হলেও চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।