জুমবাংলা ডেস্ক : বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে আতঙ্ক কাটেনি। চাঁদার দাবিতে ওই গ্রামের চারটি পাড়ায় দুই শতাধিক বাড়িতে শনিবার রাতে পোস্টারিং করা হয়। রবিবার সকালে পোস্টার নজরে আসার পর থেকেই গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে বিষ্ণুপুর গ্রামে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে।
এ ঘটনার তথ্য উদঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তিন যুবককে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার বিকেলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
গ্রামবাসীর অনেকেই সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছেন।
আতঙ্কে সন্ধ্যার আগেই ঘরে ফিরছে সবাই। সন্ধ্যার পর গ্রামের দোকানপাটে আড্ডা বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী।
এদিকে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী আজ (সোমবার) দুপুরে বিষ্ণুপুর গ্রাম পরিদর্শন করেন। তিনি গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে তাদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ওই গ্রামে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার সকাল থেকেই পোস্টারিংয়ে জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার। এদিকে র্যাব সদস্যরাও ওই গ্রামে টহল দেওয়াসহ গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানায় বাসিন্দারা।
কাহালু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ হাসান জানান, গ্রামের একটি ক্লাবে গভীর রাত পর্যন্ত কিছু যুবক আড্ডা দিত। সেই তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার রাতে ওই গ্রামের নাজমুল হক, রজিবুল ইসলাম রাজিব ও রুবেল হোসেন নামের তিন যুবককে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তাদের কাছে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য না পাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বিষ্ণুপুর মাজাগাড়ি গ্রামের জহুরুল ইসলাম, নয়ন প্রামানিক, সুলতান প্রামানিকসহ গ্রামবাসী জানান, তারা ভাবতেই পারছেন না এভাবে বাচ্চাদের অপহরণের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করা হবে। গ্রামের মানুষ চাঁদাবাজির মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনো হয়নি। এ কারণেই সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কিত তারা।
মুরইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, গত দুই দিনে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ওই গ্রামের বাসিন্দা। তাদের পরিবার আতঙ্কে বাচ্চাদের বিদ্যালয়ের পাঠাচ্ছে না।
স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘থানা পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের (চৌকিদার) মাধ্যমে পাহারা দেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের ভয় না পেতে কথা বলা হচ্ছে; কিন্তু ভয় কাটছে না। অন্য সময়ের তুলনায় কম শিক্ষার্থী উপস্থিত হচ্ছে।’
কাহালু থানা পুলিশ জানায়, চার পাড়ার বাড়ি বাড়ি সাঁটানো পোস্টারগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, আর্থিক অবস্থা বুঝে বাড়ি বাড়ি পোস্টার লাগানো হয়েছে। যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো তাদের বাড়িতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা, আবার যাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ তাদের বাড়িতে ২০০ থেকে দুই হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে গ্রামের লোকই পোস্টারিংয়ের সাথে জড়িত, যারা গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থাটি জানে।
কাহালু থানার ওসি বলেন, ‘যেহেতু আগামী ৬ অক্টোবর রাতে টাকা দিতে বলা হয়েছে। এ কারণে ৬ তারিখ পর্যন্ত দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা গ্রামে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এর পরও নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে পুলিশ সেই ব্যবস্থা নেবে।’
বিষ্ণুপুর গ্রামের মিস্ত্রিপাড়া, মাজাগাড়িপাড়া, মোন্নাপাড়া ও দপ্তরীপাড়ায় গত শনিবার রাতে দুই শতাধিক বাড়ির দেয়াল, দরজা ও জানালার পাল্লায় ছোট আকারের পোস্টার সাঁটানো হয়। কম্পিউটার কম্পোজ করা পোস্টারে ৬ তারিখ রাতে গ্রামের পুকুরপাড়ে লাইট পোস্টে রাখা বাক্সে পোস্টারে উল্লেখ করা চাঁদার টাকা দিতে বলা হয়। টাকা না দিলে পরদিন থেকে গ্রামের ছেলে-মেয়ে (শিশু) হারিয়ে যেতে পারে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।