জুমবাংলা ডেস্ক: নীল বিদ্রোহ এক অবিষ্মরণীয় ঘটনা। যে ঘটনার জের ধরে ব্রিটিশ সরকার নীলচাষকে আইনের আওতায় আনতে বাধ্য হয়েছিল। সে নীল বিদ্রোহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের নেতৃত্বে দিয়েছিলেন প্রজাবাৎসল ও অসম সাহসী নারী প্যারীসুন্দরী দেবী।
ভারতীয় উপমহাদেশের অসংখ্য রত্নকে আমরা মনে রাখি তাদের অবদান ও তাদের আত্ম্যোগের জন্য। কিন্তু ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় এইসব স্মরণীয় মানুষের ভিড়ে নারীর সংখ্যা খুব কম। বাস্তবতা হচ্ছে প্যারীসুন্দরী দেবী তাদের মধ্যে অনন্য একজন।
প্যারীসুন্দরী দেবী অবিভক্ত নদিয়া জেলার নীল বিদ্রোহের নেত্রী। ইনি কুখ্যাত নীলকর কেনীর বিরুদ্ধে বৃহৎ কৃষক সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। প্যারীসুন্দরী দেবী ছিলেন নিঃসন্তান বিধবা। তার বিবাহ হয় কৃষ্ণনাথ সিংহের সঙ্গে। অল্প বয়েসেই বিধবা হন। তার পিতা রামানন্দ সিংহ ছিলেন কুমারখালি ইংরেজ রেশম কুঠির নায়েব। পরে মুর্শিদাবাদ নবাবের কাছে কাজ করার সময় মীরপুর এলাকায় জমিদারীর পত্তন করেন।
কুষ্টিয়া জেলার মীরপুর থানার সদরপুরে ছিল তাদের আদি বসতি। তার কনিষ্ঠা কন্যা প্যারীসুন্দরী পিতার জমিদারির অর্ধাংশ লাভ করেন। ছোটবেলা থেকে মেধাবী ও পিতার বিষয়সম্পত্তি দেখাশোনায় পটু ছিলেন। টমাস আইভান কেনী নামক নীলকর সাহেবের ক্রমাগত অত্যাচারে প্যারীসুন্দরীর প্রজারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। কুষ্ঠিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কেনীর দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়।
সে জোরপূর্বক নীল চাষ করাতে থাকলে প্রজারা প্যারীসুন্দরীর কাছে প্রতিকারের আর্জি জানায়। কিন্তু প্যারীসুন্দরীর লাঠিয়ালদের পরাজিত করে কেনী তার ভাড়লকুঠি লুঠ করে ও অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি করে। মীর মশাররফ হোসেন তার ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’ বইতে কেনীর অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরেছেন
কেনীকে সমুচিত জবাব দিতে প্রজা চাষী মজুর, হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে একজোট করেন তিনি। তার ভরসায় বিপুল জনতা কেনীর শালঘর মধুয়ার কুঠি আক্রমণ করে এবং কেনী পালিয়ে বেঁচে যায়। কেনী প্যারীসুন্দরীর বিরুদ্ধে মামলা করলে তিনি সগর্বে বলেন আমার লাঠিয়াল কুঠি লুঠ করেছে জেনে আমার সুখবোধ হচ্ছে, বাঙারির মেয়ে সাহেবের কুঠি লুঠ করেছি এর চেয়ে বেশি সুখের আর কি আছে’ এই ঘটনায় অপমানিত কেনী ঘোষণা করেন প্যারীসুন্দরীকে জ্যান্ত ধরে আনলে একহাজার টাকা পুরস্কার দেবে ও এই মহিলাকে সে কুঠিতে মেম সাজিয়ে রাখবে। এতে বিন্দুমাত্র না দমে সাহসী প্যারীসুন্দরী পাল্টা ঘোষণা করেন কেনীর মাথা যে এনে তার সামনে রাখবে, তাকে তিনি দেবেন একহাজার টাকার তোড়া। কৃষক জনতা ও প্যারীসুন্দরীর লাঠিয়াল আবার কেনীর কুঠি আক্রমণ করে ধুলিস্বাত করে। কেনী পালিয়ে বাঁচলেও দারোগা মহম্মদ বক্স খুন হয় প্রজাদের হাতে।
এবার প্যারীসুন্দরীর বিরুদ্ধে সরকারি মামলা শুরু হয়। বিচারের প্রহসনান্তে ইংরেজ সরকার তার সমুদয় সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে। প্যারীসুন্দরী এর বিরুদ্ধে অ্যাপিল করেন ও বহু টাকা ব্যয় করে জমিদারি ফেরত পান যদিও ঋণভারে জর্জরিত হয়ে তাকে জমিদারীর বিরাট অংশ পত্তনীবন্দোবস্ত করে দিতে হয়। পরে তার দত্তক পুত্র তারিনীচরন সিংহকে দান করে দেন।
এই নির্ভীক নারী ক্ষমতাবান নীলকর সাহেবের বিরুদ্ধে যে বিরাট অসম যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন তা ভারতের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। ড. আবুল আহসান চৌধুরী লিখেছেন ‘প্যারীসুন্দরী প্রজাদরদী, স্বদেশপ্রান ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত এক অসামান্য জননেত্রী’।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।