নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় প্রায় আড়াই লাখ লোকের বসবাস। এখানকার স্থানীয় মানুষের মধ্যে আওয়ামী প্রীতি সেই পুরোনো থেকেই। সেই প্রীতি থেকে মানুষের জীবনমান উন্নত ও আধুনিকতার ছোঁয়া দিতে ২০০০ সালে শ্রীপুর ইউনিয়নকে পৌরসভায় রুপান্তরিত করে সরকার।
দুঃখের বিষয় শিল্পের ছোঁয়ায় জীবনমান উন্নত হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি পৌরসভার ওয়ার্ডগুলোতে।
পৌরসভা গঠনের ২০ বছর অতিক্রম হলেও এখনও নিশ্চিত হয়নি নাগরিক সুবিধা। ভাঙাচোরা সড়ক ও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ কয়েক লাখ পৌরবাসীর নিয়তিতে পরিণত হয়েছে।
বছরের পর বছর বন্দি হয়ে থাকলেও তা দেখার যেন কেউ নেই। আর দীর্ঘসময় এর কোনো সুরাহা না পাওয়ায় অনেকে এটাকে ভাগ্যের লিখন হিসেবেই ধরে নিয়েছেন।
পৌর কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে, প্রায় ৪৭ বর্গ কিলোমিটার পৌরসভায় রয়েছে ১৭৮ কিলোমিটার সড়ক। যার মধ্যে কাঁচা সড়ক এখনও ৫৫ কিলোমিটার, ইটের সলিং আছে ৯৪ কিলোমিটার, কার্পেটিং ২৩ কিলোমিটার ও আরসিসি সড়ক ৬ কিলোমিটার।
২০০০ সালে ‘গ’ শ্রেণির মাধ্যমে এ পৌরসভা গঠিত হলে ধাপে ধাপে তা ‘ক’ শ্রেণি অর্থাৎ প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়েছে। বর্তমানে এ পৌরসভার নিজস্ব আয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পৌরসভা গঠনের প্রায় ২০ বছর অতিক্রম হলেও এখনও উন্নয়নের মাস্টার প্ল্যানই তৈরি হয়নি।
পৌরসভার সড়কগুলোতে নিম্নমানের কাজের ফলে ও শিল্প-কারখানার ভারী যানবাহন চলার কারণে অধিকাংশই এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষায় জলাবদ্ধতার দুর্ভোগও পোহাতে হয়।
জনদুর্ভোগের সড়কগুলো হচ্ছে ৭নং ওয়ার্ডের চন্নাপাড়া এলাকার ২নং সিএন্ডবি বাজার-কেওয়া সড়ক, কেওয়া-টেপিরবাড়ী অভিমুখী সড়ক, মাওনা প্রশিকার মোড়-মসজিদ মোড় সড়ক, বর্ণমালা মোড় থেকে এবাদুল্লাহ মোড় সড়ক, মাওনা চৌরাস্তা-দারগারচালা সড়ক, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী থেকে লিচুবাগান সড়ক, মাস্টারবাড়ী থেকে বেতজুড়ি সড়ক, আসপাডা এলাকার ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয়মুখী সংযোগ সড়ক, হ্যামস মোড়-আনসার রোড সড়কগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় অবস্থা খুবই শোচনীয়।
এসব সড়কের কারণে স্থানীয় এলাকাবাসী ও শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা যেমন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তেমনি উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতাও তৈরি করছে।
স্থানীয় সমাজকর্মী জামাল উদ্দিন জানান, মাওনা চৌরাস্তার বর্ণমালা সড়কটি কয়েক বছর ধরেই চলাচলের অযোগ্য ছিল। এ সড়কটির দুর্ভোগের বিষয় বিবেচনা করে স্থানীয়রা মানববন্ধন করেছিল। পরে সড়কটির সংস্কার কাজের উদ্ভোধন করেন শ্রীপুর পৌর মেয়র আনিছুর রহমান।কিছু অংশ ঢালাই কাজ সম্পন্ন করার পর তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। আমরা বিভিন্নভাবে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেও সড়কের উন্নয়নের বিষয়ে এখন পর্যন্ত সমাধান পাইনি। পরে এ বর্ষায় চলাচলের জন্য স্থানীয়রা নিজেদের টাকা দিয়ে ভাঙা ইট ফেলে সড়ক সংস্কার করে সম্প্রতি চলাচলের যোগ্য করে তোলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, অজানা কারণে নিজস্ব আয় থাকা সত্ত্বেও পৌরবাসীর নাগরিক সুবিধা বাড়েনি। শুধু করের বোঝা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে। আমরা ভুলে গেছি শেষ কত বছর আগে সড়কগুলোর কাজ হয়েছিল। যেহেতু অনেক অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি তাই ভাঙা সড়ক ও জলাবদ্ধতা আমরা ভাগ্যের লিখন হিসেবেই নিয়েছি।
চন্নাপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, ২নং সিএন্ডবি বাজারের সড়কের দুর্ভোগ কয়েক বছরের। এ সড়ক ধরে চলাচল করা যায় না। নিত্য প্রয়োজনে অন্য পথ ধরে কয়েক কিলোমিটার সড়ক ঘুরে আমাদের চলাচল করতে হয়। বছরের পর বছর জনপ্রতিনিধিরা আশ্বাস দিয়ে গেলেও তারা সড়কের উন্নয়ন করেনি। কয়েকমাস পরেই নির্বাচন, এবার দেখতে চাই, তারা কি প্রতিশ্রুতি দেন।
মসজিদ মোড় এলাকার হুমায়ুন কবির জানান, প্রায় ৫/৬ বছর যাবৎ প্রশিকা মোড় থেকে মসজিদ সড়কটির অবস্থা বেহাল। কয়েকবার বাজেট প্রণয়ন করে কাজ শুরু করলেও অদৃশ্য কারণে ঠিকাদার তা সম্পন্ন করতে পারেনি। অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখায় সড়কে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ওই সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষের। এবারের বর্ষায় ভাঙাচোরা ও বড় বড় খানাখন্দ ভরা ওই রাস্তায় স্থানীয়রা টাকা তুলে তাতে ভাঙা টাইলস্ ও ইট ফেলে কোনোমতে চলাচলের উপযোগী করে তুলেছে। এতে দুর্ভোগ কমলেও পৌর কর্তৃপক্ষের নজরে এখনও আসেনি।
প্রতিদিনই মাওনা চৌরাস্তা দরগারচালা সড়ক দিয়ে চলাচল করেন ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি জানান, ৩/৪ বছর যাাবৎ সড়কটি ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেলেও দুর্ভোগ লাঘবে কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি। ফলে এ ভাঙা সড়কটি দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
শ্রীপুর মিজানুর রহমান মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ইকবাল জানান, শ্রীপুর পৌরসভার প্রতিটি এলাকার সড়কের খুবই বেহাল দশা। এসব বেহাল সড়ক ধরে যাতায়াত করতে খুবই কষ্ট করতে হয়। বিশেষ করে বর্ষায় ভোগান্তি বাড়ে। তার মতে এ পৌরসভায় এখন মাস্টার প্ল্যান করা খুবই প্রয়োজন। পরিকল্পনা করে উন্নয়ন করতে হবে। যা ইচ্ছে তাই কাজ করলে এর সুফল পৌরবাসীরা পাবে না।
এ বিষয়ে শ্রীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তবিবুর রহমান জানান, পৌর এলাকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এখনও বেহাল। এসব বেহাল সড়ক সংস্কারের তালিকা করা হয়েছে। বরাদ্ধ প্রাপ্তি সাপেক্ষে কাজ করা হবে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান বলেন, করোনাক্রান্তিকাল কেটে গেলে ভাঙাচোরা সড়কের তালিকা প্রণয়ন করে গুরুত্ব বিবেচনায় সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।